যুদ্ধ শেষ করার পদক্ষেপ না নিলে আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে পারে রাশিয়া, এমনকি তার সঙ্গে যারা বাণিজ্য করে তাদের বিরুদ্ধেও দ্বিতীয় ধাপে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। খবর বিবিসির।
এ ছাড়া ট্রাম্প জানিয়েছেন যে রাশিয়া ও ইউক্রেনের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাতের ‘ভালো সম্ভাবনা’ রয়েছে। সেইসঙ্গে তিনি দাবি করেছেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে মার্কিন প্রতিনিধিদের ‘খুব ভালো আলোচনা’ হয়েছে।
এর আগে প্রেসিডেন্ট পুতিন এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের মধ্যে আলোচনা সম্পর্কে একটি অস্পষ্ট বিবৃতি জারি করে ক্রেমলিন। একজন পররাষ্ট্রনীতি সহকারী বলেন, মস্কোতে ‘গঠনমূলক’ আলোচনার অংশ হিসেবে উভয়পক্ষ ‘একটি সংকেত’ বিনিময় করেছে।
এই আলোচনাকে সামনে রেখে আমেরিকা কিছু ইউরোপীয় মিত্রের সঙ্গেও আলোচনা করেছে। নিজের ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে ট্রাম্পের এই পোস্টের পরই বুধবার ওভাল অফিসে মন্তব্য করেন ট্রাম্প।
তিনি বলেছেন, সবাই একমত যে এই যুদ্ধ অবশ্যই শেষ হবে এবং আমরা আগামী দিন বা সপ্তাহগুলোতে সেই লক্ষ্যে কাজ করব।
হোয়াইট হাউস বিবিসিকে আরও জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে রাশিয়া এবং তিনি প্রেসিডেন্ট পুতিন ও জেলেনস্কি উভয়ের সাথেই দেখা করতে প্রস্তুত।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ইতোমধ্যে বলেছেন, তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে উইটকফের সফর সম্পর্কে কথা বলেছেন, ইউরোপীয় নেতারাও এই আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন।
জেলেনস্কি অবশ্য আগেই সতর্ক করেছেন যে রাশিয়া কেবল তখনই শান্তির দিকে এগোতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেবে যদি তার অর্থ ফুরিয়ে যেতে শুরু করে।
ট্রাম্প বলেছেন, যুদ্ধ শেষ করার পদক্ষেপ না নিলে আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে পারে রাশিয়া। এমনকি যারা রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য করে তাদের বিরুদ্ধেও দ্বিতীয় ধাপে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার কথাও বলেন তিনি।
মস্কো এবং কিয়েভের মধ্যে আলোচনায় তেমন অগ্রগতি না হওয়ায় ট্রাম্পের বিরক্তি সত্ত্বেও বুধবার পুতিন এবং উইটকফের মধ্যে বেশ সৌহার্দ্যপূর্ণ আলোচনা হয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে।
উইটকফের মস্কো ত্যাগের কিছুক্ষণ পরেই হোয়াইট হাউস জানায়, রাশিয়ার তেল কেনার জন্য ট্রাম্প ভারতের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন, যা ২৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। এর ফলে ভারতের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক দাঁড়াবে ৫০ শতাংশে।
ইউক্রেনের কত মানুষ রাশিয়ার যুদ্ধযন্ত্রের হাতে মারা যাচ্ছে, তা নিয়ে ভারত চিন্তিত নয় বলে অভিযোগ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এদিকে, ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার হুমকি সত্ত্বেও রাশিয়া ইউক্রেনের ওপর বড় আকারে বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। তাই শুক্রবারের মধ্যে এ বিষয়ে একটি সমাধানে পৌঁছানোর সম্ভাবনা একেবারে কম বলেই মনে করা হচ্ছে।
জানুয়ারিতে ক্ষমতা গ্রহণের আগে ট্রাম্প বলেছিলেন, একদিনের মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ শেষ করতে সক্ষম হবেন তিনি। কিন্তু সংঘাত আরো তীব্র আকার ধারণ করেছে এবং একইসাথে মস্কোর প্রতিও তার বক্তব্য তখন থেকে আরও তীব্র হয়েছে।
গত মাসে তিনি বলেছিলেন, আমরা ভেবেছিলাম যে আমরা (যুদ্ধ) বহুবার মীমাংসা করেছি, অথচ তারপরই প্রেসিডেন্ট পুতিন আক্রমণ আরও বাড়িয়ে দিলেন। কিয়েভের মতো কোনো শহরে রকেট হামলা শুরু করেন এবং একটি নার্সিং হোম বা অন্য অনেক জায়গায় প্রচুর মানুষকে হত্যা করেন।
মস্কোর পূর্ণ আক্রমণ শুরুর সাড়ে তিন বছর পর ইস্তাম্বুলে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে তিন দফা আলোচনাও এই যুদ্ধের সমাপ্তি টানতে ব্যর্থ হয়েছে।
শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য মস্কো যে সামরিক ও রাজনৈতিক পূর্বশর্ত দিয়েছে, সেটি কিয়েভ এবং তার পশ্চিমা অংশীদারদের কাছে অগ্রহণযোগ্য। ক্রেমলিন বারবার জেলেনস্কি ও পুতিনের মধ্যে বৈঠকের জন্য কিয়েভের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে।
এদিকে, মঙ্গলবার জেলেনস্কি এবং ট্রাম্পের মধ্যে একটি ফোনালাপের পর ইউক্রেনের কাছে অতিরিক্ত ২০০ মিলিয়ন ডলার (১৫০ মিলিয়ন পাউন্ড) সামরিক বিক্রয় অনুমোদন করেছে মার্কিন প্রশাসন, যেখানে দুই নেতা প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এবং ড্রোন উৎপাদন নিয়েও আলোচনা করেছেন।
ইউক্রেন রাশিয়ার শোধনাগার এবং জ্বালানি সুবিধাগুলোতে আঘাত করার জন্য ড্রোন ব্যবহার করছে, অন্যদিকে মস্কো ইউক্রেনের শহরগুলোকে লক্ষ্য করেই তার বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে।
কিয়েভ শহরের সামরিক প্রশাসন জানিয়েছে, গত সপ্তাহে শহরটিতে হামলায় আহত আরও একজনের মৃত্যু হওয়ায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩২ জনে দাঁড়িয়েছে। আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে এটি কিয়েভের ওপর সবচেয়ে মারাত্মক হামলাগুলোর মধ্যে একটি বলেও উল্লেখ করা হচ্ছে।
ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ বুধবার জানিয়েছে, জাপোরিঝিয়া কেন্দ্রীয় অঞ্চলে একটি ছুটির ক্যাম্পে রাশিয়ার হামলায় দুজন নিহত এবং ১২ জন আহত হয়েছেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, এই হামলার কোনো সামরিক অর্থ নেই। কেবল নিষ্ঠুরতার মাধ্যমে মানুষকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।