চলমান এইচএসসি পরীক্ষার মধ্যে যেসব বিষয়ের পরীক্ষা শেষ হয়েছে, সেগুলোর উত্তরপত্র মূল্যায়নের জন্য তা এরমধ্যেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত পরীক্ষকদের কাছে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু খাতা দেখে সংশ্লিষ্ট পরীক্ষক বোর্ডে নম্বরপত্র পাঠানোর আগেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উত্তরপত্রের ছবি ছড়িয়ে পড়ছে রিলস-টিকটকে।
আবার বিভিন্ন পোস্টে দেখা যাচ্ছে, কিছু পরীক্ষক নিজেরা খাতা না দেখে, শিক্ষার্থীদের দিয়ে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করাচ্ছেন। খাতা মূল্যায়নের পর পরীক্ষার্থী কত নম্বর পেয়েছে তাও প্রকাশ করা হচ্ছে ফেসবুকে। এমনকি এক পোস্টে দেখা গেছে, উত্তরপত্র নিয়ে বসে খাওয়া-দাওয়ার দৃশ্যও।আইন অনুসারে পাবলিক পরীক্ষার উত্তরপত্র গোপনীয় দলিল হলেও এখন তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হরহামেশাই শেয়ার হচ্ছে। রিলস ও টিকটকসহ নানা কন্টেন্ট তৈরি হচ্ছে। এর আগে উত্তরপত্র হারিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
পাবলিক পরীক্ষার আইনে এসব অপরাধে দুই বছর কারাদণ্ডের বিধান থাকলেও বাস্তবে তা প্রয়োগ হয় না। যখন প্রশ্ন ওঠে, উত্তরপত্র মূল্যায়ন এবং গোপনীয়তা লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়, তখন বোর্ড কেবল কয়েকজন পরীক্ষককে উত্তর মূল্যায়ন থেকে অব্যাহতি দেয়ার কথা জানিয়ে দায় এড়ায়।বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষাবোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবীর বলেন, ‘তাদের শাস্তির আওতায় আনা আমাদের কাজ। আমরা অন্য কোনো ব্যবস্থা নিতে পারি না।’
উত্তরপত্রের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা রক্ষায় শিক্ষাবোর্ড কতটা সতর্ক, তা যাচাই করতে ঢাকার মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ঘুরে দেখা যায় যে, চলমান এইচএসসি পরীক্ষার হাজার হাজার উত্তরপত্র বস্তায় ভরা অবস্থায় পড়ে আছে, অথচ সেখানে ন্যূনতম একজন নিরাপত্তা প্রহরীও রাখা হয়নি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না থাকায় পরীক্ষা সংক্রান্ত অপরাধ বাড়ছে, যা বোর্ড কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. আব্দুস সালাম বলেন, এটি নৈতিক অবক্ষয়, যা আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
আইনের কঠোর প্রয়োগের পাশাপাশি মূল্যায়ন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনার পরামর্শও শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের।