গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে গত বছরের জুলাই-আগস্টে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গুলি করে হত্যাসহ সহিংসতায় সহস্রাধিক মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) প্রসিকিউশনের কাছে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগে প্রতিবেদন দাখিল করেছে তদন্ত সংস্থা। তবে এসব ঘটনায় যেসব অপরাধ হয়েছে, সেগুলো গণহত্যার সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে না বলে জানিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম।
সোমবার (১২ মে) ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান তিনি।
জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ এনেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। তিনি ‘মাস্টারমাইন্ড, হুকুমদাতা ও সুপিরিয়র কমান্ডার’ হিসেবে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন করেছেন বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এই প্রথম কোনো মামলায় তদন্ত শেষ হলো।
তাজুল ইসলাম জানান, তদন্ত প্রতিবেদনে আসা তথ্য ও অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত করার পর আনুষ্ঠানিকভাবে তা দাখিল করা হবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। এর পরে শুরু হবে আনুষ্ঠানিক বিচার কার্যক্রম।
সর্বোচ্চ দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা হবে বলে জানিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর।
জুলাই-অগাস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গণহত্যার কোনো অভিযোগ আনা হয়নি বলে জানিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম।
দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার করা হবে কি না—এমন প্রশ্নে তাজুল জানান, ভবিষ্যতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, গত রাতেই মাত্র সংশোধনী এ আইনে এসেছে। এখন প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী তদন্ত সংস্থা মনে করলে দলটি মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে কি না, সে বিষয়ে তদন্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আইন অনুযায়ী তদন্তের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
২০১০ সালের ২৫ মার্চ শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালীন মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করতেই ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছিল।
পরবর্তীতে ২০২৪ সালে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর আইনে সংশোধনী আনা হয়। এখন এই ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাসহ তাঁর মন্ত্রিপরিষদ, সেই সময়কার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বিচার করা হচ্ছে।
জুলাইয়ে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ‘উস্কানিদাতা’ হিসেবে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এক নম্বর অভিযোগ আনা হয়েছে।
তাজুল ইসলাম বলেন, তিনি (শেখ হাসিনা) এই মানবতাবিরোধী অপরাধের উসকানি ও প্ররোচনা দিয়েছিলেন। ১৪ জুলাই শেখ হাসিনা এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের রাজাকারের বাচ্চা, রাজাকারের নাতি-পুতি, রাজাকার—এসব বলেছিলেন।
তাজুল আরও বলেন, পাশাপাশি আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ—এসব সংগঠন সহযোগী বাহিনী, অর্থাৎ অক্সিলারি ফোর্স হিসেবে রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোর পাশাপাশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, তাদের হত্যা করে, আহত করে এবং অন্যান্য মানবতাবিরোধী অপরাধ করে।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্ররোচনা, উসকানি দেওয়া, ষড়যন্ত্র ও সম্পৃক্ততার অভিযোগ আনা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।