ময়মনসিংহ , শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
ছেলের পরকীয়া ঠেকাতে মা ফোন করে বলেন বিমানে বোমা আছে বললেন র‌্যাব মুশতাক বিশ্বাস রাখতে বললেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এখন আর কাউকে ছাড় নয় বললেন উপ প্রেস সচিব সোহাগ হত্যার ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে বললেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মব ভায়োলেন্সের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে বললেন র‍্যাব মহাপরিচালক Fruit Party Two Slot Machine Demo Juego Tragamonedas Cuma-cuma Fruit Party: Ten Dicas E Estratégias Afin De Jogar Em 2025! আপনাদেরকে মানুষ পালানোর সুযোগও দেবে না, বৈষম্যবিরোধীর নেতা বিএনপিকে তারেক রহমানকে নিয়ে অশ্লীল-অশ্রাব্য স্লোগান দেওয়ার পরিণতি ভালো হবে না বললেন গোলাম মাওলা রনি মিটফোর্ডের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচারে সরকার বদ্ধপরিকর বললেন আইন উপদেষ্টা
নোটিশ :
প্রতিটি জেলা- উপজেলায় একজন করে ভিডিও প্রতিনিধি আবশ্যক। যোগাযোগঃ- Email- matiomanuss@gmail.com. Mobile No- 017-11684104, 013-03300539.

ভারত কাদের ঠেলে দিচ্ছে বাংলাদেশের সীমান্তে, কেন দিচ্ছে?

বাংলাদেশে পুশ-ব্যাক করে দেওয়ার বেশ কয়েকটি ঘটনা সামনে এসেছে ভারতে অবৈধভাবে বসবাসকারী বাংলাদেশি সন্দেহে ধরপাকড় শুরু হওয়ার পর থেকে । বাংলাদেশের চোখে সেটাই পুশ-ইন ভারতের দিক থেকে যেটা পুশ-ব্যাক,।

বিবিসি বাংলা এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সীমান্তে পুশ-ব্যাক বা পুশ-ইন আসলে এমন একটা পদ্ধতি যেখানে ধরা পড়া ব্যক্তিদের সীমান্তে নিয়ে গিয়ে অন্য দেশের সীমান্তে ঠেলে দেওয়া হয়ে থাকে। এই প্রক্রিয়ার কোনো আইনি স্বীকৃতি নেই ভারতে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই এই পদ্ধতি চলে আসছে, যেটা আনুষ্ঠানিক ভাবে কেউই স্বীকার করে না।

ভারতের মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, ভারত থেকে এভাবে পুশ-ব্যাক করে দেওয়া সম্পূর্ণই আইন বহির্ভূত কাজ।

তবে অপ্রাপ্তবয়স্ক বা পাচারের শিকার হওয়া নারীদের অনেক ক্ষেত্রে মানবিক দিক বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশে ফিরিয়ে দিয়ে থাকে বিএসএফ। এই পদ্ধতির অবশ্য আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি রয়েছে।

কাদের পুশ-ব্যাক করা হচ্ছে?

শুধুমাত্র ভারতের গুজরাত এবং রাজস্থানেই গত তিন সপ্তাহে এক হাজারেরও বেশি মানুষকে চিহ্নিত করেছে ওই রাজ্যগুলোর পুলিশ। তাদের দাবি, এই চিহ্নিতরা বেআইনিভাবে বাংলাদেশ থেকে এসে বসবাস করছিলেন।

বিবিসি বাংলা নিশ্চিত করতে পেরেছে যে, সম্প্রতি সীমান্ত দিয়ে যাদের পুশ-ব্যাক করা হয়েছে, তাদের মধ্যে এমন ব্যক্তিরাও ছিলেন, যাদের গুজরাত থেকে আনা হয়েছিল।

আবার রাজস্থান থেকে যারা ধরা পড়েছেন, তাদের মধ্যে ১৪৮ জনের প্রথম দলটিকে বিশেষ বিমানে চাপিয়ে বুধবার নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ত্রিপুরার আগরতলায়।

বৃহস্পতিবার রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর সীমান্তে যে পুশ-ব্যাকের চেষ্টা হয়েছিল, তাদের মধ্যে কেউ রাজস্থানে ধরা পড়া কথিত বাংলাদেশি কী না, তা নিশ্চিত করা যায় নি।

গুজরাত ও রাজস্থান – দুই রাজ্যের পুলিশই জানিয়েছে যে, বাংলাদেশের যেসব নাগরিকের পরিচয় তারা নিশ্চিত করতে পেরেছেন, তাদের সকলকেই ফেরত পাঠানো হবে।

ওড়িশাসহ অন্য কয়েকটি রাজ্যেও বাংলাদেশের এমন নাগরিকদের ধরা হচ্ছে, যারা পুলিশের কথায় ‘অনুপ্রবেশকারী’।

‘অবৈধ’ বিদেশীদের জন্য আইনে কী আছে?

আইন অনুযায়ী পুলিশ কাউকে ধরলে তাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করার নিয়ম আছে। এই নিয়ম বিদেশীদের জন্যও সমানভাবে প্রযোজ্য। সীমান্ত হত্যা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে ভারতের মানবাধিকার সংগঠন মাসুম।

সংগঠনটির প্রধান কিরীটী রায় বলছিলেন, বিদেশ থেকে কেউ যদি পাসপোর্ট ভিসা ছাড়া ভারতে আসেন, তাহলে পদ্ধতি হলো তাকে চিহ্নিত করে গ্রেফতার করতে হবে এবং ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করতে হবে। বিদেশী আইনের ১৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী মামলা হবে। মামলায় যদি সেই ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত হয়, তাহলে তার সাজা হবে। সাজার শেষে আদালতের মাধ্যমেই যেই ব্যক্তি যে দেশ থেকে এসেছেন, সেখানে ফেরত পাঠানো হবে।

তিনি বলছিলেন, ভারতের সংবিধান অনুযায়ী ভারতীয়রা যে অধিকার পান, সেই একই অধিকার ভারতের মাটিতে থাকাকালীন বিদেশী নাগরিকরাও পাবেন। গুজরাত, রাজস্থান বা উত্তরপ্রদেশেরও কিছু জায়গা থেকে খবর পাচ্ছি যে এই পদ্ধতি না মেনে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। যা হচ্ছে এখন, তাতে তো আইন, সংবিধান– কিছুই তো মানা হচ্ছে না।

সাজা শেষ হওয়ার পরে নিজদেশে বিদেশীদের ফেরত পাঠানো অবশ্য সময়সাপেক্ষ বিষয়। এমন বহু ঘটনা রয়েছে, যেখানে বাংলাদেশিসহ বিদেশীরা অবৈধ পথে ভারতে আসার অপরাধে ধরা পড়ে জেল খেটেছেন। কিন্তু সাজা শেষ হওয়ার অনেক মাস পরেও দেশে ফেরত যেতে পারেন নি। জটিল এক কূটনৈতিক পদ্ধতিতে ওই ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত করা হয়, তারপরেই তাকে দেশে পাঠানো হয়। এ ধরনের বন্দীদের জেলের কথায় ‘জান খালাস কয়েদী’ বলা হয়ে থাকে।

আইন বহির্ভূত পদ্ধতি

গুজরাত ও রাজস্থানে যাদের ‘বাংলাদেশি’ বলে ধরা হয়েছে, তাদের কাউকেই প্রায় আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আটক করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করছেন সামাজিক কর্মকর্তারা।

গুজরাত ও রাজস্থানে পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকদের সহায়তার জন্য একটি সংগঠন যে, হেল্প-লাইন নম্বর চালু করেছে, সেখানে যত ফোন এসেছে, তাদের মধ্যে মাত্র একজনের খবর পাওয়া গেছে, যাকে রাজস্থানের আদালতে তোলা হয়েছিল।

পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চ নামের ওই সংগঠনটির রাজ্য সম্পাদক আসিফ ফারুক বলছিলেন, প্রায় একমাস হতে চলল আমরা হেল্প-লাইন চালু করেছি। গুজরাত থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচশো আর রাজস্থান থেকে প্রায় দুশো ফোন পেয়েছি। ফোন পাওয়ার পরে আমরা সেখানকার স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে পশ্চিমবঙ্গের মানুষদের ছাড়িয়ে আনার ব্যবস্থা করছি। এতদিনে গুজরাতের ৬৮টি ঘটনা আর রাজস্থানের ১০৯টি অভিযোগের সমাধান করতে পেরেছি। মাত্র একটি ঘটনায় আমরা জানতে পেরেছি যে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার বাসিন্দা এক ধৃত ব্যক্তিকে আদালতে তোলা হয়েছিল এবং তিনি এখন ডিটেনশন ক্যাম্পে আছেন।

তার কথায়, ওই ব্যক্তি ছাড়া আর কাউকে আদালতে তোলা হয়েছিল বলে আমরা জানি না।

আবার গুজরাত পুলিশের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন, আটক করার পরে সরাসরি জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলে পাঠানো হচ্ছে। বাংলাদেশি বলে প্রমাণিত হলে তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করা হচ্ছে। এর মধ্যে কোথাও আদালতে হাজির করানোর কথা তিনি জানান।

আইনি পথে ফেরত নয় কেন?

গুজরাত, রাজস্থানের পুলিশ বা ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ এই প্রসঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে মুখ খুলতে চায় নি। বিএসএফ সবসময়েই বলে থাকে যে তাদের ডিকশনারিতে ‘পুশ-ব্যাক’ শব্দটাই নেই। কিন্তু নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর কয়েকটি সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, সম্প্রতি অবৈধ বাংলাদেশি বলে যাদের চিহ্নিত করা হয়েছে, তাদের ছোট-বড় দলে ভাগ করে ‘পুশ-ব্যাক’ই করা হচ্ছে।

ওই সূত্রগুলো বিবিসিকে জানিয়েছে, গ্রেফতার দেখানো হলে ধৃতদের বিরুদ্ধে মামলা চলবে, তারপর সাজা হলে জেলে রাখতে হবে। তারও পরে দীর্ঘ কূটনৈতিক জটিলতা কাটিয়ে তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে হবে। এই গোটা পদ্ধতি অতি সময় সাপেক্ষ। কয়েক বছর লেগে যায় এতে। কিন্তু এখন শয়ে শয়ে অবৈধ বাংলাদেশি ধরা পড়ছে কয়েকটি রাজ্যে। এদের যদি গ্রেফতার করতে হয়, তাহলে তো জেল থেকে অন্য বন্দীদের বার করে দিতে হবে। তাতেও জায়গায় কুলোবে না।

তিনি বলছিলেন, এই যে পুশ-ব্যাকের কথা বলা হচ্ছে, এতে সমস্যাটা কোথায়! বাংলাদেশের নাগরিকদেরই তো তাদের দেশে ফেরত দেওয়া হচ্ছে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে কেউই পুশ-ব্যাকের কথা স্বীকার করেন নি এখনও পর্যন্ত।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

ছেলের পরকীয়া ঠেকাতে মা ফোন করে বলেন বিমানে বোমা আছে বললেন র‌্যাব

ভারত কাদের ঠেলে দিচ্ছে বাংলাদেশের সীমান্তে, কেন দিচ্ছে?

আপডেট সময় ১১:৩৪:০৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫

বাংলাদেশে পুশ-ব্যাক করে দেওয়ার বেশ কয়েকটি ঘটনা সামনে এসেছে ভারতে অবৈধভাবে বসবাসকারী বাংলাদেশি সন্দেহে ধরপাকড় শুরু হওয়ার পর থেকে । বাংলাদেশের চোখে সেটাই পুশ-ইন ভারতের দিক থেকে যেটা পুশ-ব্যাক,।

বিবিসি বাংলা এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সীমান্তে পুশ-ব্যাক বা পুশ-ইন আসলে এমন একটা পদ্ধতি যেখানে ধরা পড়া ব্যক্তিদের সীমান্তে নিয়ে গিয়ে অন্য দেশের সীমান্তে ঠেলে দেওয়া হয়ে থাকে। এই প্রক্রিয়ার কোনো আইনি স্বীকৃতি নেই ভারতে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই এই পদ্ধতি চলে আসছে, যেটা আনুষ্ঠানিক ভাবে কেউই স্বীকার করে না।

ভারতের মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, ভারত থেকে এভাবে পুশ-ব্যাক করে দেওয়া সম্পূর্ণই আইন বহির্ভূত কাজ।

তবে অপ্রাপ্তবয়স্ক বা পাচারের শিকার হওয়া নারীদের অনেক ক্ষেত্রে মানবিক দিক বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশে ফিরিয়ে দিয়ে থাকে বিএসএফ। এই পদ্ধতির অবশ্য আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি রয়েছে।

কাদের পুশ-ব্যাক করা হচ্ছে?

শুধুমাত্র ভারতের গুজরাত এবং রাজস্থানেই গত তিন সপ্তাহে এক হাজারেরও বেশি মানুষকে চিহ্নিত করেছে ওই রাজ্যগুলোর পুলিশ। তাদের দাবি, এই চিহ্নিতরা বেআইনিভাবে বাংলাদেশ থেকে এসে বসবাস করছিলেন।

বিবিসি বাংলা নিশ্চিত করতে পেরেছে যে, সম্প্রতি সীমান্ত দিয়ে যাদের পুশ-ব্যাক করা হয়েছে, তাদের মধ্যে এমন ব্যক্তিরাও ছিলেন, যাদের গুজরাত থেকে আনা হয়েছিল।

আবার রাজস্থান থেকে যারা ধরা পড়েছেন, তাদের মধ্যে ১৪৮ জনের প্রথম দলটিকে বিশেষ বিমানে চাপিয়ে বুধবার নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ত্রিপুরার আগরতলায়।

বৃহস্পতিবার রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর সীমান্তে যে পুশ-ব্যাকের চেষ্টা হয়েছিল, তাদের মধ্যে কেউ রাজস্থানে ধরা পড়া কথিত বাংলাদেশি কী না, তা নিশ্চিত করা যায় নি।

গুজরাত ও রাজস্থান – দুই রাজ্যের পুলিশই জানিয়েছে যে, বাংলাদেশের যেসব নাগরিকের পরিচয় তারা নিশ্চিত করতে পেরেছেন, তাদের সকলকেই ফেরত পাঠানো হবে।

ওড়িশাসহ অন্য কয়েকটি রাজ্যেও বাংলাদেশের এমন নাগরিকদের ধরা হচ্ছে, যারা পুলিশের কথায় ‘অনুপ্রবেশকারী’।

‘অবৈধ’ বিদেশীদের জন্য আইনে কী আছে?

আইন অনুযায়ী পুলিশ কাউকে ধরলে তাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করার নিয়ম আছে। এই নিয়ম বিদেশীদের জন্যও সমানভাবে প্রযোজ্য। সীমান্ত হত্যা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে ভারতের মানবাধিকার সংগঠন মাসুম।

সংগঠনটির প্রধান কিরীটী রায় বলছিলেন, বিদেশ থেকে কেউ যদি পাসপোর্ট ভিসা ছাড়া ভারতে আসেন, তাহলে পদ্ধতি হলো তাকে চিহ্নিত করে গ্রেফতার করতে হবে এবং ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করতে হবে। বিদেশী আইনের ১৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী মামলা হবে। মামলায় যদি সেই ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত হয়, তাহলে তার সাজা হবে। সাজার শেষে আদালতের মাধ্যমেই যেই ব্যক্তি যে দেশ থেকে এসেছেন, সেখানে ফেরত পাঠানো হবে।

তিনি বলছিলেন, ভারতের সংবিধান অনুযায়ী ভারতীয়রা যে অধিকার পান, সেই একই অধিকার ভারতের মাটিতে থাকাকালীন বিদেশী নাগরিকরাও পাবেন। গুজরাত, রাজস্থান বা উত্তরপ্রদেশেরও কিছু জায়গা থেকে খবর পাচ্ছি যে এই পদ্ধতি না মেনে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। যা হচ্ছে এখন, তাতে তো আইন, সংবিধান– কিছুই তো মানা হচ্ছে না।

সাজা শেষ হওয়ার পরে নিজদেশে বিদেশীদের ফেরত পাঠানো অবশ্য সময়সাপেক্ষ বিষয়। এমন বহু ঘটনা রয়েছে, যেখানে বাংলাদেশিসহ বিদেশীরা অবৈধ পথে ভারতে আসার অপরাধে ধরা পড়ে জেল খেটেছেন। কিন্তু সাজা শেষ হওয়ার অনেক মাস পরেও দেশে ফেরত যেতে পারেন নি। জটিল এক কূটনৈতিক পদ্ধতিতে ওই ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত করা হয়, তারপরেই তাকে দেশে পাঠানো হয়। এ ধরনের বন্দীদের জেলের কথায় ‘জান খালাস কয়েদী’ বলা হয়ে থাকে।

আইন বহির্ভূত পদ্ধতি

গুজরাত ও রাজস্থানে যাদের ‘বাংলাদেশি’ বলে ধরা হয়েছে, তাদের কাউকেই প্রায় আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আটক করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করছেন সামাজিক কর্মকর্তারা।

গুজরাত ও রাজস্থানে পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকদের সহায়তার জন্য একটি সংগঠন যে, হেল্প-লাইন নম্বর চালু করেছে, সেখানে যত ফোন এসেছে, তাদের মধ্যে মাত্র একজনের খবর পাওয়া গেছে, যাকে রাজস্থানের আদালতে তোলা হয়েছিল।

পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চ নামের ওই সংগঠনটির রাজ্য সম্পাদক আসিফ ফারুক বলছিলেন, প্রায় একমাস হতে চলল আমরা হেল্প-লাইন চালু করেছি। গুজরাত থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচশো আর রাজস্থান থেকে প্রায় দুশো ফোন পেয়েছি। ফোন পাওয়ার পরে আমরা সেখানকার স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে পশ্চিমবঙ্গের মানুষদের ছাড়িয়ে আনার ব্যবস্থা করছি। এতদিনে গুজরাতের ৬৮টি ঘটনা আর রাজস্থানের ১০৯টি অভিযোগের সমাধান করতে পেরেছি। মাত্র একটি ঘটনায় আমরা জানতে পেরেছি যে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার বাসিন্দা এক ধৃত ব্যক্তিকে আদালতে তোলা হয়েছিল এবং তিনি এখন ডিটেনশন ক্যাম্পে আছেন।

তার কথায়, ওই ব্যক্তি ছাড়া আর কাউকে আদালতে তোলা হয়েছিল বলে আমরা জানি না।

আবার গুজরাত পুলিশের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন, আটক করার পরে সরাসরি জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলে পাঠানো হচ্ছে। বাংলাদেশি বলে প্রমাণিত হলে তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করা হচ্ছে। এর মধ্যে কোথাও আদালতে হাজির করানোর কথা তিনি জানান।

আইনি পথে ফেরত নয় কেন?

গুজরাত, রাজস্থানের পুলিশ বা ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ এই প্রসঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে মুখ খুলতে চায় নি। বিএসএফ সবসময়েই বলে থাকে যে তাদের ডিকশনারিতে ‘পুশ-ব্যাক’ শব্দটাই নেই। কিন্তু নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর কয়েকটি সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, সম্প্রতি অবৈধ বাংলাদেশি বলে যাদের চিহ্নিত করা হয়েছে, তাদের ছোট-বড় দলে ভাগ করে ‘পুশ-ব্যাক’ই করা হচ্ছে।

ওই সূত্রগুলো বিবিসিকে জানিয়েছে, গ্রেফতার দেখানো হলে ধৃতদের বিরুদ্ধে মামলা চলবে, তারপর সাজা হলে জেলে রাখতে হবে। তারও পরে দীর্ঘ কূটনৈতিক জটিলতা কাটিয়ে তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে হবে। এই গোটা পদ্ধতি অতি সময় সাপেক্ষ। কয়েক বছর লেগে যায় এতে। কিন্তু এখন শয়ে শয়ে অবৈধ বাংলাদেশি ধরা পড়ছে কয়েকটি রাজ্যে। এদের যদি গ্রেফতার করতে হয়, তাহলে তো জেল থেকে অন্য বন্দীদের বার করে দিতে হবে। তাতেও জায়গায় কুলোবে না।

তিনি বলছিলেন, এই যে পুশ-ব্যাকের কথা বলা হচ্ছে, এতে সমস্যাটা কোথায়! বাংলাদেশের নাগরিকদেরই তো তাদের দেশে ফেরত দেওয়া হচ্ছে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে কেউই পুশ-ব্যাকের কথা স্বীকার করেন নি এখনও পর্যন্ত।