শীতকালীন ঝড় ও অবিরাম বৃষ্টির ফলে ফিলিস্তিনের গাজায় এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে, যা বর্তমান সংকটকে আরও গভীর করে তুলেছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে যে, তাঁবু ও কম্বলসহ পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী মজুত থাকা সত্ত্বেও ইসরায়েলের আরোপিত কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও বাধার কারণে জীবনরক্ষাকারী এসব সরঞ্জাম গাজায় প্রবেশ করতে পারছে না।
আল জাজিরার এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, বাস্তুচ্যুত লাখো ফিলিস্তিনি এই বৈরী আবহাওয়ায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন এবং সীমান্ত ক্রসিংগুলোতে ইসরায়েলের কড়াকড়ির কারণে জরুরি সহায়তা কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। গাজার ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স বর্তমান পরিস্থিতিকে এক কথায় ‘চরম মানবিক বিপর্যয়’ বলে আখ্যায়িত করেছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্রের মতে, ঝড়ের কারণে গাজাজুড়ে অসংখ্য অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র ও মানুষের ব্যক্তিগত মালামাল ধ্বংস হয়ে গেছে, যার ফলে প্রায় ৩০ হাজার শিশু সরাসরি স্বাস্থ্য ও জীবনঝুঁকির মুখে পড়েছে। দ্রুত সংস্কারকাজ শুরু না হলে পরিস্থিতি আরও শোচনীয় হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কাতারের প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেছেন যে, গাজায় মানবিক সহায়তা অবশ্যই ‘নিঃশর্তভাবে’ পৌঁছাতে দিতে হবে। তিনি তার বক্তব্যে স্পষ্ট করে বুঝিয়েছেন যে, ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে লাখো মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় ত্রাণ আটকে দিচ্ছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কাতারি কর্মকর্তাদের মতে, আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থিত যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপে অগ্রসর হওয়ার বিষয়টিও গুরুত্ব পেয়েছে।
আলোচনার টেবিলে যুদ্ধ-পরবর্তী গাজায় একটি আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী মোতায়েনের সম্ভাবনাও উঠে এসেছে। কাতারের প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন যে, এমন কোনো বাহিনীকে অবশ্যই সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে হবে। আশা করা হচ্ছে যে, ২০২৬ সালের শুরুতেই যুক্তরাষ্ট্র কোন কোন দেশ ওই বাহিনীতে সেনা পাঠাবে তা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করতে পারে। তবে কূটনৈতিক এই তৎপরতার মধ্যেই গাজায় সহিংসতার ঘটনা থেমে নেই।
চিকিৎসা সূত্রের বরাত দিয়ে জানা গেছে, গাজা সিটির কেন্দ্রীয় এলাকা ও দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের পূর্বাঞ্চলে ইসরায়েলি বাহিনীর নতুন করে চালানো হামলায় অন্তত ১১ জন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া অধিকৃত পশ্চিম তীরের কালকিলিয়াতেও ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে এক ফিলিস্তিনি যুবক গুরুতর আহত হয়েছেন।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় শুরু হওয়া ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে এখন পর্যন্ত অন্তত ৭০ হাজার ৬৬৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের দেওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এই দীর্ঘ সময়ে আহত মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার ১৫২ জনে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজার তথাকথিত ‘ইয়েলো লাইন’-এর কাছে মর্টার শেল নিক্ষেপ ও গোলাবর্ষণের ঘটনায় তদন্ত করার কথা জানিয়েছে, যদিও মাঠপর্যায়ে সাধারণ মানুষের ওপর হামলা অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে গাজার প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।

ডিজিটাল ডেস্ক 
























