গাজীপুরের শ্রীপুরে বনভোজনের সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান জোবায়ের আলম সাকিব। তাঁর অকাল মৃত্যুতে শোকাচ্ছন্ন তার পরিবার, আত্মীয়-স্বজন এবং পুরো গ্রামবাসী। মাত্র ২২ বছর বয়সী সাকিব ছিলেন একজন মেধাবী ছাত্র, যার ভবিষ্যৎ ছিল উজ্জ্বল। তবে একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় সব স্বপ্ন ছিন্ন হয়ে যায়।
রাজশাহীর পবা উপজেলার মুরারীপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের সদস্য ছিলেন সাকিব। তাঁর মা ফজলেতুন্নেসা সেফা, একজন শিক্ষিকা এবং বাবা জাহাঙ্গীর আলম, একজন ব্যাংকার। পরিবারটির আশা ছিল, সাকিব জীবনে বড় কিছু করবে। মেধাবী এই ছেলেটি ২০১৯ সালে রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। এরপর ২০২১ সালে একই স্কুল থেকে এইচএসসি পরীক্ষায়ও একই ফলাফল অর্জন করে। সে ইচ্ছা ছিল আরও বড় কিছু করার, কিন্তু সে সুযোগ আর পাওয়া গেল না।
সাকিবের পরিবারের সদস্যরা আগে মুরারীপুর গ্রামে থাকলেও পরবর্তীতে রাজশাহীর বাকির মোড়ে একটি চারতলা বাড়ি নির্মাণ করেন। সাকিব এখান থেকে রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলে পড়াশোনা করেন এবং পরে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে (আইইউটি) ভর্তি হন। তার পরিবার তাকে সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য সব ধরনের চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত জীবন সেভাবে চলল না।
গত শনিবার, ২৫ নভেম্বর, গাজীপুরের শ্রীপুরে একটি বনভোজনে অংশ নিতে গিয়ে দুইতলা বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে সাকিবসহ তিন শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। এই দুর্ঘটনার পর সাকিবের বাবা, মা এবং বোন গাজীপুরে ছুটে গিয়ে তার মরদেহ গ্রহণ করেন। গভীর রাতে তাদের সঙ্গে সাকিবের মরদেহ রাজশাহী শহরে নিয়ে আসা হয়। রবিবার সকাল ৭টায় তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়, এরপর মরদেহ তার মাতৃভূমি মুরারীপুরে নিয়ে যাওয়া হয়।
জানাজায় উপস্থিত হয়ে সাকিবের চাচি শিরিফা বেগম বলেন, “এমন সোনার ছেলে আর হয় না। সে কখনো উচ্চস্বরে কথা বলতো না, সবার সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রাখতো। তার মৃত্যুর খবর শুনে পুরো এলাকা শোকাচ্ছন্ন।”
এদিকে, সাকিবের মামা তাসনিম ফেরদৌস অভিযোগ করেন, “গ্রামের রাস্তায় দোতলা বাস নিয়ে পিকনিকে যাওয়া উচিত হয়নি। যদি সাধারণ বাস ব্যবহার করা হতো, তবে এই দুর্ঘটনা ঘটত না। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কেন এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা নিয়ে আমরা প্রশ্ন তুলছি। পুলিশ তদন্ত করছে, আমরা ফলাফল জানতে অপেক্ষা করছি।”
সাকিবের বন্ধু সোহেল পারভেজ বলেন, “আমরা একসঙ্গে কোচিং করতাম এবং খুব ভালো বন্ধু ছিলাম। সে ছিল অত্যন্ত আন্তরিক, শিক্ষিত এবং সহানুভূতিশীল। তার মৃত্যু আমাদের কাছে সত্যিই বিশ্বাসযোগ্য নয়, এখনো তা মেনে নিতে পারছি না।”
এই দুর্ঘটনা নিয়ে স্থানীয় পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে এবং একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে, এখন পর্যন্ত তদন্তের কোনো ফলাফল পাওয়া যায়নি। সাকিবের পরিবার এবং গ্রামবাসী তদন্তের সঠিক ফলাফল আশা করছেন, যাতে ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা আর না ঘটে।