রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত বহুল আলোচিত জুলাই জাতীয় সনদ-এর চূড়ান্ত অনুলিপি আজ মঙ্গলবার রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠাচ্ছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। তবে সনদে সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে কোনো সুপারিশ থাকছে না। পরে অন্তর্বর্তী সরকার ও দলগুলোর কাছে এ সংক্রান্ত সুপারিশ দেবে কমিশন।
আগামী শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) এই সনদের স্বাক্ষর অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায়।
সবগুলো দল ও জোট এরই মধ্যে নিজ নিজ প্রতিনিধির নাম নিশ্চিত করেছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (জাতীয় ঐকমত্য কমিশন) মনির হায়দার।
জানা গেছে, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান করবে কমিশন। সেখানে মঞ্চ তৈরির কাজ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রায় তিন হাজার অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে মাগরিবের আগেই স্বাক্ষর শেষ করা হবে। নামাজের বিরতির পর দ্বিতীয় পর্বে প্রজেকশন ম্যাপিংয়ে সনদ তৈরির পটভূমি ভিডিওচিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরা হবে। এতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করারও পরিকল্পনা রয়েছে। তবে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার কথা জানিয়েছেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
কমিশন সূত্র জানায়, এর আগে গত ১১ সেপ্টেম্বর জুলাই সনদের চূড়ান্ত একটি ভাষ্য দলগুলোর কাছে পাঠিয়েছিল ঐকমত্য কমিশন। তাতে আর সংযোজন-বিয়োজন না করার কথা বলা হলেও পরবর্তী সময়ে কিছু ভাষাগত ও বাক্যগত সংশোধন করা হয়েছে। সনদের চূড়ান্ত ভাষ্যের অঙ্গীকারনামায় নোট অব ডিসেন্ট কথা উল্লেখ করার পরিকল্পনা করা হলেও বিতর্ক এড়াতে তা থেকে সরে এসেছে কমিশন। আগের খসড়াই চূড়ান্ত আকার দেওয়ায় আর দলগুলোর মতামত নেওয়া হবে না।
সূত্র মতে, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ‘শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি প্রদর্শন’ সংক্রান্ত সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪ (ক) বিলুপ্ত করার বিষয়ে দলগুলোর মতামত চেয়েছিল কমিশন। এর পক্ষে প্রায় সবগুলো দল মত দিলেও সেটি সনদে থাকছে না। আগে ঐকমত্য হওয়া ৮৪টি প্রস্তাবই রাখা হয়েছে সনদে।
এটি না রাখার ব্যাপারে কমিশনের যুক্তি, অধিকাংশ দল বিধানটি বিলুপ্তির পক্ষে মত দেওয়ায় পরবর্তী সংসদে যারা ক্ষমতায় আসবে, তারাই সেটি বাদ দেবে। এ জন্য নতুন করে সনদে সেটি যুক্ত করার দরকার নেই।
ঐকমত্য কমিশনের দুই ধাপের সংলাপের ভিত্তিতে ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবে একমত হয় দলগুলো। সেগুলো নিয়েই জুলাই জাতীয় সনদ প্রণয়ন করা হয়েছে।
গত জুলাই মাসে সনদ সই করার লক্ষ্য থাকলেও বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে ঐকমত্য না হওয়ায় সেই আনুষ্ঠানিকতা বিলম্বিত হয়। এ সময়ের মধ্যে সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করে কমিশন। এতে গণভোটের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়নে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হলেও গণভোটের ভিত্তি, সময় ও পথ-পদ্ধতি নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে। ফলে দলগুলোর মতামতের সঙ্গে বিশেষজ্ঞদের মতের সমন্বয় করে একটি পদ্ধতি ঠিক করে সরকারকে সুপারিশ করবে কমিশন।