রাজধানীর অন্যতম সুরক্ষিত এলাকা সচিবালয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। বুধবার গভীর রাতে ৭ নম্বর ভবনের ষষ্ঠ তলায় আগুন লাগে। রাত ১টা ৫২ মিনিটে শুরু হওয়া এ আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিটকে কাজ করতে হয়েছে প্রায় ১০ ঘণ্টা। তবে পুরো ঘটনাটি নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে—এটি কি দুর্ঘটনা, নাকি ষড়যন্ত্র?
সচিবালয়ের ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তদন্ত করা হচ্ছে। ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, কেউ রাতের বেলা ভবনে প্রবেশ করেছিল কি না বা অগ্নিকাণ্ডটি ইচ্ছাকৃতভাবে ঘটানো হয়েছে কি না। পাশাপাশি আগুনের উৎস এবং কীভাবে এটি এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল, তা খতিয়ে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
সচিবালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ এবং নিরাপত্তারক্ষিত এলাকায় এত বড় অগ্নিকাণ্ড অনেকেই স্বাভাবিকভাবে নিতে পারছেন না। বিশেষ করে ভবনের দুই প্রান্তে আগুন ধরে যাওয়া, মাঝখানে কোনো ক্ষতি না হওয়া, এবং আগুনের দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ার বিষয়গুলো সন্দেহ সৃষ্টি করছে। ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, বৈদ্যুতিক তারের মাধ্যমে আগুন ছড়াতে পারে, তবে এ ধরনের ঘটনাগুলো সাধারণত রাসায়নিক সংযোগের কারণেও হতে পারে।
অগ্নিকাণ্ডের শুরুতেই সচিবালয়ের নিজস্ব ফায়ার ইউনিটের সদস্যরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করলেও ভবনের কলাপসিবল গেট তালাবদ্ধ থাকায় তারা ভিতরে ঢুকতে পারেননি। পরে তালা কাটার যন্ত্রপাতি দিয়ে প্রবেশ করা হয়। এর মধ্যেই আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল জানান, ভবনের প্রতিটি কক্ষ তালাবদ্ধ থাকায় বাইরে থেকে পানি দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছিল। বড় ফায়ার ট্রাকগুলো সচিবালয়ে প্রবেশ করতে না পারায় নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে দীর্ঘ সময় লাগে।
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম এই ঘটনাকে ষড়যন্ত্র এবং পরিকল্পিত বলে অভিহিত করেছেন। তিনি দাবি করেন, ‘সচিবালয়ে থাকা সরকারের দুর্নীতি এবং অপকর্মের গুরুত্বপূর্ণ ফাইল ধ্বংস করার জন্যই এই আগুন লাগানো হয়েছে।’
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে উচ্চপর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, তদন্তের আগে এ ঘটনাকে দুর্ঘটনা বা নাশকতা বলে চিহ্নিত করা যাবে না।
এক ফায়ারফাইটার জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে আগুন নেভানোর কাজ করলেও সচিবালয়ের এই অগ্নিকাণ্ড তার কাছে অস্বাভাবিক মনে হয়েছে। ভবনের দুই প্রান্তে আগুন জ্বললেও মাঝের অংশ অক্ষত ছিল, যা সাধারণত রাসায়নিক আগুনের বৈশিষ্ট্য।
সচিবালয়ের মতো সুরক্ষিত স্থানে এমন ঘটনা কীভাবে ঘটল, তা নিয়ে বিস্মিত অনেকেই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি দুর্ঘটনা হতে পারে, তবে ষড়যন্ত্রের বিষয়টি পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
এই অগ্নিকাণ্ড সচিবালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং জরুরি প্রস্তুতির ঘাটতিগুলো সামনে নিয়ে এসেছে। তদন্ত শেষে প্রকৃত কারণ উদঘাটিত হবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্ট মহল।