ময়মনসিংহ , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :
প্রতিটি জেলা- উপজেলায় একজন করে ভিডিও প্রতিনিধি আবশ্যক। যোগাযোগঃ- Email- matiomanuss@gmail.com. Mobile No- 017-11684104, 013-03300539.

ঝালকাটির অধিকাংশ এলাকা পানির নিচে- চরম দুর্ভোগ

  • Reporter Name
  • আপডেট সময় ১১:৪৮:৫৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৭ মে ২০২৪
  • ১২৭ বার পড়া হয়েছে

সংগৃহিত ছবি

অনলাইন নিউজ-

টানা ঝড়-বৃষ্টির রাত শেষ হলেও ঝালকাঠিতে থামেনি দুযোগপূর্ণ আবহাওয়া। দমকা বাতাস আর বৃষ্টির সঙ্গে জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে গেছে নদীতীরবর্তী শহর এবং গ্রামের অধিকাংশ এলাকা। জেলা শহরের সুগন্ধা নদী পাড়ের পৌরসভা খেয়াঘাট, কাঠপট্টি, কলাবাগান, সুতালড়িসহ এলাকাগুলো কোমর সমান পানিতে তলিয়ে গেছে। নদীর পানি বেড়েছে ৫ থেকে ৭ ফুট।

চরাঞ্চলের বাসিন্দাদের ঘরে ঘরে এখন কোমর পানি। একই সঙ্গে দমকা বাতাস আর বৃষ্টিতে চরম দুরাবস্থা বিরাজ করছে। রবিবার রাত দেড়টা থেকে শুরু হওয়া ঝড়ো হাওয়া, বৃষ্টি আর পানির বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। জেলার শতাধিক গ্রামের মানুষ এখন পানিবন্দি হয়ে আছে।ঘর থেকে বের হতে পারছেন না তারা। তিন হাজারেরও বেশি মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। রাত থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

ঝড়ো হাওয়ায় বিভিন্ন স্থানে প্রায় দুই শতাধিক গাছ উপড়ে পড়েছে। এতে সড়ক অনেক স্থানেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। জেলার দুর্গম এলাকা কাঁঠালিয়াতে উপজেলা পরিষদের মধ্যেও পানি ঢুকে পড়েছে। পানিতে তলিয়ে আছে রাস্তাঘাট, বসতঘর, মাছের ঘের ও ফসলের মাঠ। এতে লাখ লাখ টাকার মাছ পানিতে ভেসে গেছে বলে ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।

ঝালকাঠি শহরের পৌরসভা খেয়াঘাট এলাকার বাসিন্দা নুপুর বেগম বলেন, আমার বসতঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। রাতে আমরা আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়েছি, সকালে এসে দেখি ঘরের মালামাল সব পানিতে ডুবে আছে। এখনো পানি নামছে না। সব মালামাল নষ্ট হয়ে যাবে। একই এলাকার মাসুম হোসেন বলেন, রাত তিনটার দিকে আশ্রয় কেন্দ্রে গেছি। ঘরের মধ্যে পানি ঢুকে পড়েছে। মালামাল রেখেইে আশ্রয় কেন্দ্রে চলে আসছি। এখন পানির কারণে ঘরের মধ্যে যাওয়া যাচ্ছে না।

নলছিটির মালিপুর গ্রামের মো. হাবিবুর রহমান বলেন, আমি খেটে খাওয়া মানুষ। আমার ঘরের মধ্যে হাঁটুসমান পানি উঠছে। এখন মালামাল সব ভিজে যাচ্ছে। রান্না, খাওয়া দাওয়ার কোনো ব্যবস্থা করতে পারিনি। কেউ সাহায্যও দেয়নি।একই গ্রামের আব্দুল বারেক বলেন, ঘরের মধ্যে পানি ঢুকে পড়েছে, তাই গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছি। এখন অন্যের বাড়িতে গরু রাখার জন্য বন্যার মধ্যেই ঘর থেকে বের হয়েছি।

শহরের ব্যবসায়ী তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, আমার বসতঘর ও দোকানে পানি উঠে গেছে। ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছুই বন্ধ। এখন ঘরেও কোনো খাবার নেই। পরিবার পরিজন নিয়ে কোথায় যাবো।কাঁঠালিয়া উপজেলার লঞ্চঘাট এলাকার বাসিন্দা নুরুল হক বলেন, রাতেই আমার ঘরে পানি উঠছে। এখানে কোনো বেড়িবাঁধ নেই, তাই জোয়ার হলেই পানি ওঠে। এখন বন্যার পানিতে কোমরসমান তলিয়ে আছে। ঘরের মালামাল কিছুই রক্ষা করতে পারবো না, সবই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

ঝালকাটির অধিকাংশ এলাকা পানির নিচে- চরম দুর্ভোগ

ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম নিলয় পাশা বলেন, সুগন্ধা ও বিষখালী নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে পাঁচ-ছয় ফুট পানি বিপৎসীমার ওপর থেকে প্রবাহিত হচ্ছে। পানিতে তলিয়ে আছে অসংখ্য বাড়ি-ঘর। আজকের দিনের মধ্যে পানি কমলে মানুষের ক্ষতি কম হবে। ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক ফারাহ গুল নিঝুম বলেন, আমরা পর্যাপ্ত আশ্রয় কেন্দ্র খুলে রেখেছি। এখনো যারা আসেনি, তারা এখানে আসতে পারেন। আশ্রয় কেন্দ্রে খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। জেলায় নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। অনেকের বাবা-বাড়িতে পানি উঠেছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে জেলা প্রশাসন থাকবে।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

ঝালকাটির অধিকাংশ এলাকা পানির নিচে- চরম দুর্ভোগ

আপডেট সময় ১১:৪৮:৫৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৭ মে ২০২৪

অনলাইন নিউজ-

টানা ঝড়-বৃষ্টির রাত শেষ হলেও ঝালকাঠিতে থামেনি দুযোগপূর্ণ আবহাওয়া। দমকা বাতাস আর বৃষ্টির সঙ্গে জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে গেছে নদীতীরবর্তী শহর এবং গ্রামের অধিকাংশ এলাকা। জেলা শহরের সুগন্ধা নদী পাড়ের পৌরসভা খেয়াঘাট, কাঠপট্টি, কলাবাগান, সুতালড়িসহ এলাকাগুলো কোমর সমান পানিতে তলিয়ে গেছে। নদীর পানি বেড়েছে ৫ থেকে ৭ ফুট।

চরাঞ্চলের বাসিন্দাদের ঘরে ঘরে এখন কোমর পানি। একই সঙ্গে দমকা বাতাস আর বৃষ্টিতে চরম দুরাবস্থা বিরাজ করছে। রবিবার রাত দেড়টা থেকে শুরু হওয়া ঝড়ো হাওয়া, বৃষ্টি আর পানির বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। জেলার শতাধিক গ্রামের মানুষ এখন পানিবন্দি হয়ে আছে।ঘর থেকে বের হতে পারছেন না তারা। তিন হাজারেরও বেশি মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। রাত থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

ঝড়ো হাওয়ায় বিভিন্ন স্থানে প্রায় দুই শতাধিক গাছ উপড়ে পড়েছে। এতে সড়ক অনেক স্থানেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। জেলার দুর্গম এলাকা কাঁঠালিয়াতে উপজেলা পরিষদের মধ্যেও পানি ঢুকে পড়েছে। পানিতে তলিয়ে আছে রাস্তাঘাট, বসতঘর, মাছের ঘের ও ফসলের মাঠ। এতে লাখ লাখ টাকার মাছ পানিতে ভেসে গেছে বলে ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।

ঝালকাঠি শহরের পৌরসভা খেয়াঘাট এলাকার বাসিন্দা নুপুর বেগম বলেন, আমার বসতঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। রাতে আমরা আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়েছি, সকালে এসে দেখি ঘরের মালামাল সব পানিতে ডুবে আছে। এখনো পানি নামছে না। সব মালামাল নষ্ট হয়ে যাবে। একই এলাকার মাসুম হোসেন বলেন, রাত তিনটার দিকে আশ্রয় কেন্দ্রে গেছি। ঘরের মধ্যে পানি ঢুকে পড়েছে। মালামাল রেখেইে আশ্রয় কেন্দ্রে চলে আসছি। এখন পানির কারণে ঘরের মধ্যে যাওয়া যাচ্ছে না।

নলছিটির মালিপুর গ্রামের মো. হাবিবুর রহমান বলেন, আমি খেটে খাওয়া মানুষ। আমার ঘরের মধ্যে হাঁটুসমান পানি উঠছে। এখন মালামাল সব ভিজে যাচ্ছে। রান্না, খাওয়া দাওয়ার কোনো ব্যবস্থা করতে পারিনি। কেউ সাহায্যও দেয়নি।একই গ্রামের আব্দুল বারেক বলেন, ঘরের মধ্যে পানি ঢুকে পড়েছে, তাই গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছি। এখন অন্যের বাড়িতে গরু রাখার জন্য বন্যার মধ্যেই ঘর থেকে বের হয়েছি।

শহরের ব্যবসায়ী তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, আমার বসতঘর ও দোকানে পানি উঠে গেছে। ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছুই বন্ধ। এখন ঘরেও কোনো খাবার নেই। পরিবার পরিজন নিয়ে কোথায় যাবো।কাঁঠালিয়া উপজেলার লঞ্চঘাট এলাকার বাসিন্দা নুরুল হক বলেন, রাতেই আমার ঘরে পানি উঠছে। এখানে কোনো বেড়িবাঁধ নেই, তাই জোয়ার হলেই পানি ওঠে। এখন বন্যার পানিতে কোমরসমান তলিয়ে আছে। ঘরের মালামাল কিছুই রক্ষা করতে পারবো না, সবই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

ঝালকাটির অধিকাংশ এলাকা পানির নিচে- চরম দুর্ভোগ

ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম নিলয় পাশা বলেন, সুগন্ধা ও বিষখালী নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে পাঁচ-ছয় ফুট পানি বিপৎসীমার ওপর থেকে প্রবাহিত হচ্ছে। পানিতে তলিয়ে আছে অসংখ্য বাড়ি-ঘর। আজকের দিনের মধ্যে পানি কমলে মানুষের ক্ষতি কম হবে। ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক ফারাহ গুল নিঝুম বলেন, আমরা পর্যাপ্ত আশ্রয় কেন্দ্র খুলে রেখেছি। এখনো যারা আসেনি, তারা এখানে আসতে পারেন। আশ্রয় কেন্দ্রে খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। জেলায় নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। অনেকের বাবা-বাড়িতে পানি উঠেছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে জেলা প্রশাসন থাকবে।