ছাত্র জনতার ঐতিহাসিক জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর গত বছরের ৬ আগস্ট প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা পরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) ‘আয়না ঘরের’ বন্দিশালা থেকে অক্ষত অবস্থায় মুক্তি পেয়েছিলে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির প্রয়াত গোলাম আযমের ছেলে বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল্লাহিল আমান আযমী। ২০১৬ সালের আগস্টে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে আযমীকে আটক করে তুলে নেওয়ার অভিযোগ তুলে তার পরিবার।
বুধবার বিকালে বন্দিজীবনের এমনি একটি অভিজ্ঞতার গল্প সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেছেন তিনি।
যুগান্তরের পাঠকদের জন্য বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল্লাহিল আমান আযমীর সেই স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে দেওয়া হলো….
‘হঠাৎ লোহার ভারি দরজার তালা খোলার শব্দে ছন্দপতন হলো। কিছুটা আশ্চর্য হলাম। এমন সময়ে তো কেউ কখনো আসেনি, আসে না! মাথা তুলে তাকাতেই দেখি একজন নিম্ন পদবির অফিসার রুমে ঢুকছেন। স্বাভাবিকভাবেই অমঙ্গল আশঙ্কায় মনটা একটু অশান্ত হয়ে গেল। মুখটা দেখে তার আসার উদ্দেশ্য বুঝার চেষ্টা করবো, তারও উপায় নেই। মাস্ক দিয়ে মুখ ঢাকা। মনে হলো যেন কোন যমদূত, যার চোখ দুটো ছাড়া কিছু দেখার উপায় নেই; চেহারা বুঝার উপায় নেই। তবুও মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। বডি ল্যাংগুয়েজ দেখে বুঝার চেষ্টা করতে থাকলাম। ভাব দেখে খারাপ কিছু বলে মনে হলো না; মনটা কিছুটা শান্ত হলো। তবে, নিশ্চিত হতে পারছিলাম না। ওদের মনের ভিতরে কখন কী দুরভিসন্ধি থাকে কে জানে’!
‘আমি যেমনটা বসে ছিলাম, তেমনটাই বসে থাকলাম। দোয়া শেষ করতে পারলাম না। ‘বসতে পারি’ জিজ্ঞাসা করলেন। একটু আশ্চর্য হলাম! আসার উদ্দেশ্য বুঝার চেষ্টা করতে থাকলাম। মাথায় নানা রকম চিন্তা আসতে লাগলো। তার কথার স্বর, সুর ও বডি ল্যাংগুয়েজ- সব মিলিয়ে আশংকাজনক কিছু মনে হলো না। সামনের চেয়ার থেকে পা দু’টো নামিয়ে ইশারায় বসতে বললাম। কেমন আছেন? জিজ্ঞাসা করলো। চিরাচরিত অভ্যাসমতো আলহামদুলিল্লাহ বললাম। তিনি সামনের চেয়ারে বসলেন এবং কোন রকমের ভূমিকা ছাড়াই বললেন, আপনি একটা মুচলেকা লিখে দেন। কীসের মুচলেকা, কি লিখবো? আমার প্রশ্ন’।
উত্তরে তিনি বললেন, আপনি লিখিত দেন যে, আমি রাজনীতি করবো না, দেশেও থাকবো না। পরিবার নিয়ে শান্তিতে থাকতে চাই। আমি পরিবার নিয়ে বিদেশে চলে যাবো। আমাকে মুক্তি দেওয়া হোক।
‘মুহূর্তের মধ্যে মনে পরে গেল ১৯৭৯ সালের রমজান মাসের এক সন্ধ্যার কথা। শেখ মুজিব ১৯৭৩ সালে আমার বাবা অধ্যাপক গোলাম আযমসহ ৩৯ জনের নাগরিকত্ব বাতিল করেছিলেন। রমজানের সেই সন্ধ্যায় তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রেসিডেন্ট জিয়ার পক্ষ থেকে আমার বাবাকেও নাগরিকত্ব ফিরে পাওয়ার বিনিময়ে ‘আর রাজনীতি করবেন না’ মর্মে মুচলেকা দিতে বলেছিলেন।
আমার বাবা সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। আব্বার এই স্মৃতি মনে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে মনের ভেতর অনেক জোর পেলাম। আমি সঙ্গে সঙ্গে মুচলেকা দেওয়ার প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করে জবাব দিলাম, ‘আপনারা ক্ষমতার জোরে আমাকে অবৈধভাবে অপহরণ করে এনেছেন, অবৈধভাবে আটক করে রাখছেন। আমি মনে করি আমি স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক। আমি দেশে থাকবো কি থাকবো না, রাজনীতি করবো কি করবো না, সেটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমি মুচলেকা দিয়ে মুক্তি পেতে চাইনা। কর্মকর্তাটি কয়েকবার আমাকে একই অনুরোধ করলেও আমি আমার অবস্থানে অটল, অনড় থাকি। এক পর্যায়ে তিনি হতাশ হয়ে চলে যান।
‘আমি বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) আব্দুল্লাহিল আমান আযমী, পঞ্চম বিএমএ লং কোর্স এর অফিসার হিসেবে ১৯৮১ সালে ৭ম ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে কমিশন লাভ করি। দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং অখণ্ডতা রক্ষায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে আমি নিজেকে উজাড় করে দিয়েছিলাম। আমার আরেকটি পরিচয়, আমি বাংলাদেশের ইসলামি আন্দোলনের প্রাণপুরুষ, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা আমীর শহিদ অধ্যাপক গোলাম আযমের ৪র্থ সন্তান। আমার দু’টি পরিচয়ই ফ্যাসিস্ট, ব্রাক্ষ্মণ্যবাদী ও বাংলাদেশ বিরোধী শক্তির জন্য ছিলো দুশ্চিন্তার কারণ’।
‘সে কারণেই আমার অত্যন্ত গৌরবোজ্জ্বল সামরিক ক্যারিয়ার সত্ত্বেও জালিমরা ২০০৯ সালের ২৪ জুন কোনো কারণ ছাড়া বিনা অপরাধে, বিনা তদন্তে, বিনা বিচারে নজিরবিহীনভাবে আমাকে সামরিক বাহিনী থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল।
পরবর্তীতে, ফ্যাসিস্টরা ২০১৬ সালের ২২ আগস্ট রাতে আমাকে নিজ বাসা থেকে তুলে নিয়ে গোপন সামরিক কারাগারে (কথিত আয়নাঘর) বন্দী করে রাখে। ছাত্র-জনতার ব্যাপক আত্মত্যাগের বিনিময়ে দেশে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটলে দীর্ঘ প্রায় ৮ বছর পর ২০২৪ সালের ৭ আগস্ট রাত প্রায় পৌনে বারোটায় আমি মুক্তি পাই, আলহামদুলিল্লাহ। এই দেশের জনগণ ও বিপ্লবী ছাত্র-জনতার প্রতি আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই’।
‘আমি আমার জীবনের এই নির্মম অভিজ্ঞতা, আমার কিংবদন্তিতুল্য পিতার সঙ্গে কাটানো অমূল্য সময় ও সামরিক জীবনের নানা অভিজ্ঞতা লিখতে শুরু করেছি। মহান জুলাই বিপ্লবের প্রথম বর্ষপূর্তিতে তৌহিদুল মিনহাজ সাহেব তার মহানগর পাবলিকেশন্স থেকে আমার ‘গুম জীবনের’ কথাগুলো বই আকারে প্রকাশ করবেন, ইনশাআল্লাহ। আশা করছি পাঠক এই বইয়ের মাধ্যমে অনেক কিছুই জানতে পারবেন’।
ময়মনসিংহ
,
মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
জামায়াত ধর্ম নিয়ে কাজ করে, ধর্মকে ব্যবহার করে না বলেছেন আমির
নির্বাচনের প্রস্তুতি খুব ভালো বললেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
আল্লাহর পরই আপনাদের প্রতি আমার সম্মান বললেন ফজলুর রহমান
বিএনপি নেতা ফজলুর রহমান আইনজীবীর বহর নিয়ে ট্রাইব্যুনালে
৭ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ ওবায়দুল ও যুবলীগ সভাপতিসহ
খালেদা জিয়ার জন্য আগামীকাল সকালে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আসছে
আসামি ধরতে গিয়ে ছুরিকাঘাতে পুলিশ সদস্য আহত বগুড়ায়
ক্রিকেট ক্যারিয়ারের অধ্যায় প্রায় শেষ, রাজনীতির পথ এখনও বাকি বললেন সাকিব
কমেছে স্বর্ণের দাম দেশের বাজারে
বাড়ছে শীতের দাপট পঞ্চগড়ে , টানা তিন দিন ধরে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে
নোটিশ :
প্রতিটি জেলা- উপজেলায় একজন করে ভিডিও প্রতিনিধি আবশ্যক। যোগাযোগঃ- Email- matiomanuss@gmail.com. Mobile No- 017-11684104, 013-03300539.
আযমীকে আয়নাঘর থেকে যে শর্তে মুক্তির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল
-
স্টাফ রিপোর্টার - আপডেট সময় ০৩:৫৬:২৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ মে ২০২৫
- ১১৭ বার পড়া হয়েছে
ট্যাগস
আয়নাঘর আযমীকে আযমীকে আয়নাঘর থেকে যে শর্তে মুক্তির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল থেকে যে শর্তে দেওয়া প্রস্তাব মুক্তির হয়েছিল
জনপ্রিয় সংবাদ


























