অনলাইন সংবাদ-
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর টানা ১২ দিন আত্মগোপনে থেকে গতকাল রোববার (১৮ আগস্ট) সকালে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনে (মসিক) এসেছেন মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ইকরামুল হক টিটু। এমন খবর পেয়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী, ছাত্রদল ও যুবদলের নেতাকর্মীরা মসিক ভবনের গিয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন।
গতকাল রোববার বিকেল পৌনে ৪টার দিকে এই তালা দেওয়ার ঘটনা ঘটে বলে নিশ্চিত করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মসিকের একাধিক কর্মকর্তা। তবে এর আগেই নিজ কার্যালয় থেকে চম্পট দেন মেয়র টিটু। এ ঘটনায় মসিকের ভেতরে-বাইরে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
সূত্র জানায়, এদিন সকালে আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হওয়া কলেজ শিক্ষার্থী রেজোয়ান হোসেন সাগরের (১৭) হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে সিটি করপোরেশনে যায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা। তারা মেয়রকে তার কক্ষে না পেয়ে কাউন্সিলরদের কক্ষে প্রবেশ করেন এবং মেয়রকে অফিস না করতে উপস্থিত কাউন্সিলরদের বার্তা দেন। অন্যথায় শিক্ষার্থীরা আরও কঠোর অবস্থানে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এ সময় উপস্থিত কাউন্সিলরবৃন্দ বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসকের (ডিসি) সঙ্গে কথা বলার অনুরোধ জানান।
পরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা জেলা প্রশাসক (ডিসি) দিদারে আলম মাকসুদ চৌধুরী ও পুলিশ সুপার (এসপি) মাছুম আহম্মেদ ভুঞার সঙ্গে দেখা করে অবিলম্বে সাগর হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান। এ ঘটনার কিছুক্ষণ পর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে নিয়ে বিএনপির অঙ্গসংগঠন যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ফের মসিকে প্রবেশ করে। এ সময় তারা মেয়রকে না পেয়ে তার কক্ষসহ কাউন্সিলরদের কক্ষেও তালা লাগিয়ে দেন।
এদিন সকালে একই ইস্যুতে সদর উপজেলা পরিষদে অবস্থান নিয়ে সাগর হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে চেয়ারম্যান আবু সাঈদকে বিচারের আওতায় আনতে কঠোর বার্তা দেয় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুল ইসলাম প্রিন্স আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বলেন, এটি নির্বাচিত পরিষদ। আমরা চাইলেও কোনো পদক্ষেপ নিতে পারি না। তবে বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে। তারাই এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
এ সময় উপজেলা পরিষদের প্রধান কর্মকর্তা (সিও) নাজমুন নাহারসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ময়মনসিংহের সমন্বয়ক আশিকুর রহমান, গোকূল সূত্রধর মানিক, আরিফুল হক, আব্দুল্লাহ আল মামুন নাকিব প্রমুখ। আন্দোলনের সমন্বয়ক আশিকুর রহমান বলেন, কলেজ শিক্ষার্থী সাগর হত্যায় আওয়ামী লীগের জনপ্রতিনিধিরা সরাসরি জড়িত। অবিলম্বে তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় শিক্ষার্থীরা আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।
শিক্ষার্থীরা মেয়রের আসার খবর শুনে মসিক ভবনে তালা দিলেন-
এই বিষয়ে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক (ময়মনসিংহ বিভাগ) আবু ওয়াহাব আকন্দ ওয়াহিদ বলেন, স্বৈরাচারের দোসর ও সাগর হত্যাকারীদের বরদাশত করা হবে না। অবিলম্বে তাদের আইনের আওতায় এনে বিচার নিশ্চিত করা হবে।
প্রসঙ্গত, গত ৪ আগস্ট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি মেয়র ইকরামুল হক টিটু এবং ময়মনসিংহ-৪ সদর আসনের সংসদ সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহিত উর রহমান শান্তর নেতৃত্বে প্রকাশ্যে অস্ত্র মহড়ায় নগরীতে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। এ সময় মিছিলকারীদের একটি দল নগরীর হরিকিশোর রায় রোডস্থ বিএনপি কার্যালয়ে ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগ করে। এ ঘটনার এক দিন পর গত ৫ আগস্ট সরকারের পতন হলে তারা আত্মগোপনে চলে যায়।