অনলাইন নিউজ:
‘মাদ্রাসায় বেত দিয়ে ম্যাডাম আমাকে মেরেছে। বেতটা বাঁ চোখে লেগেছে। এরপর অনেক ব্যথা শুরু হয়। এখন চোখে দেখছি না। আমি পড়তে চাই, আমার চোখ লাগবে।’ মায়ের কোলে বসে এসব কথা বলছিল সদ্য মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়া সাত বছরের শিশু মোহাম্মদ আয়াতুল ইসলাম। সে প্রশ্ন করছিল, ‘মা, আমি কি আর চোখে দেখব না?’ এ প্রশ্ন শুনে মায়ের চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছিল বেদনার জল। কোনো উত্তর দিতে পারছিলেন না মা স্বপ্না আক্তার।বোয়ালখালী উপজেলার পোপাদিয়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে আয়াতুলদের বাড়ি।
কিছুদিন আগেও বাড়ি মাথায় তুলে রাখা ছেলেটা এখন নিস্তেজ, চোখের যন্ত্রণায় কাতর। তার সে উচ্ছলতা এখন থেমে গেছে। চোখ দিয়ে পানি ঝরছে। রাতে-দিনে ঘুমাতে পারছে না। কেন এমন হলো জানতে পেছনে ফিরে যেতে হবে । চলতি বছরে জানুয়ারিতে ছেলে উপজেলার জোটপুকুরপাড় এলাকার বাগে সিরিকোট তাহফিজুল কোরআন আইডিয়াল মাদ্রাসায় হেফজ বিভাগে ভর্তি করেন বাবা মো.সাজ্জাদ হোসেন মা স্বপ্না আক্তার। তাঁরা জানান সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল । শুরুতে বাসা থেকে মাদ্রাসায় ছেলেকে আনা–নেওয়া করতেন। এরপর কয়েক মাস ধরে মাদ্রাসায় থাকছে ছেলেটা। গত ২৬ মে পড়া না পারার কারণে ছেলেকে বেদম মার দেন মাদ্রাসার শিক্ষিকা। বাঁ চোখে বেতের আঘাত লাগে। কিন্তু এ ঘটনা তাঁরা জেনেছেন আরও পরে।
আমার চোখ লাগবে ‘আমি পড়তে চাই-
মো. সাজ্জাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, গত ২৮ মে নাশতা নিয়ে ছেলেকে দেখতে যান তাঁরা। তখন মাদ্রাসা থেকে বলা হয়, আয়াতুলের চোখে রক্ত উঠে লাল হয়ে গেছে। তাই দেখা করা যাবে না। এরপর তাঁরা চলে আসেন। পরদিন ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে হঠাৎ বাড়িতে এসে হাজির হয় ছেলে। তারপর ঘটনা জানাজানি হয়।সাজ্জাদ বলেন, ভোরে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো.মহিউদ্দিন মাহমুদ বাসায় হাজির হন । ছেলে জ্বর উঠেছে বলে দ্রুত বের হয়ে যান । ছেলে জানায় পড়া না পারার কারণে তাকে মারধর করা হয় । চোখে ড্রপ দেওয়া হয়। এমনকি মারধরের বিষয়টি কাউকে না জানানোর জন্য ভয়ও দেখানো হয়েছে।
পরে ছেলেকে নিয়ে মাদ্রাসায় গেলে অধ্যক্ষ বলেন, ছেলের চোখে রক্ত উঠেছিল। ড্রপ দেওয়া হয়েছে। মারধর করা হয়নি।বাড়িতে আসার পর শুরু হয় আয়াতুলের চিকিৎসার তোড়জোড়। চট্টগ্রামের পাহাড়তলী চক্ষু হাসপাতালে চোখে সার্জারি হয় । চিকিৎসক বরাত দিয়ে সাজ্জাদ বলেন ছেলে বাঁ চোখে দুটি সার্জারি হয় । সে চোখে দেখছে না। চিকিৎসকে জানিয়েছে বাঁ চোখে দেখতে পারবে না সে। এটি ফেলে দিতে হবে। মো.সাজ্জাদ হোসেন স্থানীয় প্রসাধনী বিক্রি দোকানে চাকরি করেন। বেতন পান সাকল্যে ৯ হাজার টাকা । তিনি জানান ছেলের চিকিৎসার জন্য ইতিমধ্যে ৬০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়ে গেছে। জমানো টাকা ভেঙে খরচ করেছেন। এখন আর হাতে কোনো টাকাপয়সা নেই। কিন্তু চিকিৎসা শেষ হয়নি। দীর্ঘদিন ধুরে দুই চোখের চিকিৎসা করতে হবে। এ ছাড়া মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ এখনো ছেলের কোনো খোঁজ নেয়নি।
আমার চোখ লাগবে ‘আমি পড়তে চাই-
ঘটনায় কোথাও লিখিত অভিযোগ করেছেন কি না, জানতে চাইলে মো.সাজ্জাদ হোসেন বলেন ২৪ জুন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেছেন । দুই পক্ষে সঙ্গে কথা বলেছে। পাশাপাশি ছেলের সঙ্গে কথা বলেছে ।মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেছে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মহিউদ্দিন মাহমুদ। তার দাবি আয়াতুলকে কেউ মারধর করেননি। সে খেলতে গিয়ে ব্যথা পেয়েছে। তার মা–বাবা মিথ্যা বলছেন। এ ছাড়া তাঁদের আর্থিকভাবে সহযোগিতা করা হয়েছে। টাকাপয়সার জন্য এসব কথা বলছেন।