সারা দেশে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান।
তিনি বলেছেন, গতকাল সারা দিন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন ছিল নানা গুজব, আলোচনা ও উত্তেজনায় ভরপুর। মূলত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ও ধারাবাহিক সংঘর্ষমূলক ঘটনার সূত্র ধরে দেশজুড়ে অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রথমে প্রধান উপদেষ্টা আনুষ্ঠানিকভাবে তিনটি বড় রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেন। এই বৈঠক নিয়ে নানা আলোচনা শুরু হয়— তিনি কী বলেছেন, দলগুলো কী প্রতিক্রিয়া দিয়েছে— এসব বিষয়ে বিশ্লেষণ জরুরি। এই বৈঠকের পরপরই হঠাৎ করে গুঞ্জন ছড়ায়, সেনাপ্রধান নাকি প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই খবর ছড়ানোর পর রাজনীতিতে নানা জল্পনা-কল্পনার জন্ম হয়।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়েও বহিরাগতদের হামলার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিতে হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালতে গোলযোগ ও সংঘর্ষ হয়। ঢাকার ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগের মিছিলে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে। ফেনীতে আওয়ামী লীগ মিছিলের প্রস্তুতি নেয়।
তিনি বলেন, এসব ঘটনাগুলো একত্র করলে বোঝা যায়, দেশে যেন একটা সুপরিকল্পিত অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা চলছে।
এর পেছনে কে বা কারা রয়েছে, সেটা এখনো স্পষ্ট না হলেও, উদ্দেশ্যটা পরিষ্কার— রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা নষ্ট করা।’
তিনি আরও বলেন, ‘এর মধ্যেই ছড়ানো হয় যে, সেনাপ্রধান ও প্রধান বিচারপতির মধ্যে বৈঠক হয়েছে। তবে এ বিষয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি— কেউ বলছে হয়েছে, আবার কেউ বলছে হয়নি। সব মিলিয়ে প্রশ্ন ওঠে, সরকার কি এসব ঘটনার বিরুদ্ধে সময়মতো ব্যবস্থা নিতে পারছে না? এত গোলযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ে সহিংসতা— এসব ঠেকানো যাচ্ছে না কেন? ড. ইউনূস কি এখনো সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছেন, না কি তিনি দুর্বল হয়ে পড়েছেন? অনেকেই মনে করছেন, এই গুজব ও পরিকল্পিত গোলযোগের পেছনে একটি উদ্দেশ্য রয়েছে— ড. ইউনূসকে বিতর্কিত ও দুর্বল দেখানো। যেন তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। তার নেতৃত্বে নির্বাচন আয়োজনের ক্ষমতা যেন প্রশ্নবিদ্ধ হয়। অন্যদিকে, কিছু মহল চাইছে নির্বাচন পেছাতে। এজন্য তারা নানা গুজব ও অস্থিরতা তৈরি করছে।
তিনি বলেন, ১৩তম সংশোধনী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টিও আবার আলোচনায় এসেছে। কেউ কেউ বলছেন, আদালতের শুনানির মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনা হবে, যদিও এটা আইনি বাস্তবতায় সম্ভব নয়। কারণ সংসদের মাধ্যমেই নতুন কাঠামো নির্ধারিত হতে পারে, আদালতের পক্ষে সেটা নির্ধারণ করা সম্ভব নয়।
জাহেদ উর রহমান বলেন, এখন সবচেয়ে জরুরি হলো— ড. ইউনূস যেন দায়িত্বে থাকেন এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করে তারপর দায়িত্ব ছাড়েন। কেউ যাতে তাকে জোরপূর্বক সরাতে না পারে।
তিনি আরো বলেন, যারা এই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চান, তারা আসলে দেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামোর বিরুদ্ধেই কাজ করছেন। তাই দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।