সড়ক সেক্টরে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সীমাহীন দুর্নীতি, চরম অব্যবস্থাপনা, চাঁদাবাজি ও নৈরাজ্যের কারণে বিগত ২০১৪ সাল থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১১ বছরে দেশে ৬০ হাজার ৯৮০ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১ লাখ ৫ হাজার ৩৩৮ জন নিহত ও ১ লাখ ৪৯ হাজার ৮৪৭ জন আহত হয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে অন্যান্য জরুরি জনগুরুত্বপূর্ণ খাতের মতো পরিবহন খাত সংস্কার কমিশন গঠন প্রয়োজন
সোমবার (২১ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস ২০২৪ উপলক্ষে ‘সড়ক সেক্টরে সীমাহীন অব্যবস্থাপনা: দায়িত্ব নেবে কে?’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বিগত সরকারের ১১ বছরের সড়ক দুর্ঘটনার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরেন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
তিনি বলেন, দেশের ইতিহাসে সড়ক মন্ত্রণালয়ে এক যুগেরও বেশি সময়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বপালন করেছেন ওবায়দুল কাদের। এসময় পরিবহনে বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা, ভাড়া নৈরাজ্য, সড়কে চাঁদাবাজি, মানসম্মত গণপরিবহন নামানো, অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে চরমভাবে ব্যর্থতার কারণে সড়কে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরকার পরিবর্তনের পরও সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএতে ওবায়দুল কাদেরের প্রেতাত্মারা পদে পদে বসে আছে। এখনো তারা সড়কে গণহত্যা বন্ধে, যানজট ও দুর্ঘটনা কমানো, সড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
সড়কের চাঁদাবাজরা পালিয়েছে, জ্বালানি তেলের দাম কমেছে কিন্তু পরিবহন ভাড়া কমছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, পণ্যমূল্য কমছে না। সড়ক মন্ত্রণালয়, বিআরটিএসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে সাবেক সড়ক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের আশীর্বাদপুষ্ট কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তারা মন্ত্রণালয় ও বিআরটিএকে পকেটে নিয়ে ঘুরেন। এখানো সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে। তারা বিগত সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে তৎপর।
মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন সড়কে ভয়াবহ যানজট ও বিশৃঙ্খলা থামাতে না পারলে বর্তমান সরকারকে ভয়াবহ খেসারত দিতে হবে। এমন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি আরও বলেন, পরিবহন খাত জঞ্জালমুক্ত করতে হলে এই খাতের আপাদমস্তক সংস্কার প্রয়োজন। তাই অন্যান্য জরুরি জনগুরুত্বপূর্ণ খাতের মতো পরিবহন খাত সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে দেখা যায়, সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী বিগত ২০১৪ সাল থেকে চলতি ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬০ হাজার ৯৮০ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১ লাখ ৫ হাজার ৩৩৮ জন নিহত ও ১ লাখ ৪৯ হাজার ৮৪৭ জন আহত হয়েছেন। এই সময়ে গণপরিবহন সংকটে মোটরসাইকেলে যাতায়াতের কারণে ২০ হাজার ১২৪ টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ৩৭ হাজার ৫৫৩ জন নিহত ৪৬ হাজার ১৬৭ জন আহত হয়েছে, যা মোট নিহতের ৩৯.৬৫ শতাংশ।
এছাড়া মোট সংঘটিত দুর্ঘটনার ৩১.৭৬ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ৩৭.৫৯ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ২২.৫৪ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয় বলে জানিয়েছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। আর সারা দেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৫.৪৪ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ১.৮২ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ও ০.৮৩ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংঘটিত হয়েছে। তবে সংগঠিত দুর্ঘটনার সিংহভাগই সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয় না। দুর্ঘটনা ও হতাহতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি।
এদিকে বছরভিত্তিক যাত্রী কল্যাণ সমিতি এই প্রতিবেদনগুলো নিয়মিতভাবে প্রকাশ করতে গিয়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের জেল-জুলুম, মামলা-হামলাসহ নানামুখী হয়রানির শিকার হতে হয়েছে বলেও জানান যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব।
তিনি বলেন, কখনো কখনো যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা রিপোর্ট প্রকাশ বন্ধের জন্য নানাভাবে চাপ দেয়া হয়েছে। কিন্তু দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বন্ধে তৎকালীন সড়ক মন্ত্রীর রাজনৈতিক বক্তব্য ছাড়া কার্যকর অর্থে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন গণপরিবহন বিশ্লেষক আবদুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, যাত্রী কল্যাণ সমিতির সহ সভাপতি তাওহিদুল হক লিটন প্রমুখ।