ময়মনসিংহ , শনিবার, ০৯ অগাস্ট ২০২৫, ২৫ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :
প্রতিটি জেলা- উপজেলায় একজন করে ভিডিও প্রতিনিধি আবশ্যক। যোগাযোগঃ- Email- matiomanuss@gmail.com. Mobile No- 017-11684104, 013-03300539.

জুলাই সনদ চূড়ান্তে ভিন্নমত: আপত্তি কোথায় বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির

  • ডিজিটাল ডেস্ক
  • আপডেট সময় ১১:২৬:০৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৯ অগাস্ট ২০২৫
  • ১২ বার পড়া হয়েছে

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ শেষের দিকে আসছে, কিন্তু এখনো চূড়ান্ত করা যায়নি রাজনৈতিক সংস্কারের ‘জুলাই সনদ’। সনদটি বাস্তবায়নের পদ্ধতি ও আইনি ভিত্তি নিয়ে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে গভীর মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। ফলে, এই সনদ চূড়ান্ত করা না হওয়ায় জাতীয় ঐকমত্যের পথে বড় ধাক্কা পড়েছে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জানিয়েছে, তারা আগামী সপ্তাহে আবারও আলোচনা শুরু করবে। প্রথমে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করবে, এরপর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তৃতীয় দফার বৈঠকে বসবে। এ বৈঠকে সনদ ও তার বাস্তবায়নের পদ্ধতি চূড়ান্ত করার চেষ্টা হবে।

আগের সময়গুলোতে কমিশন একাধিকবার রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে খসড়া পাঠিয়েছে। সর্বশেষ ২৮ জুলাই সনদের খসড়া পাঠানো হয়। দলগুলো তাদের মতামত জানিয়েছে। কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বিবিসিকে জানিয়েছেন, আগামী দুই-এক দিনের মধ্যে সনদের পূর্ণাঙ্গ খসড়া পাঠানো হবে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ২০২৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ছয় মাস মেয়াদে কাজ শুরু করে, যার মেয়াদ ১৫ আগস্ট শেষ হওয়ার কথা। মূল লক্ষ্য ছিল জুলাইয়ের মধ্যে সনদ চূড়ান্ত করা, যা সম্ভব হয়নি।

সংকটের মূল কারণ: জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি
গত বছরের ৮ আগস্টে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কার কার্যক্রম শুরু করে। সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ ১১টি কমিশন গঠন করা হয়। এসব কমিশন সংস্কারের জন্য বিভিন্ন সুপারিশ দেয়। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এসব সুপারিশ নিয়ে ৩০টিরও বেশি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।

জুলাই সনদে দলগুলো যেসব সুপারিশ বাস্তবায়নে একমত হবে, সেগুলো অন্তর্ভুক্ত হবে। খসড়ায় উল্লেখ আছে, আগামী নির্বাচনের পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে এসব সংস্কার বাস্তবায়নের অঙ্গীকার থাকবে।

বিএনপি এতে আপত্তি না করলেও জামায়াত ও এনসিপি দাবি করছে, এসব সংস্কার নির্বাচনের আগে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে বাস্তবায়িত হোক এবং সনদ আইনি ভিত্তি পাক। তাদের সন্দেহ, নির্বাচিত সরকারের অধীনে দায়িত্ব গেলে প্রকৃত বাস্তবায়ন হবে কিনা তা অনিশ্চিত।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ বলেছেন, ‘যেসব বিষয়ে সবাই একমত, সেগুলো জাতির সামনে ঘোষণা করে নির্বাচনের পূর্বে সনদে স্বাক্ষর করিয়ে আইনি রূপ দেয়া জরুরি।’

এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীবেরও বক্তব্য একই। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আগে সনদ আইনি ও সাংবিধানিক ভিত্তি পেয়ে নির্বাচন হওয়া উচিত।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ জানিয়েছেন, স্বাক্ষর নিয়ে দলগুলো একমত, কিন্তু বাস্তবায়ন ও আইনি ভিত্তি স্পষ্ট না হলে স্বাক্ষর ব্যাহত হতে পারে। তিনি বলেন, ‘সাংবিধানিক সংশোধন ছাড়া অন্যান্য সংস্কার এ সরকারের সময়ের মধ্যে অধ্যাদেশ, নির্বাহী আদেশে বাস্তবায়ন সম্ভব।’

একমত না হলে কী হবে?
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ শেষের পথে। কিন্তু দলগুলো এখনও সনদ চূড়ান্ত করার বিষয়ে একমত হতে পারেনি। এই অবস্থায় প্রশ্ন জাগছে—যদি দলগুলো এই সময়ের মধ্যে জুলাই সনদ চূড়ান্ত করতে না পারে, তাহলে কী হবে? কি হবে ঐসময়ে যখন সময় শেষের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে, কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গাঁটছড়া বাধতে পারছে না?

জামায়াতের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ বলছেন, এই সংকট মোকাবিলায় সরকারের পক্ষ থেকে বলিষ্ঠ ভূমিকা নেওয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন, ‘জুলাই সনদ কোনও একক দলের বিষয় নয়। এটা জাতীয় স্বার্থের একটি বিষয়। দলগুলোর মধ্যে যদি বিভিন্ন বিষয়ে একমত হওয়ার সুযোগ না হয়, তবে সে বিষয়গুলো সনদে স্পষ্ট উল্লেখ থাকবে।’ তার ভাষায়, ‘এই সনদ দ্রুত স্বাক্ষর করে ঘোষণা দেওয়া উচিত এবং এর ভিত্তিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া দরকার।’

তবে তিনি আরও স্পষ্ট করেন, জামায়াতের পক্ষ থেকে কোনও ছাড় দেওয়ার বিষয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। তিনি জানান, ‘আমরা জাতীয় স্বার্থের কথা বিবেচনা করে কথা বলেছি। যেখানে আমাদের স্বার্থ জড়িত, সেখানে ছাড় দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। উদাহরণস্বরূপ, আমরা বলেছি যে একই ব্যক্তি একই সময় প্রধানমন্ত্রী ও সরকার প্রধান হিসেবে থাকতে পারবেন না। এই বিষয়ে একটি জাতীয় দল একমত নয়। সে ক্ষেত্রে সরকারকে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে দিতে হবে। প্রয়োজনে জনগণের সমর্থন আদায়ে গণভোট গ্রহণ করতে হতে পারে। যদি সরকার এ উদ্যোগ না নেয়, তাহলে সেটা সরকারের ব্যর্থতা বলে গণ্য হবে।’

অন্যদিকে, জাতীয় পার্টির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব জানিয়েছেন, যদি নির্বাচনী প্রক্রিয়া, বিশেষ করে প্রজনন অনুপাত (পিআর) পদ্ধতিতে ভোটদান, দলীয় পদে প্রধানমন্ত্রীর অনুপস্থিতি, দুই সংসদের নির্বাচিত সদস্যদের গোপন ভোটে রাষ্ট্রপতির নির্বাচন ইত্যাদি বিষয়গুলোতে একমত না হওয়া যায়, তবে এনসিপি জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলছেন, দলগুলো সবসময় সনদ নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, ‘কোনও সাংবিধানিক বা আইনি প্রক্রিয়ায় বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমাদের পূর্ণ সম্মতি রয়েছে। যদি কেউ অন্য কোনো প্রক্রিয়া প্রস্তাব করে, তাতেও আমরা আলোচনা করব এবং অংশগ্রহণ করব।’

একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘স্বাক্ষর বিষয়টি কোনো বাধা নয়, বরং বিষয়টি হলো কিভাবে সনদ বাস্তবায়িত হবে এবং তার আইনি ভিত্তি কী হবে।’ তিনি ব্যাখ্যা করেন, ‘সাংবিধানিক সংশোধনীগুলো বাদে বাকী সকল সংস্কার প্রস্তাব এই সরকার সময়ের মধ্যে অধ্যাদেশ, নির্বাহী আদেশ এবং অফিস আদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে পারে।’

এই সব মতবিরোধের মাঝে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ শেষের আগেই দলগুলো যদি ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারে, তাহলে কী হবে—এ প্রশ্নে আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিতে চাই। ১৫ আগস্ট আসুক, তখন দেখব কি হয়।’ তিনি জানিয়েছেন, দলগুলোর মতামত অনুযায়ী দ্রুততম সময়ে খসড়া চূড়ান্ত করার চেষ্টা চলছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ মনে করেন, নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় ঘোষণার পর যা আলোচনা হয়েছে, তার ভিত্তিতেই স্বাক্ষর হওয়া উচিত। তিনি দলগুলোর মতপার্থক্যকে সংকট হিসেবে না দেখে রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্যের অংশ মনে করেন। তার মতে, দলগুলো নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য চাপ প্রয়োগ করছে, আর কেউ কেউ হয়তো নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা করতে পারে। তিনি বলেন, ‘বিএনপি ধারণা করছে তারা সরকার গঠন করবে। তাই তারা সরকারে গেলে ক্ষমতা অবাধে প্রয়োগ করতে চাইছে, আর সেখানে বাধা দিতে পারে এমন প্রস্তাবে আপত্তি করছে। তবে বেশিরভাগ দল যা চায়, বিএনপি তা চায় না, এতে জনগণের ধারণা হতে পারে বিএনপি সংস্কার চায় না। এটা তাদের জন্য ঝুঁকি।’

এই পরিস্থিতিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়া ও দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য না হওয়া—এ দুয়ের মেলবন্ধনে আগামী সময় কী আকার নেবে, তা রাজনৈতিক অঙ্গনে নজর থাকবে। কমিশনের পরবর্তী বৈঠকে এই সংকট ও সিদ্ধান্তের দিকনির্দেশনা স্পষ্ট হওয়ার আশা করা হচ্ছে।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জুলাই সনদ চূড়ান্তে ভিন্নমত: আপত্তি কোথায় বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির

আপডেট সময় ১১:২৬:০৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৯ অগাস্ট ২০২৫

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ শেষের দিকে আসছে, কিন্তু এখনো চূড়ান্ত করা যায়নি রাজনৈতিক সংস্কারের ‘জুলাই সনদ’। সনদটি বাস্তবায়নের পদ্ধতি ও আইনি ভিত্তি নিয়ে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে গভীর মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। ফলে, এই সনদ চূড়ান্ত করা না হওয়ায় জাতীয় ঐকমত্যের পথে বড় ধাক্কা পড়েছে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জানিয়েছে, তারা আগামী সপ্তাহে আবারও আলোচনা শুরু করবে। প্রথমে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করবে, এরপর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তৃতীয় দফার বৈঠকে বসবে। এ বৈঠকে সনদ ও তার বাস্তবায়নের পদ্ধতি চূড়ান্ত করার চেষ্টা হবে।

আগের সময়গুলোতে কমিশন একাধিকবার রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে খসড়া পাঠিয়েছে। সর্বশেষ ২৮ জুলাই সনদের খসড়া পাঠানো হয়। দলগুলো তাদের মতামত জানিয়েছে। কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বিবিসিকে জানিয়েছেন, আগামী দুই-এক দিনের মধ্যে সনদের পূর্ণাঙ্গ খসড়া পাঠানো হবে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ২০২৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ছয় মাস মেয়াদে কাজ শুরু করে, যার মেয়াদ ১৫ আগস্ট শেষ হওয়ার কথা। মূল লক্ষ্য ছিল জুলাইয়ের মধ্যে সনদ চূড়ান্ত করা, যা সম্ভব হয়নি।

সংকটের মূল কারণ: জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি
গত বছরের ৮ আগস্টে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কার কার্যক্রম শুরু করে। সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ ১১টি কমিশন গঠন করা হয়। এসব কমিশন সংস্কারের জন্য বিভিন্ন সুপারিশ দেয়। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এসব সুপারিশ নিয়ে ৩০টিরও বেশি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।

জুলাই সনদে দলগুলো যেসব সুপারিশ বাস্তবায়নে একমত হবে, সেগুলো অন্তর্ভুক্ত হবে। খসড়ায় উল্লেখ আছে, আগামী নির্বাচনের পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে এসব সংস্কার বাস্তবায়নের অঙ্গীকার থাকবে।

বিএনপি এতে আপত্তি না করলেও জামায়াত ও এনসিপি দাবি করছে, এসব সংস্কার নির্বাচনের আগে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে বাস্তবায়িত হোক এবং সনদ আইনি ভিত্তি পাক। তাদের সন্দেহ, নির্বাচিত সরকারের অধীনে দায়িত্ব গেলে প্রকৃত বাস্তবায়ন হবে কিনা তা অনিশ্চিত।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ বলেছেন, ‘যেসব বিষয়ে সবাই একমত, সেগুলো জাতির সামনে ঘোষণা করে নির্বাচনের পূর্বে সনদে স্বাক্ষর করিয়ে আইনি রূপ দেয়া জরুরি।’

এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীবেরও বক্তব্য একই। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আগে সনদ আইনি ও সাংবিধানিক ভিত্তি পেয়ে নির্বাচন হওয়া উচিত।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ জানিয়েছেন, স্বাক্ষর নিয়ে দলগুলো একমত, কিন্তু বাস্তবায়ন ও আইনি ভিত্তি স্পষ্ট না হলে স্বাক্ষর ব্যাহত হতে পারে। তিনি বলেন, ‘সাংবিধানিক সংশোধন ছাড়া অন্যান্য সংস্কার এ সরকারের সময়ের মধ্যে অধ্যাদেশ, নির্বাহী আদেশে বাস্তবায়ন সম্ভব।’

একমত না হলে কী হবে?
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ শেষের পথে। কিন্তু দলগুলো এখনও সনদ চূড়ান্ত করার বিষয়ে একমত হতে পারেনি। এই অবস্থায় প্রশ্ন জাগছে—যদি দলগুলো এই সময়ের মধ্যে জুলাই সনদ চূড়ান্ত করতে না পারে, তাহলে কী হবে? কি হবে ঐসময়ে যখন সময় শেষের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে, কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গাঁটছড়া বাধতে পারছে না?

জামায়াতের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ বলছেন, এই সংকট মোকাবিলায় সরকারের পক্ষ থেকে বলিষ্ঠ ভূমিকা নেওয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন, ‘জুলাই সনদ কোনও একক দলের বিষয় নয়। এটা জাতীয় স্বার্থের একটি বিষয়। দলগুলোর মধ্যে যদি বিভিন্ন বিষয়ে একমত হওয়ার সুযোগ না হয়, তবে সে বিষয়গুলো সনদে স্পষ্ট উল্লেখ থাকবে।’ তার ভাষায়, ‘এই সনদ দ্রুত স্বাক্ষর করে ঘোষণা দেওয়া উচিত এবং এর ভিত্তিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া দরকার।’

তবে তিনি আরও স্পষ্ট করেন, জামায়াতের পক্ষ থেকে কোনও ছাড় দেওয়ার বিষয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। তিনি জানান, ‘আমরা জাতীয় স্বার্থের কথা বিবেচনা করে কথা বলেছি। যেখানে আমাদের স্বার্থ জড়িত, সেখানে ছাড় দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। উদাহরণস্বরূপ, আমরা বলেছি যে একই ব্যক্তি একই সময় প্রধানমন্ত্রী ও সরকার প্রধান হিসেবে থাকতে পারবেন না। এই বিষয়ে একটি জাতীয় দল একমত নয়। সে ক্ষেত্রে সরকারকে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে দিতে হবে। প্রয়োজনে জনগণের সমর্থন আদায়ে গণভোট গ্রহণ করতে হতে পারে। যদি সরকার এ উদ্যোগ না নেয়, তাহলে সেটা সরকারের ব্যর্থতা বলে গণ্য হবে।’

অন্যদিকে, জাতীয় পার্টির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব জানিয়েছেন, যদি নির্বাচনী প্রক্রিয়া, বিশেষ করে প্রজনন অনুপাত (পিআর) পদ্ধতিতে ভোটদান, দলীয় পদে প্রধানমন্ত্রীর অনুপস্থিতি, দুই সংসদের নির্বাচিত সদস্যদের গোপন ভোটে রাষ্ট্রপতির নির্বাচন ইত্যাদি বিষয়গুলোতে একমত না হওয়া যায়, তবে এনসিপি জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলছেন, দলগুলো সবসময় সনদ নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, ‘কোনও সাংবিধানিক বা আইনি প্রক্রিয়ায় বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমাদের পূর্ণ সম্মতি রয়েছে। যদি কেউ অন্য কোনো প্রক্রিয়া প্রস্তাব করে, তাতেও আমরা আলোচনা করব এবং অংশগ্রহণ করব।’

একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘স্বাক্ষর বিষয়টি কোনো বাধা নয়, বরং বিষয়টি হলো কিভাবে সনদ বাস্তবায়িত হবে এবং তার আইনি ভিত্তি কী হবে।’ তিনি ব্যাখ্যা করেন, ‘সাংবিধানিক সংশোধনীগুলো বাদে বাকী সকল সংস্কার প্রস্তাব এই সরকার সময়ের মধ্যে অধ্যাদেশ, নির্বাহী আদেশ এবং অফিস আদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে পারে।’

এই সব মতবিরোধের মাঝে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ শেষের আগেই দলগুলো যদি ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারে, তাহলে কী হবে—এ প্রশ্নে আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিতে চাই। ১৫ আগস্ট আসুক, তখন দেখব কি হয়।’ তিনি জানিয়েছেন, দলগুলোর মতামত অনুযায়ী দ্রুততম সময়ে খসড়া চূড়ান্ত করার চেষ্টা চলছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ মনে করেন, নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় ঘোষণার পর যা আলোচনা হয়েছে, তার ভিত্তিতেই স্বাক্ষর হওয়া উচিত। তিনি দলগুলোর মতপার্থক্যকে সংকট হিসেবে না দেখে রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্যের অংশ মনে করেন। তার মতে, দলগুলো নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য চাপ প্রয়োগ করছে, আর কেউ কেউ হয়তো নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা করতে পারে। তিনি বলেন, ‘বিএনপি ধারণা করছে তারা সরকার গঠন করবে। তাই তারা সরকারে গেলে ক্ষমতা অবাধে প্রয়োগ করতে চাইছে, আর সেখানে বাধা দিতে পারে এমন প্রস্তাবে আপত্তি করছে। তবে বেশিরভাগ দল যা চায়, বিএনপি তা চায় না, এতে জনগণের ধারণা হতে পারে বিএনপি সংস্কার চায় না। এটা তাদের জন্য ঝুঁকি।’

এই পরিস্থিতিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়া ও দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য না হওয়া—এ দুয়ের মেলবন্ধনে আগামী সময় কী আকার নেবে, তা রাজনৈতিক অঙ্গনে নজর থাকবে। কমিশনের পরবর্তী বৈঠকে এই সংকট ও সিদ্ধান্তের দিকনির্দেশনা স্পষ্ট হওয়ার আশা করা হচ্ছে।