ময়মনসিংহ , বুধবার, ০৮ জানুয়ারী ২০২৫, ২৪ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :
প্রতিটি জেলা- উপজেলায় একজন করে ভিডিও প্রতিনিধি আবশ্যক। যোগাযোগঃ- Email- matiomanuss@gmail.com. Mobile No- 017-11684104, 013-03300539.

তথ্য মুছে ভ্যাট ফাঁকি প্রিমিয়ার সিমেন্টের

বিক্রয় তথ্য গোপন করে সরকারের প্রায় ১০ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে সিমেন্ট খাতের কোম্পানি প্রিমিয়ার সিমেন্ট মিলস লিমিটেড। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ) ভ্যাটের একটি পরিদর্শক দলের তদন্তে এমন চিত্র উঠে এসেছে। কোম্পানি ভ্যাট সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য কম্পিউটার থেকে মুছে দেওয়ারও প্রমাণ পেয়েছে এলটিইউ ভ্যাটের আট সদস্যের পরিদর্শক দল। এনবিআর সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

সূত্র জানায়, প্রিমিয়ার সিমেন্ট মিলস নানা কৌশলে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আসছিল। বিষয়টি আমলে নিয়ে এনবিআরের এলটিইউ ভ্যাটের কর্মকর্তারা পরিদর্শনে যান। পরিদর্শনে ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার নানা অপকৌশলের প্রমাণ পেয়েছেন তারা। প্রিমিয়ার সিমেন্ট পরিদর্শনের সময় প্রতিষ্ঠানটির হিসাব শাখার কর্মকর্তারা ভ্যাটের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে অন্যত্র সরে যান। একই সঙ্গে কোম্পানির ভ্যাট সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য কম্পিউটার থেকে মুছে দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটির কম্পিউটারে রিসেন্ট ফাইল বলতে কিছুই পাননি। এ কারণে কোম্পানির বেশকিছু নথিপত্র জব্দ করেন ভ্যাট কর্মকর্তারা। এতে মিথ্যা তথ্য দেওয়া থেকে শুরু করে বিক্রয় তথ্য গোপনের প্রমাণ মেলে।

জানতে চাইলে প্রিমিয়ার সিমেন্ট মিলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আমিনুল হক ভ্যাট ফাঁকির বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি কালবেলাকে বলেন, রাজস্ব ফাঁকির বিষয়টি ভিত্তিহীন। বিষয়টি বিচারাধীন থাকায় এ নিয়ে আর কিছু বলতে রাজি হননি তিনি।

সূত্র আরও জানায়, প্রিমিয়ার সিমেন্ট মিলস লিমিটেড সরেজমিন পরিদর্শনে ভ্যাট কর্মকর্তারা ১০০টি স্ক্যান সিমেন্ট রোল এবং ৫০টি রুবি নামে সেমি ফিনিশড সিমেন্ট রোল পেয়েছেন, যা দিয়ে প্রায় ১ হাজার ব্যাগ সিমেন্ট উৎপাদন করা যায়। প্রতিষ্ঠানের মূসক-৪.৩ চালানে যে পরিমাণ ইয়ার্ন গ্রেড ব্যবহার করা হয়েছে, তা বাদ দিয়ে হিসাব করা হয়েছে। এতে কৌশলে ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া প্রিমিয়ার সিমেন্টকে মৌখিকভাবে বলার পরও সিস্টেম জেনারটেড কোনো তথ্যই ভ্যাট কর্মকর্তাদের কাছে উপস্থাপন করেনি প্রতিষ্ঠানটি। কোম্পানির তথ্য অনুযায়ী, তাদের ব্যাগ উৎপাদনকারী মেশিনের সংখ্যা ৬টি। তাদের হিসাবেই ওয়ার্ক ইন প্রসেসে পলিপ্রোপাইলিনের সংখ্যা দাঁড়ায় ২ হাজার ৪০০ কেজি। আর কোম্পানির হিসাবে ভ্যাট ফাঁকির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯ কোটি ৩৩ লাখ ২৩ হাজার টাকা।

এর আগে প্রিমিয়ার সিমেন্টের ভ্যাটের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডেপুটি ম্যানেজারের উপস্থিতিতে কম্পিউটার থেকে ভ্যাট সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। একই সঙ্গে কম্পিউটারের ফোল্ডার ডিলিটেরও প্রমাণ পেয়েছে এলটিইউ ভ্যাটের পরিদর্শক দল। আর রিসেন্ট ফাইলেরও কোনো তথ্য পাননি ভ্যাটের কর্মকর্তারা। তবে প্রিমিয়ার ব্যাংকের ভ্যাটের দায়িত্বরত ডেপুটি ম্যানেজার ভ্যাট কর্মকর্তাদের জানান, কম্পিউটারগুলোতে ভিপিএন সফটওয়্যার ইনস্টল করা ছিল। যার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটিতে টালি এবং ইআরপি সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই সফটওয়্যারের পাসওয়ার্ড চাইলেও প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা দিতে অস্বীকৃতি জানান।

এ বিষয়ে এলটিইউ ভ্যাটের এক ঊর্ধতন কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, প্রিমিয়ার সিমেন্টের ভ্যাট ফাঁকির বিষয়টি প্রমাণিত সত্য। আর কোম্পানিকে শোকজ করা থেকে শুরু করে সব ধরনের আইনি প্রক্রিয়া মেনে ভ্যাট দাবি করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে প্রতিষ্ঠানটি বিকল্প-বিরোধে গিয়েছে। তাদের বিষয়টি গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

তথ্য মুছে ভ্যাট ফাঁকি প্রিমিয়ার সিমেন্টের

আপডেট সময় ১১:৩৪:০৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৬ জানুয়ারী ২০২৫

বিক্রয় তথ্য গোপন করে সরকারের প্রায় ১০ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে সিমেন্ট খাতের কোম্পানি প্রিমিয়ার সিমেন্ট মিলস লিমিটেড। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ) ভ্যাটের একটি পরিদর্শক দলের তদন্তে এমন চিত্র উঠে এসেছে। কোম্পানি ভ্যাট সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য কম্পিউটার থেকে মুছে দেওয়ারও প্রমাণ পেয়েছে এলটিইউ ভ্যাটের আট সদস্যের পরিদর্শক দল। এনবিআর সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

সূত্র জানায়, প্রিমিয়ার সিমেন্ট মিলস নানা কৌশলে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আসছিল। বিষয়টি আমলে নিয়ে এনবিআরের এলটিইউ ভ্যাটের কর্মকর্তারা পরিদর্শনে যান। পরিদর্শনে ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার নানা অপকৌশলের প্রমাণ পেয়েছেন তারা। প্রিমিয়ার সিমেন্ট পরিদর্শনের সময় প্রতিষ্ঠানটির হিসাব শাখার কর্মকর্তারা ভ্যাটের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে অন্যত্র সরে যান। একই সঙ্গে কোম্পানির ভ্যাট সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য কম্পিউটার থেকে মুছে দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটির কম্পিউটারে রিসেন্ট ফাইল বলতে কিছুই পাননি। এ কারণে কোম্পানির বেশকিছু নথিপত্র জব্দ করেন ভ্যাট কর্মকর্তারা। এতে মিথ্যা তথ্য দেওয়া থেকে শুরু করে বিক্রয় তথ্য গোপনের প্রমাণ মেলে।

জানতে চাইলে প্রিমিয়ার সিমেন্ট মিলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আমিনুল হক ভ্যাট ফাঁকির বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি কালবেলাকে বলেন, রাজস্ব ফাঁকির বিষয়টি ভিত্তিহীন। বিষয়টি বিচারাধীন থাকায় এ নিয়ে আর কিছু বলতে রাজি হননি তিনি।

সূত্র আরও জানায়, প্রিমিয়ার সিমেন্ট মিলস লিমিটেড সরেজমিন পরিদর্শনে ভ্যাট কর্মকর্তারা ১০০টি স্ক্যান সিমেন্ট রোল এবং ৫০টি রুবি নামে সেমি ফিনিশড সিমেন্ট রোল পেয়েছেন, যা দিয়ে প্রায় ১ হাজার ব্যাগ সিমেন্ট উৎপাদন করা যায়। প্রতিষ্ঠানের মূসক-৪.৩ চালানে যে পরিমাণ ইয়ার্ন গ্রেড ব্যবহার করা হয়েছে, তা বাদ দিয়ে হিসাব করা হয়েছে। এতে কৌশলে ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া প্রিমিয়ার সিমেন্টকে মৌখিকভাবে বলার পরও সিস্টেম জেনারটেড কোনো তথ্যই ভ্যাট কর্মকর্তাদের কাছে উপস্থাপন করেনি প্রতিষ্ঠানটি। কোম্পানির তথ্য অনুযায়ী, তাদের ব্যাগ উৎপাদনকারী মেশিনের সংখ্যা ৬টি। তাদের হিসাবেই ওয়ার্ক ইন প্রসেসে পলিপ্রোপাইলিনের সংখ্যা দাঁড়ায় ২ হাজার ৪০০ কেজি। আর কোম্পানির হিসাবে ভ্যাট ফাঁকির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯ কোটি ৩৩ লাখ ২৩ হাজার টাকা।

এর আগে প্রিমিয়ার সিমেন্টের ভ্যাটের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডেপুটি ম্যানেজারের উপস্থিতিতে কম্পিউটার থেকে ভ্যাট সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। একই সঙ্গে কম্পিউটারের ফোল্ডার ডিলিটেরও প্রমাণ পেয়েছে এলটিইউ ভ্যাটের পরিদর্শক দল। আর রিসেন্ট ফাইলেরও কোনো তথ্য পাননি ভ্যাটের কর্মকর্তারা। তবে প্রিমিয়ার ব্যাংকের ভ্যাটের দায়িত্বরত ডেপুটি ম্যানেজার ভ্যাট কর্মকর্তাদের জানান, কম্পিউটারগুলোতে ভিপিএন সফটওয়্যার ইনস্টল করা ছিল। যার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটিতে টালি এবং ইআরপি সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই সফটওয়্যারের পাসওয়ার্ড চাইলেও প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা দিতে অস্বীকৃতি জানান।

এ বিষয়ে এলটিইউ ভ্যাটের এক ঊর্ধতন কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, প্রিমিয়ার সিমেন্টের ভ্যাট ফাঁকির বিষয়টি প্রমাণিত সত্য। আর কোম্পানিকে শোকজ করা থেকে শুরু করে সব ধরনের আইনি প্রক্রিয়া মেনে ভ্যাট দাবি করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে প্রতিষ্ঠানটি বিকল্প-বিরোধে গিয়েছে। তাদের বিষয়টি গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।