ময়মনসিংহ , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :
প্রতিটি জেলা- উপজেলায় একজন করে ভিডিও প্রতিনিধি আবশ্যক। যোগাযোগঃ- Email- matiomanuss@gmail.com. Mobile No- 017-11684104, 013-03300539.

শিশুর অপুষ্টির প্রতিকার সম্পর্কে জানুন।

  • স্টাফ রিপোর্টার
  • আপডেট সময় ০৮:০৫:৩২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪
  • ২৯ বার পড়া হয়েছে

শিশু গর্ভে আসার পর থেকে জন্ম-পরবর্তী এক হাজার দিন পর্যন্ত সময়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়টাতে শিশু অপুষ্টির শিকার হয় বেশি এবং এর খেসারত দিতে হয় সারা জীবন। অর্থাৎ এই সময় অপুষ্টিতে ভুগলে বয়স অনুযায়ী শিশুর ওজন কম হয়, খর্বাকৃতি হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে, শারীরিক গঠন থাকে কৃশকায় এবং শিশুটি খাদ্যপ্রাণ-খনিজ ঘাটতির শিকার হয়।যা ঘটতে পারে

গর্ভধারণের প্রথম তিন মাসের মধ্যে নানা ধরনের জীবাণুর সংস্পর্শ শিশুদের দৈহিক ও মানসিক বিকাশে সমস্যা তৈরি হয়।
অপুষ্টি বোঝার উপায়

শিশুর অপুষ্টি বোঝাতে শুধু হীনস্বাস্থ্য নির্দেশ করে না, বরং স্থূলকায় বা অত্যধিক ওজনের শিশুও পুষ্টিহীনতার শিকার বলে গণ্য হতে পারে। কোনো কোনো শিশুর অপুষ্টি সমস্যা গর্ভাবস্থায় শুরু হয়। ফলে সেই শিশু পূর্ণ গর্ভকালের আগে অকালজাত (প্রিটার্ম) কিংবা স্বল্প জন্মওজন (জন্মওজন ২৫০০ গ্রামের কম) নিয়ে ভূমিষ্ঠ হয়।

কোনো শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে কি না এটা বোঝার কিছু মাপকাঠি রয়েছে। যেমন—

 

বয়স অনুপাতে শিশুর দৈর্ঘ্য বা উচ্চতা মাপুন : এতে শিশুটি শিশুর দীর্ঘমেয়াদি অপুষ্টির শিকার বা খর্বকায় কি না, তা বোঝা যায়।

বয়স অনুযায়ী ওজন নির্ণয় : বয়স অনুযায়ী কাঙ্ক্ষিত ওজন না থাকলে শিশুটি অপুষ্টিতে ভুগছে ধরে নিতে হবে।

মধ্যবাহুর পরিধি নির্ণয় : ছয় মাস থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুর দ্রুত অপুষ্টি নির্ণয়ে এই পরিমাপ ব্যবহার করা হয়। জন্ম থেকে এক বছরের মধ্যে মধ্যবাহুর পরিধির পরিমাপ ১১ থেকে ১২ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বাড়ে। এরপর পাঁচ বছর বয়সী পুষ্ট শিশুর মধ্যবাহুর পরিধি ১৬-১৭ সেন্টিমিটারে গিয়ে দাঁড়ায়। এই মাপ যদি স্বাভাবিকের চেয়ে ৮০ শতাংশ কম হয় অর্থাৎ ১২.৮ সেন্টিমিটারের মতো হয়, তাহলে বুঝতে হবে শিশু মাঝারি থেকে গুরুতর অপুষ্টিতে ভুগছে।

বয়স ও লিঙ্গ অনুপাতে বিএমআই : এর মাধ্যমে শিশু কী কৃশকায়, অতিরিক্ত ওজনের অথবা স্থূলকায় কি না তা জানা যায়।

অপুষ্টিতে আক্রান্ত এসব শিশু যেসব অভাবে ভোগে তা হলো—

ভিটামিন ‘এ’-র ঘাটতি : ভিটামিন ‘এ’-র ঘাটতির কারণে শিশু অন্ধত্ব, ঘন ঘন অসুখে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুঝুঁকিতে পড়ে।

আয়োডিনের অভাব : এই সমস্যায় গর্ভপাত, শিশুর খর্বাকৃতি ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধিতার ঝুঁকি বাড়ে।

আয়রন ঘাটতিজনিত রক্তাল্পতা : এর কারণে শিশুর লেখাপড়ায় মনোযোগে সমস্যা, ক্লান্তি ভাব, হজমের সমস্যা, বৃদ্ধির বিকাশ ব্যাহত হওয়া ইত্যাদি হতে পারে।

জিংক ঘাটতি : জিংকের ঘাটতির কারণে শিশুর ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও অন্যান্য সংক্রামক রোগে ভোগা, উচ্চতায় খাটো হওয়া ইত্যাদি ঝুঁকি বেড়ে যায়।
করণীয়

শিশু জীবনের প্রথম এক হাজার দিনে যাতে অপুষ্টিতে না ভোগে সে জন্য কিছু করণীয় হলো :

 

► শিশুটি ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে ছয় মাস বয়স পর্যন্ত নয়, বরং পূর্ণ দুই বছর বুকের দুধ পান করান।

► ছয় মাস বয়স থেকে মায়ের দুধের পাশাপাশি যথেষ্ট পরিমাণ ও নিরাপদভাবে তৈরি পরিপূরক খাবার শিডিউল মেনে খাওয়ানোর চেষ্টা করুন।

► শিশুকে ঘরে তৈরি সুষম খাবারে সব ধরনের খাদ্যপ্রাণের উপস্থিতি নিশ্চিত করুন। এতে শিশু তার প্রতিদিনের খাবারে সব ধরনের ভিটামিন ও মিনারেলসের জোগান পাবে। এই বয়সে এ রকম যথার্থ একটা খাবার হলো খিচুড়ি।

► প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শে গর্ভবতী মাকে আয়রন ও ফলিক এসিড দিন। ছোট শিশুকেও ভিটামিন ‘এ’, আয়রন, জিংক ইত্যাদি দিন।

► ডায়রিয়াকালীন ও ডায়রিয়া-পরবর্তী শিশুকে দুই সপ্তাহের জন্য দৈনিক ১০-২০ মিলিগ্রাম জিংক দিন।

► খাবার যেন আয়োডিনযুক্ত থাকে তা নিশ্চিত করুন।

► গর্ভকালে মাকে অতিরিক্ত কায়িক পরিশ্রম এড়িয়ে চলতে পরামর্শ দিন।

► শিশুকে সময়মতো সব টিকা দিন।

► সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশে রাখার চেষ্টা করুন। নিরাপদ পানীয় ও হাইজিনের ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। সাবান-পানিতে শিশুর হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

► ম্যালেরিয়াপ্রবণ অঞ্চলে গর্ভবতী মা এবং ৩ থেকে ৫৯ মাস বয়সের শিশুর ম্যালেরিয়া প্রতিরোধক যাবতীয় ব্যবস্থা নিন।

► ১৮ বছর পূর্ণ না হলে গর্ভধারণ করবেন না। দুটি গর্ভধারণকালের মধ্যে কমপক্ষে দুই বছরের বিরতি রাখুন।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

শিশুর অপুষ্টির প্রতিকার সম্পর্কে জানুন।

আপডেট সময় ০৮:০৫:৩২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪

শিশু গর্ভে আসার পর থেকে জন্ম-পরবর্তী এক হাজার দিন পর্যন্ত সময়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়টাতে শিশু অপুষ্টির শিকার হয় বেশি এবং এর খেসারত দিতে হয় সারা জীবন। অর্থাৎ এই সময় অপুষ্টিতে ভুগলে বয়স অনুযায়ী শিশুর ওজন কম হয়, খর্বাকৃতি হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে, শারীরিক গঠন থাকে কৃশকায় এবং শিশুটি খাদ্যপ্রাণ-খনিজ ঘাটতির শিকার হয়।যা ঘটতে পারে

গর্ভধারণের প্রথম তিন মাসের মধ্যে নানা ধরনের জীবাণুর সংস্পর্শ শিশুদের দৈহিক ও মানসিক বিকাশে সমস্যা তৈরি হয়।
অপুষ্টি বোঝার উপায়

শিশুর অপুষ্টি বোঝাতে শুধু হীনস্বাস্থ্য নির্দেশ করে না, বরং স্থূলকায় বা অত্যধিক ওজনের শিশুও পুষ্টিহীনতার শিকার বলে গণ্য হতে পারে। কোনো কোনো শিশুর অপুষ্টি সমস্যা গর্ভাবস্থায় শুরু হয়। ফলে সেই শিশু পূর্ণ গর্ভকালের আগে অকালজাত (প্রিটার্ম) কিংবা স্বল্প জন্মওজন (জন্মওজন ২৫০০ গ্রামের কম) নিয়ে ভূমিষ্ঠ হয়।

কোনো শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে কি না এটা বোঝার কিছু মাপকাঠি রয়েছে। যেমন—

 

বয়স অনুপাতে শিশুর দৈর্ঘ্য বা উচ্চতা মাপুন : এতে শিশুটি শিশুর দীর্ঘমেয়াদি অপুষ্টির শিকার বা খর্বকায় কি না, তা বোঝা যায়।

বয়স অনুযায়ী ওজন নির্ণয় : বয়স অনুযায়ী কাঙ্ক্ষিত ওজন না থাকলে শিশুটি অপুষ্টিতে ভুগছে ধরে নিতে হবে।

মধ্যবাহুর পরিধি নির্ণয় : ছয় মাস থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুর দ্রুত অপুষ্টি নির্ণয়ে এই পরিমাপ ব্যবহার করা হয়। জন্ম থেকে এক বছরের মধ্যে মধ্যবাহুর পরিধির পরিমাপ ১১ থেকে ১২ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বাড়ে। এরপর পাঁচ বছর বয়সী পুষ্ট শিশুর মধ্যবাহুর পরিধি ১৬-১৭ সেন্টিমিটারে গিয়ে দাঁড়ায়। এই মাপ যদি স্বাভাবিকের চেয়ে ৮০ শতাংশ কম হয় অর্থাৎ ১২.৮ সেন্টিমিটারের মতো হয়, তাহলে বুঝতে হবে শিশু মাঝারি থেকে গুরুতর অপুষ্টিতে ভুগছে।

বয়স ও লিঙ্গ অনুপাতে বিএমআই : এর মাধ্যমে শিশু কী কৃশকায়, অতিরিক্ত ওজনের অথবা স্থূলকায় কি না তা জানা যায়।

অপুষ্টিতে আক্রান্ত এসব শিশু যেসব অভাবে ভোগে তা হলো—

ভিটামিন ‘এ’-র ঘাটতি : ভিটামিন ‘এ’-র ঘাটতির কারণে শিশু অন্ধত্ব, ঘন ঘন অসুখে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুঝুঁকিতে পড়ে।

আয়োডিনের অভাব : এই সমস্যায় গর্ভপাত, শিশুর খর্বাকৃতি ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধিতার ঝুঁকি বাড়ে।

আয়রন ঘাটতিজনিত রক্তাল্পতা : এর কারণে শিশুর লেখাপড়ায় মনোযোগে সমস্যা, ক্লান্তি ভাব, হজমের সমস্যা, বৃদ্ধির বিকাশ ব্যাহত হওয়া ইত্যাদি হতে পারে।

জিংক ঘাটতি : জিংকের ঘাটতির কারণে শিশুর ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও অন্যান্য সংক্রামক রোগে ভোগা, উচ্চতায় খাটো হওয়া ইত্যাদি ঝুঁকি বেড়ে যায়।
করণীয়

শিশু জীবনের প্রথম এক হাজার দিনে যাতে অপুষ্টিতে না ভোগে সে জন্য কিছু করণীয় হলো :

 

► শিশুটি ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে ছয় মাস বয়স পর্যন্ত নয়, বরং পূর্ণ দুই বছর বুকের দুধ পান করান।

► ছয় মাস বয়স থেকে মায়ের দুধের পাশাপাশি যথেষ্ট পরিমাণ ও নিরাপদভাবে তৈরি পরিপূরক খাবার শিডিউল মেনে খাওয়ানোর চেষ্টা করুন।

► শিশুকে ঘরে তৈরি সুষম খাবারে সব ধরনের খাদ্যপ্রাণের উপস্থিতি নিশ্চিত করুন। এতে শিশু তার প্রতিদিনের খাবারে সব ধরনের ভিটামিন ও মিনারেলসের জোগান পাবে। এই বয়সে এ রকম যথার্থ একটা খাবার হলো খিচুড়ি।

► প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শে গর্ভবতী মাকে আয়রন ও ফলিক এসিড দিন। ছোট শিশুকেও ভিটামিন ‘এ’, আয়রন, জিংক ইত্যাদি দিন।

► ডায়রিয়াকালীন ও ডায়রিয়া-পরবর্তী শিশুকে দুই সপ্তাহের জন্য দৈনিক ১০-২০ মিলিগ্রাম জিংক দিন।

► খাবার যেন আয়োডিনযুক্ত থাকে তা নিশ্চিত করুন।

► গর্ভকালে মাকে অতিরিক্ত কায়িক পরিশ্রম এড়িয়ে চলতে পরামর্শ দিন।

► শিশুকে সময়মতো সব টিকা দিন।

► সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশে রাখার চেষ্টা করুন। নিরাপদ পানীয় ও হাইজিনের ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। সাবান-পানিতে শিশুর হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

► ম্যালেরিয়াপ্রবণ অঞ্চলে গর্ভবতী মা এবং ৩ থেকে ৫৯ মাস বয়সের শিশুর ম্যালেরিয়া প্রতিরোধক যাবতীয় ব্যবস্থা নিন।

► ১৮ বছর পূর্ণ না হলে গর্ভধারণ করবেন না। দুটি গর্ভধারণকালের মধ্যে কমপক্ষে দুই বছরের বিরতি রাখুন।