ভারাত ও ইসরায়েল একটি নতুন প্রতিরক্ষা সহযোগিতা সংক্রান্ত ‘সমঝোতা স্মারক (এমওইউ)’ সই করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিয়ন সা’আর।
এনডিটিভিকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে ভারতকে ‘বৈশ্বিক পরাশক্তি’ হিসেবে উল্লেখ করে দুই দেশের গণতন্ত্রের মধ্যে সম্পর্ক এখন ‘আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে শক্তিশালী’ বলেন সা’আর। তিনি জানান, প্রতিরক্ষা ও উদ্ভাবন থেকে শুরু করে সন্ত্রাস দমন ও বাণিজ্যে উভয় দেশের সহযোগিতা বিস্তৃত হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, দুই দেশ একটি নতুন প্রতিরক্ষা সহযোগিতা সংক্রান্ত ‘সমঝোতা স্মারক (এমওইউ)’ সই করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সা’আর বলেন, ‘আমরা প্রতিরক্ষা, কৃষি এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতায় অগ্রসর হচ্ছি, তবে আমাদের সম্পর্ক আরও গভীর করার জন্য সবসময়ই আন্তরিক আগ্রহ রয়েছে।’
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস. জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকের পর এটি ছিল ইসরায়েলি মন্ত্রীর একমাত্র সাক্ষাৎকার, যা মধ্যপ্রাচ্যের অস্থির পরিস্থিতিতে ভারত-ইসরায়েল অংশীদারিত্বের কৌশলগত গুরুত্বকে সামনে নিয়ে আসে। উল্লেখযোগ্যভাবে, এই এমওইউ খসড়াটি তেল আবিবে অনুষ্ঠিত ১৭তম ভারত-ইসরায়েল প্রতিরক্ষা সহযোগিতা যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ (জেডব্লিউজি) বৈঠকে চূড়ান্ত করা হয়।
গাজা শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে সা’আর বলেন, স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হলে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রস্তাবিত পরিকল্পনাকেই বাস্তবসম্মত রোডম্যাপ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘এটি একটি ধাপে ধাপে বাস্তবায়নযোগ্য পরিকল্পনা, এবং ভারতের মতো এক বৈশ্বিক শক্তির এতে সক্রিয় ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী দৃঢ় অবস্থান নেন। তিনি বলেন, ‘আমরা এমন কোনো ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনে সম্মত নই যা আমাদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে।’ তার মতে, গাজা, লেবানন ও ইয়েমেনে ইরান-সমর্থিত সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক এখনো সক্রিয়, যা মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতাকে বিপন্ন করছে।
সা’আর বলেন, ‘ট্রাম্পের পরিকল্পনায় ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র বাধ্যতামূলক নয়; এটি পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে। আমরা অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েছি এবং আর সেই ভুল করব না।’ হামাস নিয়ে তিনি বলেন, ইসরায়েলের লক্ষ্য গোষ্ঠীটির সামরিক সক্ষমতা ধ্বংস করা ও গাজায় তাদের শাসনব্যবস্থা প্রতিস্থাপন করা। তার বক্তব্যে, ‘হামাস এখনো প্রতিদ্বন্দ্বীদের প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে ভয় সৃষ্টি করছে। আমাদের পরিকল্পনা হলো অন্য প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করে এই সন্ত্রাসী শাসনের স্থায়ী অবসান ঘটানো।’
সা’আর বলেন, ভারত ও ইসরায়েল সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে একই রকম কষ্ট ও অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিচ্ছে। তার ভাষায়, ‘সন্ত্রাস সর্বত্র বিদ্যমান, এবং ভারতের জনগণ দুর্ভাগ্যবশত এর ভয়াবহতা খুব ভালোভাবেই জানে।’ তিনি জানান, লস্কর-ই-তৈবা-সহ বিভিন্ন সংগঠনকে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করে উভয় দেশ গোয়েন্দা তথ্য, প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে নিবিড় সহযোগিতা করছে।
তিনি আরও বলেন, প্রতিরক্ষা ও গোয়েন্দা তথ্য আদানপ্রদানের জন্য একটি নতুন কাঠামো তৈরি হচ্ছে, যা দুই দেশের মধ্যে একটি প্রকৃত কৌশলগত অংশীদারিত্বকে প্রতিফলিত করবে। অর্থনৈতিক সহযোগিতা প্রসঙ্গে সা’আর বলেন, ২০২৩ সালের জি-২০ সম্মেলনে ঘোষিত ‘ভারত-মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপ অর্থনৈতিক করিডর (আইএমইসি)’ উদ্যোগটি পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে ইসরায়েল কাজ করছে। তার মতে, যুদ্ধের কারণে কিছুটা বিরতি এলেও এখন দুই দেশ পুনরায় অগ্রগতির জন্য প্রস্তুত।
আদানি গ্রুপের হাইফা বন্দরে বিনিয়োগকে তিনি ‘পারস্পরিক আস্থার প্রতীক’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ‘ইসরায়েলের উন্নত বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেবল আমাদের জনগণকেই নয়, এখানে বিনিয়োগকারীদের সম্পদকেও সুরক্ষা দেয়।’
সাক্ষাৎকারের শেষে সা’আর বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সম্পর্ক ‘অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ও কৌশলগত’। তিনি আশাবাদ প্রকাশ করে বলেন, ‘তাদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা সবসময় উন্মুক্ত এবং ফলপ্রসূ। আমি আশা করি, তারা খুব শিগগিরই আবার বৈঠক করবেন।’
তিনি যোগ করেন, ‘একটি বাস্তব কৌশলগত অংশীদারিত্বের জন্য উভয় দেশের মধ্যে গভীর আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। ভারত ভবিষ্যৎ, আর ইসরায়েল একটি আঞ্চলিক শক্তি—আমরা একসঙ্গে অসাধারণ কিছু অর্জন করতে পারব।’ সা’আর আরও জানান, আগামী বছরের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) সম্মেলনে ইসরায়েল উচ্চ পর্যায়ে অংশগ্রহণ করবে, যা দুই দেশের ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি সহযোগিতার নতুন অধ্যায় সূচনা করবে।

ডিজিটাল ডেস্ক 

























