ময়মনসিংহ , সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ৮ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
সাবেক আইজিপি মামুনের খালাস চেয়ে আপিল হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৯ প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে যেকোনো মূল্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে হবে বললেন প্রধান উপদেষ্টা সাকিব আল হাসান টি-২০তে ৪৫ বার ম্যাচসেরা , ওপরে মাত্র তিনজন ছায়ানট-উদীচীতে হামলা: প্রতিবাদ লন্ডনে গানে গানে অনুমতি দিলো ইসরায়েল পশ্চিম তীরে নতুন ১৯টি বসতি স্থাপনের এখন পুলিশও জরিমানা করবে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে আনতে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যু রিমান্ডে নেওয়ার সময় কারাগারে কার্যক্রম রাকসু জিএস আম্মারের আচরণ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের শামিল জানিয়েছে ছাত্রদল অ্যাটর্নি জেনারেল ধানের শীষে ভোট করার ঘোষণা দিলেন
নোটিশ :
প্রতিটি জেলা- উপজেলায় একজন করে ভিডিও প্রতিনিধি আবশ্যক। যোগাযোগঃ- Email- matiomanuss@gmail.com. Mobile No- 017-11684104, 013-03300539.

এখন পুলিশও জরিমানা করবে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে আনতে

  • ডিজিটাল ডেস্ক
  • আপডেট সময় ১১:৪২:৩০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫
  • ১৬ বার পড়া হয়েছে

চলতি বছরের ২৩ নভেম্বর ‘শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০২৫’ জারি করে অর্ন্তবর্তী সরকার। নতুন নীতিমালার মাধ্যমে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের পাশাপাশি ট্রাফিক সার্জেন্ট কিংবা তার ওপরের পদমর্যাদার ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা সরাসরি জরিমানা করার ক্ষমতা পেয়েছে। পূর্বের বিধিমালায় শুধু ম্যাজিস্ট্রেটদের এই ক্ষমতা দেওয়া থাকায় সীমিত জনবলে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন সম্ভব হচ্ছিল না। ফলে এখন ট্রাফিক পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলেই শব্দদূষণের জন্য জরিমানা করতে পারবেন।

শব্দের মানমাত্রা অতিক্রম করলে সার্জেন্ট বা তার ওপরের পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমানা করতে পারবেন। জরিমানা পরিশোধ করতে না পারলে তৎক্ষণাৎ মোটরযানটি আটক করতে পারবে পুলিশ।

বিধিমালার তফসিল-৩–এ দুই ও তিন চাকার হালকা যানের ক্ষেত্রে অনুমোদিত শব্দের মানমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৫ ডেসিবেল (শব্দ মাপার একক)। অন্যান্য হালকা যান, যেমন মোটরগাড়ি, মাইক্রোবাস, পিকআপ ভ্যানের ক্ষেত্রেও এ মানমাত্রা একই থাকবে। অন্যদিকে মিনিবাস, মাঝারি ট্রাক, মাঝারি কাভার্ড ভ্যানের ক্ষেত্রে এটি নির্ধারণ হয়েছে সর্বোচ্চ ৯০ ডেসিবেল। বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, লরি ও নৌযানের মতো ভারী যানবাহনের ক্ষেত্রে এই সীমা ১০০ ডেসিবেল।

শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালার আওতায় সরকারি কর্তৃপক্ষ কোনো নির্দিষ্ট এলাকাকে ‘নীরব এলাকা’ ঘোষণা করে সেখানে শব্দের মাত্রা ঠিক করে দিতে পারে।

সকাল ছয়টা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত দিন হিসেবে গণ্য হবে। রাতের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে রাত নয়টা থেকে সকাল ছয়টা।

এত দিন পরিবেশ অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ আদালতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে আইন কার্যকর করতেন। এখন পুলিশও সেই ক্ষমতা পেল।

পরিবেশ অধিদপ্তরের ঢাকা মহানগর কার্যালয়ের পরিচালক ও শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ও অংশীদারত্বমূলক প্রকল্পের পরিচালক ফরিদ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, এ বিধিমালায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো পুলিশকে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

ফরিদ আহমেদ বলেন, গত ১৫ ডিসেম্বর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনারসহ ১০০ জন পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করে এ বিধিমালা সম্পর্কে তাঁদের জানিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের হাতে সাউন্ড লেভেল ডিটেক্টর (শব্দের মাত্রা শনাক্তকারী যন্ত্র) দেওয়া হয়েছে।

‘আশা করছি, নাগরিকেরা শব্দদূষণের দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবেন,’ বলেন ফরিদ আহমেদ।

নীরব এলাকায় নির্বাচনী প্রচারে মাইক, লাউডস্পিকার নিষিদ্ধ

জাতীয় নির্বাচনের আগে জারি করা এই বিধিমালায় উচ্চ শব্দ উৎপাদনকারী যন্ত্রপাতি দিয়ে প্রচার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মাইক, লাউডস্পিকার ইত্যাদি ব্যবহার করা যাবে না। নীরব এলাকা ছাড়া অন্যান্য এলাকায়ও তফসিল-১–এর মানমাত্রা অনুসরণ করতে হবে। এই নিয়ম সব নির্বাচনেই খাটবে।

বিধিমালার বিধি-৫–এ রাতের বেলায় জনপরিসরে লাউডস্পিকার, মাইক, সুরযন্ত্র (মিউজিক সিস্টেম), অ্যামপ্লিফায়ার (শব্দের মাত্রা বাড়ায় এমন যন্ত্র) ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অবশ্য লিখিত আবেদন করে পাঁচ ঘণ্টার জন্য রাতের বেলায় নীরব এলাকা ছাড়া এসব যন্ত্রপাতি ব্যবহারের অনুমোদন নিতে পারবেন যে কেউ। তবে রাত ১১টার পর এসব উচ্চ শব্দ উৎপাদনকারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা যাবে না। আর ৯০ ডেসিবেলের বেশি শব্দ করা যাবে না।

গ্রাম, পৌর ও উপজেলা এলাকায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছ থেকে এ অনুমতি নিতে হবে। জেলা সদরে জেলা প্রশাসক ও সিটি করপোরেশন এলাকায় পুলিশ কমিশনারের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে।

বিধিমালা অনুসারে রাতের বেলায় পটকা, আতশবাজি ও অনুরূপ শব্দ তৈরি করে—এমন কোনো কিছুর বিস্ফোরণ ঘটানো যাবে না। বিধিতে প্রাকৃতিক বনাঞ্চল, বনভোজনের বা সামাজিক অনুষ্ঠানের যানবাহনেও শব্দদূষণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

আবাসিক এলাকায় নির্মাণকাজের শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে আবাসিক এলাকা ও আবাসিক এলাকা থেকে ৫০০ মিটারের মধ্যে সন্ধ্যা সাতটা থেকে সকাল সাতটা পর্যন্ত কোনো ধরনের ইট ও পাথর ভাঙার যন্ত্র, মিক্সচার মেশিন, পাইলিং মেশিনসহ মতো বেশি শব্দ করা যন্ত্রপাতি ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে বিধিমালায়।

শব্দদূষণে আক্রান্ত ব্যক্তি টেলিফোনে, লিখিত বা মৌখিক উপায়ে অথবা ই-মেইলে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করতে পারবেন। অভিযোগ পাওয়ার পর সত্যতা যাচাই করে উচ্চ শব্দ উৎপাদনকারী যন্ত্রপাতি আটক করতে পারবেন।

শব্দদূষণের শাস্তি কী

শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে ২০০৬ সালে বিধিমালা জারি করে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। তাতে জনপরিসরে অনুমতি ছাড়া মাইক, লাউডস্পিকার, সাউন্ড সিস্টেম, মিউজিক সিস্টেম, অ্যামপ্লিফায়ার ব্যবহার করলে কিংবা পটকা, আতশবাজি ফুটালে ১ মাস কারাদণ্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। অন্যদিকে সড়কে মোটরযান শব্দের মানমাত্রা অতিক্রম করলে ৩ মাস কারাদণ্ড ও সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হবে। অতিরিক্ত শাস্তি হিসেবে চালকের ১ পয়েন্ট কাটা যাবে।

বাংলাদেশে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার সময় প্রতি চালককে ১০ পয়েন্ট বরাদ্দ দেওয়া হয়, ট্রাফিক আইন ভাঙলে পয়েন্ট কাটা পড়তে থাকে। ১০ পয়েন্ট কাটা পড়লে লাইসেন্স বাতিল হয়ে যায়।

শব্দের মানমাত্রা ছাড়িয়ে যায় এমন হর্ন, হাইড্রোলিক হর্ন, মাল্টিটিউন হর্ন ও সহায়ক যন্ত্র আমদানি, মজুত, বিক্রয়, বাজারজাতকরণ ও প্রদর্শন করলে ১ মাসের কারাদণ্ড, সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।

পুলিশ এখন শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা পাওয়াকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির।

তিনি বলেন, ‘গত বছরের অক্টোবর আর এ বছরের অক্টোবর আমরা শব্দদূষণ নিয়ে সচেতনতা তৈরির কাজ করেছিলাম। তখন আমরা দেখেছি, আইন থাকলেও প্রয়োগ ছিল না। আইনের প্রয়োগ করার কথা ছিল পরিবেশ অধিদপ্তরের। কিন্তু তাদের সে অর্থে কোনো জনবল নেই। ফলে এ সমস্যা দিনের পরদিন বেড়ে চলেছে।’

এই বিধিমালায় পুলিশকে যে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, তার যথাযথ প্রয়োগ হলে ইতিবাচক ফল আশা করা যায়, বলেন তিনি।

দূষণ নিয়ন্ত্রণে বাসস্টেশন, টার্মিনালে চালকদের মধ্যে সচেতনতা তৈরির উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেন আলমগীর কবির। তিনি আরও বলেন, হাইড্রোলিক হর্ন আমদানি কারা করছে, বাজারজাত কোথায় হচ্ছে, তার ওপরও শক্তিশালী পর্যবেক্ষণ দরকার।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

সাবেক আইজিপি মামুনের খালাস চেয়ে আপিল

এখন পুলিশও জরিমানা করবে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে আনতে

আপডেট সময় ১১:৪২:৩০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫

চলতি বছরের ২৩ নভেম্বর ‘শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০২৫’ জারি করে অর্ন্তবর্তী সরকার। নতুন নীতিমালার মাধ্যমে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের পাশাপাশি ট্রাফিক সার্জেন্ট কিংবা তার ওপরের পদমর্যাদার ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা সরাসরি জরিমানা করার ক্ষমতা পেয়েছে। পূর্বের বিধিমালায় শুধু ম্যাজিস্ট্রেটদের এই ক্ষমতা দেওয়া থাকায় সীমিত জনবলে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন সম্ভব হচ্ছিল না। ফলে এখন ট্রাফিক পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলেই শব্দদূষণের জন্য জরিমানা করতে পারবেন।

শব্দের মানমাত্রা অতিক্রম করলে সার্জেন্ট বা তার ওপরের পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমানা করতে পারবেন। জরিমানা পরিশোধ করতে না পারলে তৎক্ষণাৎ মোটরযানটি আটক করতে পারবে পুলিশ।

বিধিমালার তফসিল-৩–এ দুই ও তিন চাকার হালকা যানের ক্ষেত্রে অনুমোদিত শব্দের মানমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৫ ডেসিবেল (শব্দ মাপার একক)। অন্যান্য হালকা যান, যেমন মোটরগাড়ি, মাইক্রোবাস, পিকআপ ভ্যানের ক্ষেত্রেও এ মানমাত্রা একই থাকবে। অন্যদিকে মিনিবাস, মাঝারি ট্রাক, মাঝারি কাভার্ড ভ্যানের ক্ষেত্রে এটি নির্ধারণ হয়েছে সর্বোচ্চ ৯০ ডেসিবেল। বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, লরি ও নৌযানের মতো ভারী যানবাহনের ক্ষেত্রে এই সীমা ১০০ ডেসিবেল।

শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালার আওতায় সরকারি কর্তৃপক্ষ কোনো নির্দিষ্ট এলাকাকে ‘নীরব এলাকা’ ঘোষণা করে সেখানে শব্দের মাত্রা ঠিক করে দিতে পারে।

সকাল ছয়টা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত দিন হিসেবে গণ্য হবে। রাতের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে রাত নয়টা থেকে সকাল ছয়টা।

এত দিন পরিবেশ অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ আদালতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে আইন কার্যকর করতেন। এখন পুলিশও সেই ক্ষমতা পেল।

পরিবেশ অধিদপ্তরের ঢাকা মহানগর কার্যালয়ের পরিচালক ও শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ও অংশীদারত্বমূলক প্রকল্পের পরিচালক ফরিদ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, এ বিধিমালায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো পুলিশকে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

ফরিদ আহমেদ বলেন, গত ১৫ ডিসেম্বর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনারসহ ১০০ জন পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করে এ বিধিমালা সম্পর্কে তাঁদের জানিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের হাতে সাউন্ড লেভেল ডিটেক্টর (শব্দের মাত্রা শনাক্তকারী যন্ত্র) দেওয়া হয়েছে।

‘আশা করছি, নাগরিকেরা শব্দদূষণের দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবেন,’ বলেন ফরিদ আহমেদ।

নীরব এলাকায় নির্বাচনী প্রচারে মাইক, লাউডস্পিকার নিষিদ্ধ

জাতীয় নির্বাচনের আগে জারি করা এই বিধিমালায় উচ্চ শব্দ উৎপাদনকারী যন্ত্রপাতি দিয়ে প্রচার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মাইক, লাউডস্পিকার ইত্যাদি ব্যবহার করা যাবে না। নীরব এলাকা ছাড়া অন্যান্য এলাকায়ও তফসিল-১–এর মানমাত্রা অনুসরণ করতে হবে। এই নিয়ম সব নির্বাচনেই খাটবে।

বিধিমালার বিধি-৫–এ রাতের বেলায় জনপরিসরে লাউডস্পিকার, মাইক, সুরযন্ত্র (মিউজিক সিস্টেম), অ্যামপ্লিফায়ার (শব্দের মাত্রা বাড়ায় এমন যন্ত্র) ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অবশ্য লিখিত আবেদন করে পাঁচ ঘণ্টার জন্য রাতের বেলায় নীরব এলাকা ছাড়া এসব যন্ত্রপাতি ব্যবহারের অনুমোদন নিতে পারবেন যে কেউ। তবে রাত ১১টার পর এসব উচ্চ শব্দ উৎপাদনকারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা যাবে না। আর ৯০ ডেসিবেলের বেশি শব্দ করা যাবে না।

গ্রাম, পৌর ও উপজেলা এলাকায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছ থেকে এ অনুমতি নিতে হবে। জেলা সদরে জেলা প্রশাসক ও সিটি করপোরেশন এলাকায় পুলিশ কমিশনারের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে।

বিধিমালা অনুসারে রাতের বেলায় পটকা, আতশবাজি ও অনুরূপ শব্দ তৈরি করে—এমন কোনো কিছুর বিস্ফোরণ ঘটানো যাবে না। বিধিতে প্রাকৃতিক বনাঞ্চল, বনভোজনের বা সামাজিক অনুষ্ঠানের যানবাহনেও শব্দদূষণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

আবাসিক এলাকায় নির্মাণকাজের শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে আবাসিক এলাকা ও আবাসিক এলাকা থেকে ৫০০ মিটারের মধ্যে সন্ধ্যা সাতটা থেকে সকাল সাতটা পর্যন্ত কোনো ধরনের ইট ও পাথর ভাঙার যন্ত্র, মিক্সচার মেশিন, পাইলিং মেশিনসহ মতো বেশি শব্দ করা যন্ত্রপাতি ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে বিধিমালায়।

শব্দদূষণে আক্রান্ত ব্যক্তি টেলিফোনে, লিখিত বা মৌখিক উপায়ে অথবা ই-মেইলে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করতে পারবেন। অভিযোগ পাওয়ার পর সত্যতা যাচাই করে উচ্চ শব্দ উৎপাদনকারী যন্ত্রপাতি আটক করতে পারবেন।

শব্দদূষণের শাস্তি কী

শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে ২০০৬ সালে বিধিমালা জারি করে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। তাতে জনপরিসরে অনুমতি ছাড়া মাইক, লাউডস্পিকার, সাউন্ড সিস্টেম, মিউজিক সিস্টেম, অ্যামপ্লিফায়ার ব্যবহার করলে কিংবা পটকা, আতশবাজি ফুটালে ১ মাস কারাদণ্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। অন্যদিকে সড়কে মোটরযান শব্দের মানমাত্রা অতিক্রম করলে ৩ মাস কারাদণ্ড ও সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হবে। অতিরিক্ত শাস্তি হিসেবে চালকের ১ পয়েন্ট কাটা যাবে।

বাংলাদেশে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার সময় প্রতি চালককে ১০ পয়েন্ট বরাদ্দ দেওয়া হয়, ট্রাফিক আইন ভাঙলে পয়েন্ট কাটা পড়তে থাকে। ১০ পয়েন্ট কাটা পড়লে লাইসেন্স বাতিল হয়ে যায়।

শব্দের মানমাত্রা ছাড়িয়ে যায় এমন হর্ন, হাইড্রোলিক হর্ন, মাল্টিটিউন হর্ন ও সহায়ক যন্ত্র আমদানি, মজুত, বিক্রয়, বাজারজাতকরণ ও প্রদর্শন করলে ১ মাসের কারাদণ্ড, সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।

পুলিশ এখন শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা পাওয়াকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির।

তিনি বলেন, ‘গত বছরের অক্টোবর আর এ বছরের অক্টোবর আমরা শব্দদূষণ নিয়ে সচেতনতা তৈরির কাজ করেছিলাম। তখন আমরা দেখেছি, আইন থাকলেও প্রয়োগ ছিল না। আইনের প্রয়োগ করার কথা ছিল পরিবেশ অধিদপ্তরের। কিন্তু তাদের সে অর্থে কোনো জনবল নেই। ফলে এ সমস্যা দিনের পরদিন বেড়ে চলেছে।’

এই বিধিমালায় পুলিশকে যে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, তার যথাযথ প্রয়োগ হলে ইতিবাচক ফল আশা করা যায়, বলেন তিনি।

দূষণ নিয়ন্ত্রণে বাসস্টেশন, টার্মিনালে চালকদের মধ্যে সচেতনতা তৈরির উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেন আলমগীর কবির। তিনি আরও বলেন, হাইড্রোলিক হর্ন আমদানি কারা করছে, বাজারজাত কোথায় হচ্ছে, তার ওপরও শক্তিশালী পর্যবেক্ষণ দরকার।