এর মধ্যে ত্রিদেশীয় বৈঠক শেষ হয়েছে। খুব শিগগির নেপালের ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে। পাঁচ বছরের জন্য নেপালের ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চূড়ান্ত চুক্তি করেছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। যদিও ২৫ বছর নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা সরকারের।
বিপিডিবি সূত্রে জানা গেছে, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় অবস্থিত এইচভিডিসি সাবস্টেশনের অব্যবহৃত ক্যাপাসিটি ব্যবহার করে ভারতীয় গ্রিডের মাধ্যমে আসবে নেপালের এই জলবিদ্যুৎ। নেপালের ন্যাশনাল ইলেকট্রিক অথরিটি এবং বিপিডিবির মধ্যে ট্যারিফ নির্ধারণ শেষ হয়েছে। একই সঙ্গে ভারতের সঞ্চালন চার্জ ও ট্রেডিং মার্জিন চূড়ান্ত হয়েছে।বিপিডিবির তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রতি ইউনিটে খরচ হচ্ছে ১৪ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ২২ টাকা ৩৮ পয়সা পর্যন্ত। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকেও ইউনিটপ্রতি উৎপাদন খরচ হচ্ছে ১০ টাকার বেশি। সে তুলনায় নেপালের জলবিদ্যুৎ সাশ্রয়ী।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ত্রিপক্ষীয় বৈঠক ও দর-কাষাকষি শেষে নেপাল থেকে ভারতের মুজাফফরপুর সাবস্টেশন পর্যন্ত প্রতি ইউনিট এনার্জি ট্যারিফ নির্ধারণ করা হয়েছে ৬.৪০ মার্কিন সেন্টস। প্রতি ডলারের দাম ১১৭ টাকা হিসাব করলে বাংলাদেশি সাড়ে সাত টাকা হয়। ভারতে ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কম্পানি এনপিটিপিসি, বিদ্যুৎ ভেপার নিগাম লিমিটেডের (এনভিভিএন) ট্রেডিং মার্জিন ট্যারিফ নির্ধারণ করা হয়েছে ভারতীয় রুপিতে ০.০৫৯৫ রুপি। গত ২১ মার্চের হিসাবে প্রতি রুপি এক টাকা ৪১ পয়সা হিসাব করলে টাকায় দাঁড়ায় ৮৪ পয়সা। এ ছাড়া রয়েছে ভারতের সেন্ট্রাল ইলেকট্রিসিটি রেগুলেটরি কমিশনের নির্ধারিত ট্রান্সমিশন চার্জ। সব কিছু নিয়ে নেপালের জলবিদ্যুৎ দেশে আনতে ইউনিটপ্রতি খরচ পড়বে ৯ টাকার মতো।
বিদ্যুৎ ক্রয়ের এ প্রস্তাবটি সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে উপস্থাপনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘সব পক্ষের আলোচনা শেষে এখন নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে। চলতি বছরের মধ্যেই আমদানি শুরু হবে। নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করতে হলে ভারতের ওপর দিয়ে তাদের সঞ্চালন লাইন ব্যবহার করতে হবে। ভারত এতে সম্মত রয়েছে।’
বিপিডিবি সূত্র জানায়, ত্রিপক্ষীয় চুক্তির ফলে দুই দিক থেকেই লাভবান হবে বাংলাদেশ। যেমন শীতের যে সময়ে বাংলাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা কমে যায়, তখন নেপালে থাকে শুষ্ক মৌসুম। দেশটির তখন বিদ্যুতের বাড়তি চাহিদা থাকে। ওই সময় নেপাল বরং বাংলাদেশ থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করতে পারবে।এদিকে অনুষ্ঠিত ৩০তম অর্থনৈতিক বিষয় সম্পর্কিত মন্ত্রিসভা কমিটিতেও নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়টি অনুমোদন দেওয়া হয়। মন্ত্রিসভা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিপিডিবি সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ কিনবে।
নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ আমদানির বিষয়টি চূড়ান্ত করেছে সরকার। নেপালের সঙ্গে বাংলাদেশের সরাসরি সীমান্ত না থাকায় দেশটি থেকে বিদ্যুৎ আমদানির ক্ষেত্রে ভারতীয় সঞ্চালন লাইন ব্যবহার করতে হবে। ফলে নেপালের বিদ্যুৎ আমদানি করতে ভারতকে দিতে হবে ট্রেডিং মার্জিন ও সঞ্চালন চার্জ। ভারত, নেপাল ও বাংলাদেশ ত্রিপক্ষীয় বৈঠক শেষে আমদানির বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে।
পাঁচ বছরে ব্যয় হবে ৬৫০ কোটি টাকা -নেপালের জলবিদ্যুৎ আমদানিতে
জানা গেছে, নেপাল ও বাংলাদেশ ২০১৮ সালে বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতার একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। নেপাল ও ভারতে বিদ্যুৎ বিক্রির সুযোগ রেখে নেপালের সুঙ্কোশি-৩ প্রকল্পে বিনিয়োগ করবে বাংলাদেশ।
ভারত থেকে আমদানি হচ্ছে ২৬৫৬ মেগাওয়াট
২০১৩-১৪ অর্থবছরে প্রথম ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি শুরু করে বাংলাদেশ। বর্তমানে ভারত থেকে দুই হাজার ৬৫৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছে সরকার। ভারতের বহরমপুর থেকে ভেড়ামারা সাবস্টেশনের মাধ্যমে প্রায় এক হাজার মেগাওয়াট এবং কুমিল্লা দিয়ে ভারতের সূর্যনগর থেকে আরো ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। বাংলাদেশে রপ্তানির জন্য ভারতের ঝাড়খণ্ডে আদানি গ্রুপ নির্মাণ করেছে এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াটের দুই ইউনিটের বিদ্যুৎকেন্দ্র। ভারতের বেসরকারি কম্পানির এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকেও দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছে সরকার।