গত বুধবার (২১ মে) দুপুরে যশোর ডিসি অফিসে এ ঘটনা ঘটে। পরে খবর পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ডিসি অফিসের কর্মচারীদের হাতে আটক হওয়া পাঁচ শিক্ষার্থী যশোর শহরের মুসলিম একাডেমি, জিলা স্কুল ও যশোর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী বলে জানা গেছে।
এক পর্যায়ে প্রতিবন্ধী ওই ব্যক্তি সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে কটুকথা বলেন। তখন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের কর্মচারীরা তাকে হৈ-চৈ করতে নিষেধ করলে বাগ্বিতণ্ডার সূত্রপাত হয়। তর্কের এক পর্যায়ে প্রতিবন্ধী ওই ব্যক্তি স্ক্র্যাচ দিয়ে বাবুল আক্তার নামে এক কর্মচারীকে মাথায় আঘাত করে। বাবুল আক্তারকে বাঁচাতে আসলে আরেক কর্মচারীর গায়ে কামড় দিয়ে বসেন। এ ঘটনার পর অন্য কর্মচারীরা এসেও ওই প্রতিবন্ধীকে মারধর করে।
- হট্টগোলের আওয়াজ শুনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাশে আড্ডা দেওয়া ১০ থেকে ১৫ শিক্ষার্থী প্রতিবন্ধীর পক্ষ নিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করতে এগিয়ে আসে। তখন ডিসি অফিসের কর্মচারীদের সঙ্গে তাদের কথা কাটাকাটি হয়। এরপর কয়েকজন শিক্ষার্থী বাঁশ দিয়ে জেলা প্রশাসকের নেজারত শাখায় হামলা করে এবং ভাংচুরের চেষ্টা করে। এ সময় কর্মচারীরা পাঁচজনকে নেজারত শাখাতে আটকে রাখে। সবশেষ পুলিশ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের অফিস সহকারী আবু হাসান বলেন, ‘প্রতিবন্ধী লোকটি এসেছিল কার্ডের জন্য। আমরা তাকে বুঝিয়েছি। তিনি তারপরও চিৎকার করে গালিগালাজ করতে শুরু করেন। তাকে বলি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে স্যারেরা আছে, চুপ করেন। তারপরও গালিগালাজ দিতেই থাকে। তার কাছে গেলে সে আমাদের এক সহকর্মীর মাথায় আঘাত করে। এরপর আমি ঠেকাতে গেলে আমাকেও মারধর শুরু করে; শেষে কামড় দেয়। পরে অফিসের সবাই মিলে তাকে নিচে নামিয়ে দেয়। আমরা প্রতিবন্ধীকে মারধর করিনি। কিন্তু এ ঘটনার জেরে শিক্ষার্থীরা আমাদের উপর হামলা চালায়।’
শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের গোলযোগের এক ফাঁকে প্রতিবন্ধী ওই ব্যক্তি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বর ত্যাগ করেন বলেন স্থানীয়রা জানান। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিবন্ধী ব্যক্তির নাম মনিরুল। তিনি চাঁচড়া এলাকার খোরশেদের ছেলে।
নেজারত শাখার প্রশাসনিক কর্মকর্তা শাহিদুজ্জামান বলেন, ‘১০-১৫ জন শিক্ষার্থী আমাদের কক্ষে হামলা চালায়। তাদের মধ্যে একজনের হাতে বাঁশ ছিল। সে আমাদের কক্ষের দরজা ও জানালায় আঘাত করে। এগুলো রড দিয়ে বানানো বলে ভাঙচুরের দৃশ্যত ক্ষত হয়নি। এমনকি তারা আমাদের কক্ষে এসেও কয়েকজনের উপর হামলা চালায়। পাঁচজনকে আটকে রাখতে পারলেও বাকিরা পালিয়ে যায়।’
আটক হওয়া পাঁচ শিক্ষার্থী জানান,‘আমরা ডিসি অফিস চত্বরে বসে ছিলাম। দেখি অসহায় প্রতিবন্ধী একটা মানুষকে মারধর করছে কিছু লোক। এসে শুনি তারা জেলা প্রশাসকের কর্মচারী। তাই আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছি। প্রতিবন্ধীর দোষ ছিল কিনা সেটা জানি না। তবে হামলা করা ভুল হয়েছে বলে তারা গণমাধ্যমের কাছে ভুল স্বীকার করেছেন ওই পাঁচ শিক্ষার্থী।
যশোর কোতয়ালী মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক বাবুল হোসেন বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। সেখানে আটক থাকা পাঁচ শিক্ষার্থীকে জেলা প্রশাসক আজহারুল ইসলামের অফিস রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই বিকেল ৪টার দিকে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের মুচলেকা নিয়ে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।