ময়মনসিংহ , রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :
প্রতিটি জেলা- উপজেলায় একজন করে ভিডিও প্রতিনিধি আবশ্যক। যোগাযোগঃ- Email- matiomanuss@gmail.com. Mobile No- 017-11684104, 013-03300539.

নগরমুখী মানুষের সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে

  • Reporter Name
  • আপডেট সময় ০৩:০০:৩৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪
  • ১৫০ বার পড়া হয়েছে

সংগৃহীত ছবি

দেশে নগরমুখী মানুষের সংখ্যা অস্বাভাবিক গতিতে বাড়ছে। বর্তমানে দেশের ৩৩ শতাংশ মানুষের বাস শহরে। বিশেষ করে ঢাকা শহরে এই হার মাত্রাতিরিক্ত। বড় শহরগুলো ছাড়া অন্যত্র নাগরিক সুবিধা তেমন না থাকায় দেশের প্রত্যেক এলাকার মানুষ নগরমুখী হচ্ছে। বর্তমানে ৫ কোটিরও বেশি মানুষ নগরে বাস করে। ফলে সেবা সংস্থা প্রয়োজনীয় নাগরিক সেবা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। এতে শহরের পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকছে না। বসবাসের অযোগ্য শহর হিসাবে পরিগণিত হয়েছে রাজধানী ঢাকা। তারপরও ঢাকামুখী মানুষের স্রোত থেমে নেই। পদ্মা ও যমুনা নদীর ওপর সেতু তৈরি হলেও রাজধানী ছাড়া অন্য এলাকাগুলোতে সেভাবে কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে না।

সরকার গ্রামে শহরের সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য আমার গ্রাম আমার শহর প্রকল্প গ্রহণ করলেও অগ্রগতির চিত্র সন্তোষজনক নয়। প্রতিনিয়ত ঢাকা ও আশপাশের এলাকা থেকে কৃষিজমি, জলাশয়, লেক ভরাট করে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। নগর গবেষকরা দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় নগর নীতিমালা প্রণয়নের দাবি জানিয়ে এলেও সেটা আলোর মুখ দেখেনি। ফলে ঢাকা শহর একটি উন্মুক্ত বস্তিতে পরিণত হতে চলেছে। এ অবস্থার অবসানে দ্রুত বিকেন্দ্রীকরণের বিকল্প নেই।

নগর গবেষণা কেন্দ্রের ৫২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে শনিবার রাজধানীর শিল্ককলা একাডেমিতে আয়োজিত ‘নগরায়ণে বাংলাদেশ ও নগর পরিবেশ’ শিরোনামে দিনব্যাপী সম্মেলনে বিশিষ্টজনরা এমন অভিমত ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানের তিনটি পর্বে বিশেষজ্ঞ ও বিশিষ্টজনরা পাঁচটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এসব প্রবন্ধে ঢাকা শহরে বাসযোগ্যতার নাজুক চিত্র ফুটে ওঠে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।

শহরমুখী জনস্রোত বাড়ছে : নগর গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান এমিরেটাস অধ্যাপক অধ্যাপক নজরুল ইসলাম তার ‘বাংলাদেশের নগরায়ণ ও ঢাকার প্রাধান্য’ শীর্ষক প্রবন্ধে বলেন, বাংলাদেশের সূচনালগ্নে ১৯৭১ সালে ৭ শতাংশ মানুষ নগরে বাস করত। ২০০১ সালে তা ২৩ দশমিক ১০ শতাংশ হয়। ২০২২ সালে তা ৩১ দশমিক ৫১ শতাংশে দাঁড়ায়। এই জনসংখ্যার পরিমাণ ৫ কোটি ২০ লাখ ১০ হাজার। ২০৪১ সালের মধ্যেই নগরে জনসংখ্যার হার ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যেতে পারে।

বাসযোগ্যতা হারিয়েছে ঢাকা : এক সময় পুরোনো শহরের আভিজাত্য আর নতুন স্থাপনার সহজ সৌন্দর্য মিলে ঢাকা হয়ে উঠেছিল একটি দৃষ্টিনন্দন নগর। বর্তমানে সেই শহর বাসযোগ্যতার দিক থেকে বিশ্বের ১৪০টি শহরের মধ্যে অবস্থান ১৩৭তম। ঢাকা শহরের ৬২ শতাংশ ভূমিতে কেবল ভবন আর ভবন। এর মধ্যে ৩৭ শতাংশই অপরিকল্পিত আবাসন গড়ে উঠেছে। যানজট, পরিবেশ দূষণের পরিণতি ভোগ করতে হচ্ছে। নানা সমস্যায় জর্জরিত ঢাকা শহর বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।

গত সাত বছরে রাজধানীর তাপমাত্রা বেড়েছে সাড়ে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াম। ২০১৭ সলে ঢাকার গড় তাপমাত্রা ছিল ৩৩ দশমিক ০৪ ডিগ্রি। চলতি বছরে তা ৩৬ দশমিক ৯৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়েছে। বর্তমানে রাজধানীতে আরেক আতঙ্কের নাম মিথেন গ্যাস। ঢাকার মাতুয়াইলের স্যানিটারি ল্যান্ডফিল থেকে বিপুল পরিমাণে মিথেন গ্যাস নিঃসরণের তথ্য মিলেছে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, শহরমুখী অভিবাসন শুধু বাংলাদেশ নয় বড় বড় দেশও এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। সত্যিকার অর্থে ঢাকা শহরকে বসবাস উপযোগী করতে চাইলে পরিকল্পিতভাবে কাজ করতে হবে। জোর করে নগরায়ণ বন্ধ করা যাবে না। ছোট শহরগুলোতে যদি গ্যাস-পানি দেওয়া না যায়, তাহলে গাজীপুরে চাপ দিয়ে কারখানা নির্মাণ বন্ধ করা যাবে না। এখন মানুষের আয় বেড়েছে। সরকারি চাকরিজীবীদেরও বেতন বেড়েছে। এ কারণে কেউ ঢাকার বাইরে থাকতে চায় না। মানুষ যাতে শহরে থাকতে নিরুৎসাহিত হয়, এ জন্য গুলশান-বনানীর মতো জায়গায় পানি-গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর চিন্তা করা হচ্ছে। পরিকল্পিত নগরায়ণের লক্ষ্যে দ্রুত জাতীয় নগর নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে।

অর্থনীতিবিদ এমিরেটাস অধ্যাপক আতিউর রহমান বলেন, নগর মানেই কেবল ভূমির ব্যবস্থা নয়। পাশাপাশি জাতি গঠন করতে চিত্তের স্বাধীনতা থাকতে হবে। কিন্তু যেভাবে নগর গড়ে উঠছে, সেটাকে আদর্শ নগর বলা যাচ্ছে না।

নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আকতার মাহমুদ বলেন, আমরা বরাবরই বিকেন্দ্রীকরণের কথা বলে আসছি। ইউনিয়ন, উপজেলা, পৌরসভাকে শক্তিশালী করা গেলে স্বয়ংক্রিয় বিকেন্দ্রীকরণ হয়ে যাবে।

 

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

নগরমুখী মানুষের সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে

আপডেট সময় ০৩:০০:৩৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪

দেশে নগরমুখী মানুষের সংখ্যা অস্বাভাবিক গতিতে বাড়ছে। বর্তমানে দেশের ৩৩ শতাংশ মানুষের বাস শহরে। বিশেষ করে ঢাকা শহরে এই হার মাত্রাতিরিক্ত। বড় শহরগুলো ছাড়া অন্যত্র নাগরিক সুবিধা তেমন না থাকায় দেশের প্রত্যেক এলাকার মানুষ নগরমুখী হচ্ছে। বর্তমানে ৫ কোটিরও বেশি মানুষ নগরে বাস করে। ফলে সেবা সংস্থা প্রয়োজনীয় নাগরিক সেবা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। এতে শহরের পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকছে না। বসবাসের অযোগ্য শহর হিসাবে পরিগণিত হয়েছে রাজধানী ঢাকা। তারপরও ঢাকামুখী মানুষের স্রোত থেমে নেই। পদ্মা ও যমুনা নদীর ওপর সেতু তৈরি হলেও রাজধানী ছাড়া অন্য এলাকাগুলোতে সেভাবে কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে না।

সরকার গ্রামে শহরের সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য আমার গ্রাম আমার শহর প্রকল্প গ্রহণ করলেও অগ্রগতির চিত্র সন্তোষজনক নয়। প্রতিনিয়ত ঢাকা ও আশপাশের এলাকা থেকে কৃষিজমি, জলাশয়, লেক ভরাট করে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। নগর গবেষকরা দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় নগর নীতিমালা প্রণয়নের দাবি জানিয়ে এলেও সেটা আলোর মুখ দেখেনি। ফলে ঢাকা শহর একটি উন্মুক্ত বস্তিতে পরিণত হতে চলেছে। এ অবস্থার অবসানে দ্রুত বিকেন্দ্রীকরণের বিকল্প নেই।

নগর গবেষণা কেন্দ্রের ৫২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে শনিবার রাজধানীর শিল্ককলা একাডেমিতে আয়োজিত ‘নগরায়ণে বাংলাদেশ ও নগর পরিবেশ’ শিরোনামে দিনব্যাপী সম্মেলনে বিশিষ্টজনরা এমন অভিমত ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানের তিনটি পর্বে বিশেষজ্ঞ ও বিশিষ্টজনরা পাঁচটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এসব প্রবন্ধে ঢাকা শহরে বাসযোগ্যতার নাজুক চিত্র ফুটে ওঠে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।

শহরমুখী জনস্রোত বাড়ছে : নগর গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান এমিরেটাস অধ্যাপক অধ্যাপক নজরুল ইসলাম তার ‘বাংলাদেশের নগরায়ণ ও ঢাকার প্রাধান্য’ শীর্ষক প্রবন্ধে বলেন, বাংলাদেশের সূচনালগ্নে ১৯৭১ সালে ৭ শতাংশ মানুষ নগরে বাস করত। ২০০১ সালে তা ২৩ দশমিক ১০ শতাংশ হয়। ২০২২ সালে তা ৩১ দশমিক ৫১ শতাংশে দাঁড়ায়। এই জনসংখ্যার পরিমাণ ৫ কোটি ২০ লাখ ১০ হাজার। ২০৪১ সালের মধ্যেই নগরে জনসংখ্যার হার ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যেতে পারে।

বাসযোগ্যতা হারিয়েছে ঢাকা : এক সময় পুরোনো শহরের আভিজাত্য আর নতুন স্থাপনার সহজ সৌন্দর্য মিলে ঢাকা হয়ে উঠেছিল একটি দৃষ্টিনন্দন নগর। বর্তমানে সেই শহর বাসযোগ্যতার দিক থেকে বিশ্বের ১৪০টি শহরের মধ্যে অবস্থান ১৩৭তম। ঢাকা শহরের ৬২ শতাংশ ভূমিতে কেবল ভবন আর ভবন। এর মধ্যে ৩৭ শতাংশই অপরিকল্পিত আবাসন গড়ে উঠেছে। যানজট, পরিবেশ দূষণের পরিণতি ভোগ করতে হচ্ছে। নানা সমস্যায় জর্জরিত ঢাকা শহর বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।

গত সাত বছরে রাজধানীর তাপমাত্রা বেড়েছে সাড়ে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াম। ২০১৭ সলে ঢাকার গড় তাপমাত্রা ছিল ৩৩ দশমিক ০৪ ডিগ্রি। চলতি বছরে তা ৩৬ দশমিক ৯৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়েছে। বর্তমানে রাজধানীতে আরেক আতঙ্কের নাম মিথেন গ্যাস। ঢাকার মাতুয়াইলের স্যানিটারি ল্যান্ডফিল থেকে বিপুল পরিমাণে মিথেন গ্যাস নিঃসরণের তথ্য মিলেছে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, শহরমুখী অভিবাসন শুধু বাংলাদেশ নয় বড় বড় দেশও এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। সত্যিকার অর্থে ঢাকা শহরকে বসবাস উপযোগী করতে চাইলে পরিকল্পিতভাবে কাজ করতে হবে। জোর করে নগরায়ণ বন্ধ করা যাবে না। ছোট শহরগুলোতে যদি গ্যাস-পানি দেওয়া না যায়, তাহলে গাজীপুরে চাপ দিয়ে কারখানা নির্মাণ বন্ধ করা যাবে না। এখন মানুষের আয় বেড়েছে। সরকারি চাকরিজীবীদেরও বেতন বেড়েছে। এ কারণে কেউ ঢাকার বাইরে থাকতে চায় না। মানুষ যাতে শহরে থাকতে নিরুৎসাহিত হয়, এ জন্য গুলশান-বনানীর মতো জায়গায় পানি-গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর চিন্তা করা হচ্ছে। পরিকল্পিত নগরায়ণের লক্ষ্যে দ্রুত জাতীয় নগর নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে।

অর্থনীতিবিদ এমিরেটাস অধ্যাপক আতিউর রহমান বলেন, নগর মানেই কেবল ভূমির ব্যবস্থা নয়। পাশাপাশি জাতি গঠন করতে চিত্তের স্বাধীনতা থাকতে হবে। কিন্তু যেভাবে নগর গড়ে উঠছে, সেটাকে আদর্শ নগর বলা যাচ্ছে না।

নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আকতার মাহমুদ বলেন, আমরা বরাবরই বিকেন্দ্রীকরণের কথা বলে আসছি। ইউনিয়ন, উপজেলা, পৌরসভাকে শক্তিশালী করা গেলে স্বয়ংক্রিয় বিকেন্দ্রীকরণ হয়ে যাবে।