ময়মনসিংহ , রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :
প্রতিটি জেলা- উপজেলায় একজন করে ভিডিও প্রতিনিধি আবশ্যক। যোগাযোগঃ- Email- matiomanuss@gmail.com. Mobile No- 017-11684104, 013-03300539.

মনোভাব এখন কেমন ইরানকে ঘিরে আরব দেশগুলোর

  • ডিজিটাল ডেস্ক
  • আপডেট সময় ১০:২৩:৩৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫
  • ১৪ বার পড়া হয়েছে

গত মাসে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে ১২ দিন ধরে চলা যুদ্ধের পর থেকে আরব উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো একরকম নীরব অবস্থানে আছে, যদিও বিষয়টি অনেকের কাছে বিস্ময়কর লাগতে পারে।

কাতারের মাটিতে যুক্তরাষ্ট্রের আল উদাইদ বিমান ঘাঁটিতে ইরানের হামলা চালানো সত্ত্বেও এই পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে চলা এই যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে ওই বিমান ঘাঁটিতে হামলা হয়।

আরব উপসাগরীয় দেশগুলো আল উদাইদ বিমান ঘাঁটির ওপর হামলার ঘটনায় তৎক্ষণাৎ নিন্দা করেছিল। কিন্তু এই নিন্দা এবং হামলার খবর খুব তাড়াতাড়ি সংবাদ শিরোনাম থেকে হারিয়ে যায়।

ইসরায়েল-ইরান সংঘাত শেষ হওয়ার পর সংযুক্ত আরব আমিরাতের কূটনৈতিক উপদেষ্টা আনোয়ার গারগাশের পক্ষ থেকে উপসাগরীয় অঞ্চল থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবৃতি আসে, যেটি তিনি ‘এক্স’ (সাবেক টুইটার)–এ পোস্ট করেন।

তিনি লেখেন, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের হামলার ক্ষেত্রে উপসাগরীয় দেশগুলি দৃঢ় এবং কার্যকর অবস্থান নিয়েছিল। তা সত্ত্বেও ইরান ভ্রাতৃপ্রতিম দেশ কাতারের সার্বভৌমত্বের ওপর আক্রমণ করেছে, যা আমাদের সকলকে প্রভাবিত করে।

তিনি আরও বলেন, যেহেতু এই অঞ্চলে যুদ্ধ শেষ হয়েছে, এখন উপসাগরীয় প্রতিবেশীদের সঙ্গে আবার আস্থার সম্পর্ক স্থাপন করার দায়িত্ব মূলত ইরানের।

এখন প্রশ্ন হলো– এই সংঘাত ইরানের সঙ্গে উপসাগরীয় দেশগুলোর সম্পর্কে কেমন প্রভাব ফেলেছে?

সৌদি আরব

ইসরায়েল-ইরান সংঘাত এবং আল উদাইদ ঘাঁটিতে ইরানের হামলার পর সৌদি আরবের প্রতিক্রিয়া থেকে বোঝা যায়, তারা ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী।

দুই দেশের মধ্যে দফায় দফায় উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে বিষয়টি স্পষ্টভাবে দেখা গেছে। বিশেষ করে গত ৮ জুলাই জেদ্দায় সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান এবং ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচির সাক্ষাৎ হয়।

যদিও ২০২৩ সালের মার্চে চীনের মধ্যস্থতায় সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে হওয়া চুক্তি বিশ্বজুড়ে আলোচনায় আসে, তবে সৌদি গণমাধ্যম ও কর্মকর্তারা এ চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে খুব সীমিত মন্তব্য ও প্রতিবেদন প্রকাশ করেন।

এ থেকে ধারণা করা যায়, যদি পরিস্থিতি কখনো বদলায় তাহলে সৌদি আরব ওই চুক্তিতে থেকে সরে আসতে পারে।

তবে ২০২৪ সালের শেষের দিক ও ২০২৫ সালের শুরুতে ইরান-সৌদি সম্পর্ক গতি পায় ঠিক তখনই যখন লেবাননে হেজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ইসরায়েলি অভিযান হয় এবং সিরিয়ায় ইরান-সমর্থিত বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের ফলে এই অঞ্চলে ইরানের প্রভাব দুর্বল হয়ে পড়ে।

সৌদি আরব লেবাননের নতুন নেতৃত্বের প্রতি তাদের সমর্থনের কথা জানিয়েছে, তারা চায় হেজবুল্লাহ অস্ত্র ছাড়ুক। একইসঙ্গে সৌদি আরব সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন অস্থায়ী সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করছে।

ইরানের সঙ্গে দুর্বল হয়ে পড়া সম্পর্ক মজবুত করতে সৌদি আরব যে আগ্রহী তা স্পষ্ট হয় এপ্রিল মাসে প্রতিরক্ষামন্ত্রী খালিদ বিন সালমানের ঐতিহাসিক ইরান সফরের মাধ্যমে।

সেখানে তিনি ইরানের সেনাপ্রধান মোহাম্মদ বাকেরি এবং দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাত শুরু হলে সৌদি শীর্ষ কর্মকর্তা ও প্রধান গণমাধ্যমগুলো ইরান সম্পর্কে আশ্চর্যজনকভাবে নরম মনোভাব দেখায়।

ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান ১৩ জুন ইসরায়েলি হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ানকে শোকবার্তা পাঠান। সৌদি নেতৃত্ব ইরানি হজযাত্রীদের নিরাপদে ফিরে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দেয়।

যদিও সৌদি আরব কাতারের আল উদাইদ ঘাঁটিতে ইরান হামলা চালানোর সঙ্গে সঙ্গেই তীব্র নিন্দা করেছিল। সেখানকার সরকারি কর্মকর্তা থেকে শুরু করে গণমাধ্যম সবাই আগের মতোই স্থিতিশীলতার বার্তা দেয়।

কিন্তু সৌদি গণমাধ্যম খুব তাড়াতাড়ি যুদ্ধবিরতির ঘোষণার দিকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া শুরু করে। গত ২৪ জুন মোহাম্মদ বিন সালমান ও পেজেশকিয়ানের মধ্যে হওয়া আলোচনা নিয়ে রিপোর্টে সৌদি মিডিয়া আল উদাইদ হামলার কথা উল্লেখই করেনি।

পরবর্তী সপ্তাহগুলোয় সেখানকার গণমাধ্যম শুধু আঞ্চলিক উত্তেজনা কমাতে সৌদি ও ইরানি কর্মকর্তাদের মধ্যে চলমান আলোচনার খবর প্রকাশ করে।

এরপর জেদ্দায় মোহাম্মদ বিন সালমান ও ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচির সাক্ষাৎ হয়। সৌদি গণমাধ্যম আবারও দুই দেশের সম্পর্ককে ‘ভ্রাতৃত্বপূর্ণ’ বলে উল্লেখ করে, কিন্তু কাতারে ইরানি হামলার কোনো উল্লেখ করেনি।

কাতার

কাতারের প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল থানি বলেছেন, এই হামলার ফলে ইরানের সঙ্গে কাতারের সম্পর্কের ওপর ‘নেতিবাচক’ প্রভাব পড়েছে, তবে তিনি আশা করেন যে সম্পর্ক আবার স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

অন্য উপসাগরীয় দেশগুলোর মতো, ১৯৭৯ সালে ইরান ইসলামি প্রজাতন্ত্র ঘোষণার পর থেকে কাতার আর ইরানের সম্পর্ক কখনোই পুরোপুরি স্থিতিশীল ছিল না।

হামলার পর দুই দেশের শীর্ষ কর্মকর্তারা ফোনে কথা বলেছেন, যা ইঙ্গিত দেয় যে তারা এই ক্ষতিগ্রস্ত সম্পর্ক মেরামত করার চেষ্টা করছিলেন। ইরানের প্রেসিডেন্ট এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাতারের কর্মকর্তা ও গণমাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রেখে দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক সম্পর্কের ওপর সম্ভাব্য যেকোনো ক্ষতি কমানোর চেষ্টা করেছেন।

স্থানীয় গণমাধ্যম আল উদাইদ ঘাঁটিতে ইরানের হামলা নিয়ে বিশেষ খবর প্রকাশ করেছে, যেখানে হামলার পর কয়েকদিন ধরে পরিস্থিতি এবং কাতারের প্রতি আরব ও আন্তর্জাতিক সমর্থনের খবর প্রচারিত হয়েছে।

গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে ইরানে ইসরায়েলি হামলার উদ্দেশ্য নিয়ে তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে।

কাতারের প্রধান সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার ওয়েবসাইটে বিশ্লেষকরা লিখেছেন, ইরানে শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের ব্যাপারে ইসরায়েলি উদ্দেশ্য ‘উল্টো ফল’ দিতে পারে, কারণ ‘ইরানি সামরিক কর্মকর্তাদের হত্যাকাণ্ডের ফলে জনগণের সহানুভূতি সরকারের প্রতি বেড়েছে, দেশ অস্থির হয়নি’।

সেখানে একজন বিশ্লেষক বলেন, ইসরায়েলের প্রবল হামলা ইরানকে একতাবদ্ধ করেছে, কারণ এখন বিরোধীদের রাজনৈতিক পরিবর্তনের দাবি পেছনে পড়ে গেছে এবং দেশের প্রতিরক্ষার কথাই বেশি হচ্ছে।

 সংযুক্ত আরব আমিরাত

সংযুক্ত আরব আমিরাত বা ইউএই হলো কিছু গুটিকয়েক আরব দেশের মধ্যে একটি, যাদের ইসরায়েল ও ইরান দুই দেশের সাথেই সম্পর্ক আছে। এই কারণে তাদের জন্য কোনো এক পক্ষ বেছে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে এবং তারা ‘সবার আগে শান্তি’- এই পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করতে বাধ্য হয়েছে।

সরকারি পর্যায়ে, ইউএই ইরানের ওপর ইসরায়েলের হামলা এবং তার সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের তীব্র নিন্দা করেছিল।

প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান ইরানি প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ানকে ফোন করে “ইরান এবং তার জনগণের সঙ্গে সংহতি” প্রকাশ করেন। ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার জবাবে কাতারের আল উদাইদ বিমান ঘাঁটিতে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলারও নিন্দা করেছে ইউএই।

ইউএই পর্দার আড়ালে থেকে জোর প্রচেষ্টা চালিয়েছে যাতে এই সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, আঞ্চলিক উত্তেজনা না বাড়ে এবং ইরানের প্রতিক্রিয়া থেকেও যাতে বাঁচা যায়।

ইউএই কোনোভাবেই ইরানে সরকার পরিবর্তনের পক্ষে কোনো ইঙ্গিত দেয়নি, সেইসাথে তারা আমেরিকার সমর্থিত ইসরায়েলি আধিপত্যকেও গুরুত্ব দেয়নি।

স্পষ্টতই মনে হয় উপসাগরীয় এই দেশটি এই অঞ্চলে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি ইসরায়েল ও ইরান—দু’পক্ষের সাথেই সম্পর্ক বজায় রাখার পথ বেছে নিয়েছে।

ইউএই আমেরিকার মধ্যস্থতায় হওয়া ঐতিহাসিক আব্রাহাম চুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল, যার উদ্দেশ্য ছিল ২০২০ সালে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা এবং যা অন্য আরব দেশগুলোর জন্যও তাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পথ খুলে দেওয়া।

তবে গাজা যুদ্ধ এবং এখন ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের কারণে এই অঞ্চলের পরিবর্তন এই চুক্তির ভবিষ্যৎ ও সম্ভাবনাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করতে পারে।

ইরানের সঙ্গে ভালো প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক রাখা ইউএই-এর স্বার্থেই জরুরি, যাতে তারা তাদের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং লোহিত সাগরে নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করতে পারে।

সৌদি আরব ও ইরানের ঘনিষ্ঠতা দেখে ইউএই এই শিক্ষা পেয়েছে যে, সৌদি আরবের সঙ্গে নিঃশব্দ প্রতিযোগিতার মাঝেও তারা যেন নিজেকে একটি আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে গড়ে তোলে—এই লক্ষ্যেই কাজ করতে হবে।

ইউএই-এর সংবাদমাধ্যমগুলোতে যুদ্ধ নিয়ে রিপোর্টিং চলতে থাকে, আর এতে উপসাগরীয় দেশ হিসেবে নিজেদের একজন মধ্যস্থতাকারী হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টাও করা হয়েছে।

কুয়েত

মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, এই অঞ্চলে যেসব দেশে আমেরিকান ঘাঁটি আছে কুয়েত এর মধ্যে অন্যতম। এ কারণে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাত নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন ছিল। কুয়েতে মার্কিন সামরিক বাহিনীর বেশ কয়েকটি সামরিক ঘাঁটি রয়েছে।

তবে অন্যান্য দেশের মতো কুয়েতও ইরানের ওপর ইসরায়েলের হামলার তীব্র নিন্দা করেছে। লক্ষ্য করার মতো বিষয় হলো, কুয়েত হলো ওই হাতেগোনা কয়েকটি দেশের একটি যারা ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার ছিল।

অন্যদিকে বাহরাইন ও ইউএই-এর মতো অনেক দেশ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরানের সঙ্গে কুয়েতের সম্পর্ক অন্যান্য উপসাগরীয় দেশের তুলনায় কিছুটা শক্তিশালী ছিল, বিশেষ করে ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে চীনের মধ্যস্থতায় হওয়া চুক্তির আগ পর্যন্ত।

তবে, দাররাহ গ্যাস ক্ষেত্র নিয়ে ইরান-কুয়েত সম্পর্ক মাঝে টালমাটাল হয়ে পড়ে।

২০২২ সালে সৌদি আরব এবং কুয়েতের মধ্যে চুক্তির বিরোধিতা করেছিল ইরান। ওই চুক্তিতে সৌদি ও কুয়েত ‘আরাশ গ্যাস ক্ষেত্র’ উন্নয়নে সম্মত হয়েছিল। ইরান বলে, এই গ্যাস ক্ষেত্রে তাদেরও অংশ আছে এবং এই চুক্তিতে ইরানকেও অন্তর্ভুক্ত করা উচিত ছিল।

এই গ্যাস ক্ষেত্র নিয়ে এখনো উত্তেজনা চলছে, কারণ সৌদি আরব ও কুয়েত তাদের পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম যুদ্ধ চলাকালীন ঘটনাগুলো খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করেছে এবং কুয়েত ও ইরানের ভৌগোলিক অবস্থান কাছাকাছি হওয়ার এই নিয়ে বিশেষ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কেননা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলার প্রভাব কুয়েতেও পড়তে পারে।

ওমান

ওমান আঞ্চলিক বিষয়ে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে আসছে, কারণ দেশটির পররাষ্ট্রনীতি আলোচনা এবং হস্তক্ষেপ না করার মাধ্যমে বিরোধ মেটানোর প্রতিশ্রুতির ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।

ওমান এই বছর ইরান ও আমেরিকার মধ্যে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে একাধিক বৈঠকে মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করেছে। দেশটির পক্ষ থেকে এই মধ্যস্থতা শুরু হয় ২০১৩ সালে, যখন ওমান গোপন আলোচনার আয়োজন করেছিল, যা কয়েক দশকের মধ্যে দুই দেশের মধ্যে প্রথম উচ্চ-স্তরের আলোচনা ছিল।

ইরান-ইসরায়েল ১২ দিনের সংঘাতের সময় পারমাণবিক আলোচনা স্থগিত থাকা সত্ত্বেও ওমান পর্দার আড়াল থেকে তার ভূমিকা পালন করে গিয়েছে।

অঞ্চলের অন্যান্য দেশের মতো ওমানের স্থানীয় মিডিয়া মাঠের ঘটনাগুলোর কভারেজকেই অগ্রাধিকার দিয়েছে।

আরব মিডিয়া প্রায়ই ওমানের আমেরিকা-ইরান মধ্যস্থতার প্রশংসা করে। অনেক সময় ওমানের এই “সক্ষমতার প্রশংসা করা হয়েছে” যে, তারা দুই পক্ষের সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্কের সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিশ্বাস ও পারস্পরিক সম্মানের পরিবেশ তৈরি করতে পেরেছে।

তবে ইরানের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখলেও ওমান কাতারের আল উদাইদ ঘাঁটিতে ইরানের হামলার নিন্দা করেছে এবং এই হামলা কাতারের “সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন” বলে উল্লেখ করেছে।

একই বিবৃতিতে, ওমানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইসরায়েলকে সেই উত্তেজনার জন্য “দায়ী” বলে উল্লেখ করেছে এবং ইরানি হামলাগুলোকে আগে থেকে দেওয়া উসকানির ফলাফল বলে ব্যাখ্যা করেছে।

কাতারে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার আনুষ্ঠানিক নিন্দার পরেও ওমানের সংবাদমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত অনেক লেখাই ইরানের ‘প্রতিরোধ করার সক্ষমতা’র প্রশংসা করেছে এবং ইসরায়েলের ‘আক্রমণাত্মক’ আচরণের সমালোচনা অব্যাহত রেখেছে।

একটি প্রতিবেদনে আমেরিকা-ইসরায়েল-ইরান সংঘাতকে ইরানের জন্য ‘গৌরবের যুদ্ধ’ বলা হয়েছে।

বাহরাইন

এই হামলাগুলো এমন এক সংবেদনশীল সময়ে ঘটেছে যখন বাহরাইন ও ইরান এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্কের পর তাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরায় স্থাপন করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।

গত ২৬ এপ্রিল বাহরাইনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে যে তারা ইরানি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে “দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক যত দ্রুত সম্ভব পুনঃস্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় আইনগত কাঠামো তৈরির ওপর কাজ করছে”।

বাহরাইন ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে ইরানে সৌদি দূতাবাস ও কনস্যুলেটে হামলার প্রতিবাদে তাদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল।

বাহরাইন বারবার ইরানের বিরুদ্ধে ২০১১ সালে শুরু হওয়া শিয়া-নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভগুলোকে সমর্থনের অভিযোগ করেছে। এই বিক্ষোভগুলোর উদ্দেশ্য ছিল শিয়া-সংখ্যাগরিষ্ঠ এই দেশে শাসন করা সুন্নি রাজপরিবারকে ক্ষমতা থেকে সরানো।

কাতারের বিমানঘাঁটিতে ইরানি হামলার খবর ২৪ ও ২৫শে জুন দুদিন ধরে বাহরাইনের সংবাদপত্রগুলোর বড় শিরোনাম ছিল।

দেশটির পত্রিকাগুলো “পারস্য উপসাগরের দেশগুলোর যৌথ ভবিষ্যৎ” নিয়ে সম্পাদকীয় ছেপেছে এবং কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের হামলার নিন্দা করে মন্তব্যও প্রকাশ করেছে। -বিবিসি 

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মনোভাব এখন কেমন ইরানকে ঘিরে আরব দেশগুলোর

আপডেট সময় ১০:২৩:৩৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫

গত মাসে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে ১২ দিন ধরে চলা যুদ্ধের পর থেকে আরব উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো একরকম নীরব অবস্থানে আছে, যদিও বিষয়টি অনেকের কাছে বিস্ময়কর লাগতে পারে।

কাতারের মাটিতে যুক্তরাষ্ট্রের আল উদাইদ বিমান ঘাঁটিতে ইরানের হামলা চালানো সত্ত্বেও এই পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে চলা এই যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে ওই বিমান ঘাঁটিতে হামলা হয়।

আরব উপসাগরীয় দেশগুলো আল উদাইদ বিমান ঘাঁটির ওপর হামলার ঘটনায় তৎক্ষণাৎ নিন্দা করেছিল। কিন্তু এই নিন্দা এবং হামলার খবর খুব তাড়াতাড়ি সংবাদ শিরোনাম থেকে হারিয়ে যায়।

ইসরায়েল-ইরান সংঘাত শেষ হওয়ার পর সংযুক্ত আরব আমিরাতের কূটনৈতিক উপদেষ্টা আনোয়ার গারগাশের পক্ষ থেকে উপসাগরীয় অঞ্চল থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবৃতি আসে, যেটি তিনি ‘এক্স’ (সাবেক টুইটার)–এ পোস্ট করেন।

তিনি লেখেন, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের হামলার ক্ষেত্রে উপসাগরীয় দেশগুলি দৃঢ় এবং কার্যকর অবস্থান নিয়েছিল। তা সত্ত্বেও ইরান ভ্রাতৃপ্রতিম দেশ কাতারের সার্বভৌমত্বের ওপর আক্রমণ করেছে, যা আমাদের সকলকে প্রভাবিত করে।

তিনি আরও বলেন, যেহেতু এই অঞ্চলে যুদ্ধ শেষ হয়েছে, এখন উপসাগরীয় প্রতিবেশীদের সঙ্গে আবার আস্থার সম্পর্ক স্থাপন করার দায়িত্ব মূলত ইরানের।

এখন প্রশ্ন হলো– এই সংঘাত ইরানের সঙ্গে উপসাগরীয় দেশগুলোর সম্পর্কে কেমন প্রভাব ফেলেছে?

সৌদি আরব

ইসরায়েল-ইরান সংঘাত এবং আল উদাইদ ঘাঁটিতে ইরানের হামলার পর সৌদি আরবের প্রতিক্রিয়া থেকে বোঝা যায়, তারা ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী।

দুই দেশের মধ্যে দফায় দফায় উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে বিষয়টি স্পষ্টভাবে দেখা গেছে। বিশেষ করে গত ৮ জুলাই জেদ্দায় সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান এবং ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচির সাক্ষাৎ হয়।

যদিও ২০২৩ সালের মার্চে চীনের মধ্যস্থতায় সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে হওয়া চুক্তি বিশ্বজুড়ে আলোচনায় আসে, তবে সৌদি গণমাধ্যম ও কর্মকর্তারা এ চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে খুব সীমিত মন্তব্য ও প্রতিবেদন প্রকাশ করেন।

এ থেকে ধারণা করা যায়, যদি পরিস্থিতি কখনো বদলায় তাহলে সৌদি আরব ওই চুক্তিতে থেকে সরে আসতে পারে।

তবে ২০২৪ সালের শেষের দিক ও ২০২৫ সালের শুরুতে ইরান-সৌদি সম্পর্ক গতি পায় ঠিক তখনই যখন লেবাননে হেজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ইসরায়েলি অভিযান হয় এবং সিরিয়ায় ইরান-সমর্থিত বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের ফলে এই অঞ্চলে ইরানের প্রভাব দুর্বল হয়ে পড়ে।

সৌদি আরব লেবাননের নতুন নেতৃত্বের প্রতি তাদের সমর্থনের কথা জানিয়েছে, তারা চায় হেজবুল্লাহ অস্ত্র ছাড়ুক। একইসঙ্গে সৌদি আরব সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন অস্থায়ী সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করছে।

ইরানের সঙ্গে দুর্বল হয়ে পড়া সম্পর্ক মজবুত করতে সৌদি আরব যে আগ্রহী তা স্পষ্ট হয় এপ্রিল মাসে প্রতিরক্ষামন্ত্রী খালিদ বিন সালমানের ঐতিহাসিক ইরান সফরের মাধ্যমে।

সেখানে তিনি ইরানের সেনাপ্রধান মোহাম্মদ বাকেরি এবং দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাত শুরু হলে সৌদি শীর্ষ কর্মকর্তা ও প্রধান গণমাধ্যমগুলো ইরান সম্পর্কে আশ্চর্যজনকভাবে নরম মনোভাব দেখায়।

ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান ১৩ জুন ইসরায়েলি হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ানকে শোকবার্তা পাঠান। সৌদি নেতৃত্ব ইরানি হজযাত্রীদের নিরাপদে ফিরে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দেয়।

যদিও সৌদি আরব কাতারের আল উদাইদ ঘাঁটিতে ইরান হামলা চালানোর সঙ্গে সঙ্গেই তীব্র নিন্দা করেছিল। সেখানকার সরকারি কর্মকর্তা থেকে শুরু করে গণমাধ্যম সবাই আগের মতোই স্থিতিশীলতার বার্তা দেয়।

কিন্তু সৌদি গণমাধ্যম খুব তাড়াতাড়ি যুদ্ধবিরতির ঘোষণার দিকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া শুরু করে। গত ২৪ জুন মোহাম্মদ বিন সালমান ও পেজেশকিয়ানের মধ্যে হওয়া আলোচনা নিয়ে রিপোর্টে সৌদি মিডিয়া আল উদাইদ হামলার কথা উল্লেখই করেনি।

পরবর্তী সপ্তাহগুলোয় সেখানকার গণমাধ্যম শুধু আঞ্চলিক উত্তেজনা কমাতে সৌদি ও ইরানি কর্মকর্তাদের মধ্যে চলমান আলোচনার খবর প্রকাশ করে।

এরপর জেদ্দায় মোহাম্মদ বিন সালমান ও ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচির সাক্ষাৎ হয়। সৌদি গণমাধ্যম আবারও দুই দেশের সম্পর্ককে ‘ভ্রাতৃত্বপূর্ণ’ বলে উল্লেখ করে, কিন্তু কাতারে ইরানি হামলার কোনো উল্লেখ করেনি।

কাতার

কাতারের প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল থানি বলেছেন, এই হামলার ফলে ইরানের সঙ্গে কাতারের সম্পর্কের ওপর ‘নেতিবাচক’ প্রভাব পড়েছে, তবে তিনি আশা করেন যে সম্পর্ক আবার স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

অন্য উপসাগরীয় দেশগুলোর মতো, ১৯৭৯ সালে ইরান ইসলামি প্রজাতন্ত্র ঘোষণার পর থেকে কাতার আর ইরানের সম্পর্ক কখনোই পুরোপুরি স্থিতিশীল ছিল না।

হামলার পর দুই দেশের শীর্ষ কর্মকর্তারা ফোনে কথা বলেছেন, যা ইঙ্গিত দেয় যে তারা এই ক্ষতিগ্রস্ত সম্পর্ক মেরামত করার চেষ্টা করছিলেন। ইরানের প্রেসিডেন্ট এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাতারের কর্মকর্তা ও গণমাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রেখে দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক সম্পর্কের ওপর সম্ভাব্য যেকোনো ক্ষতি কমানোর চেষ্টা করেছেন।

স্থানীয় গণমাধ্যম আল উদাইদ ঘাঁটিতে ইরানের হামলা নিয়ে বিশেষ খবর প্রকাশ করেছে, যেখানে হামলার পর কয়েকদিন ধরে পরিস্থিতি এবং কাতারের প্রতি আরব ও আন্তর্জাতিক সমর্থনের খবর প্রচারিত হয়েছে।

গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে ইরানে ইসরায়েলি হামলার উদ্দেশ্য নিয়ে তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে।

কাতারের প্রধান সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার ওয়েবসাইটে বিশ্লেষকরা লিখেছেন, ইরানে শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের ব্যাপারে ইসরায়েলি উদ্দেশ্য ‘উল্টো ফল’ দিতে পারে, কারণ ‘ইরানি সামরিক কর্মকর্তাদের হত্যাকাণ্ডের ফলে জনগণের সহানুভূতি সরকারের প্রতি বেড়েছে, দেশ অস্থির হয়নি’।

সেখানে একজন বিশ্লেষক বলেন, ইসরায়েলের প্রবল হামলা ইরানকে একতাবদ্ধ করেছে, কারণ এখন বিরোধীদের রাজনৈতিক পরিবর্তনের দাবি পেছনে পড়ে গেছে এবং দেশের প্রতিরক্ষার কথাই বেশি হচ্ছে।

 সংযুক্ত আরব আমিরাত

সংযুক্ত আরব আমিরাত বা ইউএই হলো কিছু গুটিকয়েক আরব দেশের মধ্যে একটি, যাদের ইসরায়েল ও ইরান দুই দেশের সাথেই সম্পর্ক আছে। এই কারণে তাদের জন্য কোনো এক পক্ষ বেছে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে এবং তারা ‘সবার আগে শান্তি’- এই পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করতে বাধ্য হয়েছে।

সরকারি পর্যায়ে, ইউএই ইরানের ওপর ইসরায়েলের হামলা এবং তার সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের তীব্র নিন্দা করেছিল।

প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান ইরানি প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ানকে ফোন করে “ইরান এবং তার জনগণের সঙ্গে সংহতি” প্রকাশ করেন। ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার জবাবে কাতারের আল উদাইদ বিমান ঘাঁটিতে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলারও নিন্দা করেছে ইউএই।

ইউএই পর্দার আড়ালে থেকে জোর প্রচেষ্টা চালিয়েছে যাতে এই সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, আঞ্চলিক উত্তেজনা না বাড়ে এবং ইরানের প্রতিক্রিয়া থেকেও যাতে বাঁচা যায়।

ইউএই কোনোভাবেই ইরানে সরকার পরিবর্তনের পক্ষে কোনো ইঙ্গিত দেয়নি, সেইসাথে তারা আমেরিকার সমর্থিত ইসরায়েলি আধিপত্যকেও গুরুত্ব দেয়নি।

স্পষ্টতই মনে হয় উপসাগরীয় এই দেশটি এই অঞ্চলে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি ইসরায়েল ও ইরান—দু’পক্ষের সাথেই সম্পর্ক বজায় রাখার পথ বেছে নিয়েছে।

ইউএই আমেরিকার মধ্যস্থতায় হওয়া ঐতিহাসিক আব্রাহাম চুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল, যার উদ্দেশ্য ছিল ২০২০ সালে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা এবং যা অন্য আরব দেশগুলোর জন্যও তাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পথ খুলে দেওয়া।

তবে গাজা যুদ্ধ এবং এখন ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের কারণে এই অঞ্চলের পরিবর্তন এই চুক্তির ভবিষ্যৎ ও সম্ভাবনাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করতে পারে।

ইরানের সঙ্গে ভালো প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক রাখা ইউএই-এর স্বার্থেই জরুরি, যাতে তারা তাদের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং লোহিত সাগরে নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করতে পারে।

সৌদি আরব ও ইরানের ঘনিষ্ঠতা দেখে ইউএই এই শিক্ষা পেয়েছে যে, সৌদি আরবের সঙ্গে নিঃশব্দ প্রতিযোগিতার মাঝেও তারা যেন নিজেকে একটি আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে গড়ে তোলে—এই লক্ষ্যেই কাজ করতে হবে।

ইউএই-এর সংবাদমাধ্যমগুলোতে যুদ্ধ নিয়ে রিপোর্টিং চলতে থাকে, আর এতে উপসাগরীয় দেশ হিসেবে নিজেদের একজন মধ্যস্থতাকারী হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টাও করা হয়েছে।

কুয়েত

মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, এই অঞ্চলে যেসব দেশে আমেরিকান ঘাঁটি আছে কুয়েত এর মধ্যে অন্যতম। এ কারণে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাত নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন ছিল। কুয়েতে মার্কিন সামরিক বাহিনীর বেশ কয়েকটি সামরিক ঘাঁটি রয়েছে।

তবে অন্যান্য দেশের মতো কুয়েতও ইরানের ওপর ইসরায়েলের হামলার তীব্র নিন্দা করেছে। লক্ষ্য করার মতো বিষয় হলো, কুয়েত হলো ওই হাতেগোনা কয়েকটি দেশের একটি যারা ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার ছিল।

অন্যদিকে বাহরাইন ও ইউএই-এর মতো অনেক দেশ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরানের সঙ্গে কুয়েতের সম্পর্ক অন্যান্য উপসাগরীয় দেশের তুলনায় কিছুটা শক্তিশালী ছিল, বিশেষ করে ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে চীনের মধ্যস্থতায় হওয়া চুক্তির আগ পর্যন্ত।

তবে, দাররাহ গ্যাস ক্ষেত্র নিয়ে ইরান-কুয়েত সম্পর্ক মাঝে টালমাটাল হয়ে পড়ে।

২০২২ সালে সৌদি আরব এবং কুয়েতের মধ্যে চুক্তির বিরোধিতা করেছিল ইরান। ওই চুক্তিতে সৌদি ও কুয়েত ‘আরাশ গ্যাস ক্ষেত্র’ উন্নয়নে সম্মত হয়েছিল। ইরান বলে, এই গ্যাস ক্ষেত্রে তাদেরও অংশ আছে এবং এই চুক্তিতে ইরানকেও অন্তর্ভুক্ত করা উচিত ছিল।

এই গ্যাস ক্ষেত্র নিয়ে এখনো উত্তেজনা চলছে, কারণ সৌদি আরব ও কুয়েত তাদের পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম যুদ্ধ চলাকালীন ঘটনাগুলো খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করেছে এবং কুয়েত ও ইরানের ভৌগোলিক অবস্থান কাছাকাছি হওয়ার এই নিয়ে বিশেষ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কেননা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলার প্রভাব কুয়েতেও পড়তে পারে।

ওমান

ওমান আঞ্চলিক বিষয়ে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে আসছে, কারণ দেশটির পররাষ্ট্রনীতি আলোচনা এবং হস্তক্ষেপ না করার মাধ্যমে বিরোধ মেটানোর প্রতিশ্রুতির ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।

ওমান এই বছর ইরান ও আমেরিকার মধ্যে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে একাধিক বৈঠকে মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করেছে। দেশটির পক্ষ থেকে এই মধ্যস্থতা শুরু হয় ২০১৩ সালে, যখন ওমান গোপন আলোচনার আয়োজন করেছিল, যা কয়েক দশকের মধ্যে দুই দেশের মধ্যে প্রথম উচ্চ-স্তরের আলোচনা ছিল।

ইরান-ইসরায়েল ১২ দিনের সংঘাতের সময় পারমাণবিক আলোচনা স্থগিত থাকা সত্ত্বেও ওমান পর্দার আড়াল থেকে তার ভূমিকা পালন করে গিয়েছে।

অঞ্চলের অন্যান্য দেশের মতো ওমানের স্থানীয় মিডিয়া মাঠের ঘটনাগুলোর কভারেজকেই অগ্রাধিকার দিয়েছে।

আরব মিডিয়া প্রায়ই ওমানের আমেরিকা-ইরান মধ্যস্থতার প্রশংসা করে। অনেক সময় ওমানের এই “সক্ষমতার প্রশংসা করা হয়েছে” যে, তারা দুই পক্ষের সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্কের সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিশ্বাস ও পারস্পরিক সম্মানের পরিবেশ তৈরি করতে পেরেছে।

তবে ইরানের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখলেও ওমান কাতারের আল উদাইদ ঘাঁটিতে ইরানের হামলার নিন্দা করেছে এবং এই হামলা কাতারের “সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন” বলে উল্লেখ করেছে।

একই বিবৃতিতে, ওমানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইসরায়েলকে সেই উত্তেজনার জন্য “দায়ী” বলে উল্লেখ করেছে এবং ইরানি হামলাগুলোকে আগে থেকে দেওয়া উসকানির ফলাফল বলে ব্যাখ্যা করেছে।

কাতারে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার আনুষ্ঠানিক নিন্দার পরেও ওমানের সংবাদমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত অনেক লেখাই ইরানের ‘প্রতিরোধ করার সক্ষমতা’র প্রশংসা করেছে এবং ইসরায়েলের ‘আক্রমণাত্মক’ আচরণের সমালোচনা অব্যাহত রেখেছে।

একটি প্রতিবেদনে আমেরিকা-ইসরায়েল-ইরান সংঘাতকে ইরানের জন্য ‘গৌরবের যুদ্ধ’ বলা হয়েছে।

বাহরাইন

এই হামলাগুলো এমন এক সংবেদনশীল সময়ে ঘটেছে যখন বাহরাইন ও ইরান এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্কের পর তাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরায় স্থাপন করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।

গত ২৬ এপ্রিল বাহরাইনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে যে তারা ইরানি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে “দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক যত দ্রুত সম্ভব পুনঃস্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় আইনগত কাঠামো তৈরির ওপর কাজ করছে”।

বাহরাইন ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে ইরানে সৌদি দূতাবাস ও কনস্যুলেটে হামলার প্রতিবাদে তাদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল।

বাহরাইন বারবার ইরানের বিরুদ্ধে ২০১১ সালে শুরু হওয়া শিয়া-নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভগুলোকে সমর্থনের অভিযোগ করেছে। এই বিক্ষোভগুলোর উদ্দেশ্য ছিল শিয়া-সংখ্যাগরিষ্ঠ এই দেশে শাসন করা সুন্নি রাজপরিবারকে ক্ষমতা থেকে সরানো।

কাতারের বিমানঘাঁটিতে ইরানি হামলার খবর ২৪ ও ২৫শে জুন দুদিন ধরে বাহরাইনের সংবাদপত্রগুলোর বড় শিরোনাম ছিল।

দেশটির পত্রিকাগুলো “পারস্য উপসাগরের দেশগুলোর যৌথ ভবিষ্যৎ” নিয়ে সম্পাদকীয় ছেপেছে এবং কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের হামলার নিন্দা করে মন্তব্যও প্রকাশ করেছে। -বিবিসি