ময়মনসিংহ , শুক্রবার, ০১ অগাস্ট ২০২৫, ১৭ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :
প্রতিটি জেলা- উপজেলায় একজন করে ভিডিও প্রতিনিধি আবশ্যক। যোগাযোগঃ- Email- matiomanuss@gmail.com. Mobile No- 017-11684104, 013-03300539.

ভূমিদস্যুর কবলে মসজিদের ৪২ বিঘা সম্পত্তি !

  • অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় ০৩:৩৯:৫৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫
  • ১৮ বার পড়া হয়েছে

প্রায় ৩০০ বছর আগেরকার মুঘল আমলে নির্মিত মিঠাপুকুরের পলিপাড়া মাসিমপুর জামে মসজিদ। তৎকালীন স্থানীয় হাজী তকের মোহাম্মদ মসজিদের নামে ৪২ বিঘা সম্পত্তি দান করেন। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দা মৃত ময়নুল হক সরকারের ছেলে জোয়ারদার হোসেন লিটন ওই সম্পত্তি নিজেদের কবজায় রেখেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

তবে জমিগুলো বেদখল ঠেকাতে আদালতে একটি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তার পরও জোয়ারদার হোসেন পেশি শক্তির বলে সেগুলো বেদখলে রেখেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে মুসল্লিরা সরকারিভাবে মসজিদের সম্পত্তি উদ্ধার ও তদারকি দাবি করেছেন।

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঐতিহ্যবাহী পলিপাড়া মাসিমপুর জামে মসজিদের ৪২ বিঘা সম্পত্তি রয়েছে। এ সম্পত্তির আয় দিয়েই মসজিদের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা হওয়ার কথা।

কিন্তু সম্পত্তি দাতা হাজী তকের মোহাম্মদের চতুর্থ প্রজন্ম জোয়ারদার হোসেন ওরফে লিটন জমিগুলো দখলে নিয়েছেন। সেগুলো তিনি স্থানীয়ভাবে বন্ধক ও ব্যক্তিগতভাবে লিজ প্রদান করে অর্থ আত্মসাৎ করছেন। ওই অর্থ দিয়ে মসজিদের কোনো উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করছেন না। এ কারণে ফুঁসে উঠেছেন স্থানীয় মুসল্লিরা।

স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ ছালেক মিয়া বলেন, মসজিদের জমিগুলো দাতার লোকজন ভোগদখল করে খাচ্ছে। জমি বন্ধক রাখছে, লিজ দিচ্ছে। এমনকি মসজিদের পাশে রাস্তার ধারের জমি বিক্রির পর দোকানঘর নির্মাণ করতে চেয়েছিল, মুসল্লিরা বাধা দিয়েছে। ওই জমিগুলো মসজিদ উন্নয়নে কোনো কাজে লাগছে না।

তিনি বলেন, এ জমিগুলো সরকারিভাবে উদ্ধার করে তদারকি দরকার।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন মুসল্লি বলেন, মসজিদের জমিগুলো জোয়ারদার হোসেন লিটন আত্মসাৎ করছেন। নিজের দখলে রেখে চাষাবাদ করে মসজিদে কোনো আয় দেখাচ্ছেন না। এলাকাবাসী প্রতিবাদ করেও কোনো সুফল আসেনি।

তারা আরও বলেন, দখলকারী জোয়ারদার হোসেন লিটন একজন ভূমিদস্যু ও এলাকার প্রভাবশালী। এ কারণে এলাকার কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না। একই কথা বলেন আরও কয়েকজন মুসল্লি।

এ ছাড়াও, প্রায় ১৫ বছর ধরে মসজিদের মোতাওয়াল্লি আছেন আয়মন রেছা বেগম। তার ভাতিজা জোয়ারদার হোসেন লিটন বর্তমান মোতাওয়াল্লি বলে দাবি করছেন।

আয়মন নেছা বেগম বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে মসজিদের মোতাওয়াল্লি। কৌশলে জোয়ারদার হোসেন লিটন মোতাওয়াল্লি হওয়ার চেষ্টা করছেন। জমিগুলো বেদখল করে খাচ্ছে। সে ভূমিদস্যু ও অসৎ মানুষ।

সরেজমিন পলিপাড়া মাসিমপুর মসজিদ প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা গেছে, নতুন করে বর্ধিত অংশের কাজ চলছে।

এ সময় কয়েকজন মুসল্লি আক্ষেপ করে বলেন, ব্যক্তিগত অর্থায়নে মসজিদ নির্মাণ করে দিচ্ছেন আবু নুর মোহাম্মদ আহসান হামিদ নামে একজন দানশীল ব্যক্তি। তার পরও ওই জোয়ারদার হোসেন লিটনের লোকজন তাকে কাজে বাধা দিচ্ছেন। এ কারণে কাজ থেমে রয়েছে।

অভিযুক্ত জোয়ারদার হোসেন লিটন বলেন, ‘আমি মোতাওয়াল্লি হওয়ার পর জমিগুলো দেখভাল করছি।’

বছরে কত টাকা আয় মসজিদের দেওয়া হয়? আয়গুলো দিয়ে মসজিদের কী কী উন্নয়ন করা হয়েছে?—এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘আপনাকে কেন আয়-ব্যয়ের হিসাব দেব? আমার পূর্বপুরুষ জমি দিয়েছে, আমরা দেখভাল করছি।’

মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান বলেন, ‘তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এ বিষয়ে রংপুর ওয়াকফ এস্টেট কার‌্যালয়ের হিসাব নিরীক্ষক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘হাজী তকের মোহাম্মদ ওয়াকফ এস্টেটের মোতাওয়াল্লি আয়মন নেছা। এ ঘটনায় উচ্চ আদালতে একটি মামলা চলমান। তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

ভূমিদস্যুর কবলে মসজিদের ৪২ বিঘা সম্পত্তি !

আপডেট সময় ০৩:৩৯:৫৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫

প্রায় ৩০০ বছর আগেরকার মুঘল আমলে নির্মিত মিঠাপুকুরের পলিপাড়া মাসিমপুর জামে মসজিদ। তৎকালীন স্থানীয় হাজী তকের মোহাম্মদ মসজিদের নামে ৪২ বিঘা সম্পত্তি দান করেন। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দা মৃত ময়নুল হক সরকারের ছেলে জোয়ারদার হোসেন লিটন ওই সম্পত্তি নিজেদের কবজায় রেখেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

তবে জমিগুলো বেদখল ঠেকাতে আদালতে একটি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তার পরও জোয়ারদার হোসেন পেশি শক্তির বলে সেগুলো বেদখলে রেখেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে মুসল্লিরা সরকারিভাবে মসজিদের সম্পত্তি উদ্ধার ও তদারকি দাবি করেছেন।

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঐতিহ্যবাহী পলিপাড়া মাসিমপুর জামে মসজিদের ৪২ বিঘা সম্পত্তি রয়েছে। এ সম্পত্তির আয় দিয়েই মসজিদের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা হওয়ার কথা।

কিন্তু সম্পত্তি দাতা হাজী তকের মোহাম্মদের চতুর্থ প্রজন্ম জোয়ারদার হোসেন ওরফে লিটন জমিগুলো দখলে নিয়েছেন। সেগুলো তিনি স্থানীয়ভাবে বন্ধক ও ব্যক্তিগতভাবে লিজ প্রদান করে অর্থ আত্মসাৎ করছেন। ওই অর্থ দিয়ে মসজিদের কোনো উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করছেন না। এ কারণে ফুঁসে উঠেছেন স্থানীয় মুসল্লিরা।

স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ ছালেক মিয়া বলেন, মসজিদের জমিগুলো দাতার লোকজন ভোগদখল করে খাচ্ছে। জমি বন্ধক রাখছে, লিজ দিচ্ছে। এমনকি মসজিদের পাশে রাস্তার ধারের জমি বিক্রির পর দোকানঘর নির্মাণ করতে চেয়েছিল, মুসল্লিরা বাধা দিয়েছে। ওই জমিগুলো মসজিদ উন্নয়নে কোনো কাজে লাগছে না।

তিনি বলেন, এ জমিগুলো সরকারিভাবে উদ্ধার করে তদারকি দরকার।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন মুসল্লি বলেন, মসজিদের জমিগুলো জোয়ারদার হোসেন লিটন আত্মসাৎ করছেন। নিজের দখলে রেখে চাষাবাদ করে মসজিদে কোনো আয় দেখাচ্ছেন না। এলাকাবাসী প্রতিবাদ করেও কোনো সুফল আসেনি।

তারা আরও বলেন, দখলকারী জোয়ারদার হোসেন লিটন একজন ভূমিদস্যু ও এলাকার প্রভাবশালী। এ কারণে এলাকার কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না। একই কথা বলেন আরও কয়েকজন মুসল্লি।

এ ছাড়াও, প্রায় ১৫ বছর ধরে মসজিদের মোতাওয়াল্লি আছেন আয়মন রেছা বেগম। তার ভাতিজা জোয়ারদার হোসেন লিটন বর্তমান মোতাওয়াল্লি বলে দাবি করছেন।

আয়মন নেছা বেগম বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে মসজিদের মোতাওয়াল্লি। কৌশলে জোয়ারদার হোসেন লিটন মোতাওয়াল্লি হওয়ার চেষ্টা করছেন। জমিগুলো বেদখল করে খাচ্ছে। সে ভূমিদস্যু ও অসৎ মানুষ।

সরেজমিন পলিপাড়া মাসিমপুর মসজিদ প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা গেছে, নতুন করে বর্ধিত অংশের কাজ চলছে।

এ সময় কয়েকজন মুসল্লি আক্ষেপ করে বলেন, ব্যক্তিগত অর্থায়নে মসজিদ নির্মাণ করে দিচ্ছেন আবু নুর মোহাম্মদ আহসান হামিদ নামে একজন দানশীল ব্যক্তি। তার পরও ওই জোয়ারদার হোসেন লিটনের লোকজন তাকে কাজে বাধা দিচ্ছেন। এ কারণে কাজ থেমে রয়েছে।

অভিযুক্ত জোয়ারদার হোসেন লিটন বলেন, ‘আমি মোতাওয়াল্লি হওয়ার পর জমিগুলো দেখভাল করছি।’

বছরে কত টাকা আয় মসজিদের দেওয়া হয়? আয়গুলো দিয়ে মসজিদের কী কী উন্নয়ন করা হয়েছে?—এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘আপনাকে কেন আয়-ব্যয়ের হিসাব দেব? আমার পূর্বপুরুষ জমি দিয়েছে, আমরা দেখভাল করছি।’

মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান বলেন, ‘তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এ বিষয়ে রংপুর ওয়াকফ এস্টেট কার‌্যালয়ের হিসাব নিরীক্ষক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘হাজী তকের মোহাম্মদ ওয়াকফ এস্টেটের মোতাওয়াল্লি আয়মন নেছা। এ ঘটনায় উচ্চ আদালতে একটি মামলা চলমান। তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’