সারাদেশে উদযাপিত হচ্ছে হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। অষ্টমী পেরিয়ে আজ বুধবার (১ অক্টোবর) আজ শুরু হবে দেবী দুর্গার মহানবমী বিহিত পূজা। এদিন দেবী দুর্গার বিদায়ের সুরে ভারাক্রান্ত হয়ে উঠবে প্রতিটি মণ্ডপের পরিবেশ।
দশমীতে কৈলাশে (স্বামীর বাড়ি) ফিরে যাবেন দেবী দুর্গা। এদিন বিশেষ কোনও পর্ব না থাকলেও সকালে তর্পণে দুর্গার মহাস্নান হবে, ষোড়শ উপচারে পূজা করা হবে।
আজ নবমীর সন্ধ্যায় দেবীদুর্গার ‘মহাআরতি’ করা হয়। মহানবমীতে বলিদান ও নবমী হোমের রীতি রয়েছে। এদিন ১০৮টি নীলপদ্মে পূজা হবে দেবীদুর্গার। পূজা শেষে যথারীতি থাকবে অঞ্জলি নিবেদন ও প্রসাদ বিতরণ।
মহানবরাত্রিতে দেবীদুর্গার আরাধনার অনেক গুরুত্ব রয়েছে। যদিও সারাবছর ধরে যে উৎসবের জন্য অপেক্ষা করা হয়, তার বিদায়ঘণ্টা বাজিয়ে দেয় এই নবমী নিশি। তাই নবমী নিশিকে সবাই ধরে রাখতে আকুতি জানায়। বাজতে থাকে একটাই সুর ‘ওরে নবমী-নিশি, না হইও রে অবসান’।
পুরোহিতদের মতে, মহানবমীতে ভক্তদের দেওয়া ষোড়শ উপাচারের সঙ্গে ১০৮টি নীলপদ্মে পূজা হবে দেবীদুর্গার। এছাড়া আজ নীলকণ্ঠ, নীল অপরাজিতা ফুল ও যজ্ঞের মাধ্যমে মহানবমীর বিহিতপূজা হবে।
জানা যায়, মহানবমীর দিনে যজ্ঞের মাধ্যমে দেবীদুর্গার কাছে আহুতি দেওয়া হবে। ১০৮টি বেল পাতা, আম কাঠ, ঘি দিয়ে এই যজ্ঞ অনুষ্ঠিত হবে। আগামীকাল বিজয়া দশমীতে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দেবীদুর্গাকে বিদায় জানাবেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা।
মহানবমীতে ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে ভক্তদের হৃদয়
মহানবমীতে ভারাক্রান্ত হয়ে উঠে ভক্তদের হৃদয়। মণ্ডপে মণ্ডপে প্রাণের উৎসবে ভক্তদের মাঝে বয়ে ওঠে বিষাদের সুর। কারণ দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে হবে শারদীয় দুর্গাপূজার সমাপনী। এদিন প্রার্থনার সময় ভক্তকুল অশ্রুসিক্ত হয়ে দেবী দুর্গার কাছে কান্না করতে থাকেন।
মহানবমী সম্পর্কে আগারগাঁওের বাসিন্দা সুদীপ চক্রবর্তী বলেন, ‘নবমীর বিশেষত্ব হচ্ছে ১০৮ পদ্মের পূজা। বলা চলে এটাই শেষ পূজা, কারণ বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) বিসর্জন। আবার বছর পেরিয়ে দেবী আসবে আমাদের মাঝে। তাই দেবী দুর্গার বিদায়ের কথা ভেবেই সবার মন ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নবমী পূজার মাধ্যমে মানবকুলে সম্পদ লাভ হয়। তাই শাপলা, শালুক ও বলিদানের মাধ্যমে দশভুজা দেবীর পূজা হয়েছে। নীল অপরাজিতা ফুল মহানবমী পূজার বিশেষ অনুষঙ্গ। নবমী পূজায় যজ্ঞের মাধ্যমে দেবী দুর্গার কাছে আহুতি দেয়া হয়। ১০৮টি বেল পাতা, আম কাঠ ও ঘি দিয়ে এই যজ্ঞ করা হয়।’
বৃহস্পতিবার বিজয়া দশমী, দেবী দুর্গার বিসর্জন
বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) বিজয়া দশমী। প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটবে ৫ দিনের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবের। তাই, মণ্ডপে মণ্ডপে এখন বাজছে বিদায়ের ঘণ্টা। কাল সকালে হবে দশমীর বিহিত পূজা। পূজা শেষে হবে দর্পণ ও বিসর্জন। এদিন দেবী মর্ত্যে ছেড়ে কৈলাসে ফিরে যাবেন দোলায় চড়ে।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, মানুষের মনের অসুরিক প্রবৃত্তি, কাম, ক্রোধ, হিংসা, লালসা বিসর্জন দেয়াই মূলত বিজয়া দশমীর মূল তাৎপর্য। এ প্রবৃত্তিগুলোকে বিসর্জন দিয়ে একে অন্যের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করাই এ আয়োজনের উদ্দেশ্য।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্যমতে, এ বছর সারাদেশে ৩৩ হাজার ৩৫৫টি পূজামণ্ডপ হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীতে মণ্ডপ হয়েছে ২৫৯টি। বিজয়া দশমীতে সকালে দর্পণ বিসর্জনের পর থেকে দেশব্যাপী প্রতিমা বিসর্জনের প্রস্তুতি শুরু হবে। প্রত্যেকে নিজ নিজ জেলায় দেবী বিসর্জন করবেন। এছাড়াও রাজধানীর অধিকাংশ মণ্ডপের প্রতিমা বিসর্জন হবে বুড়িগঙ্গায়।