রাজধানীর ধানমন্ডি থানার প্রতারণা ও চাঁদাবাজির অভিযোগে করা মামলায় জব্দ থাকা মোবাইল ফোন, আইপ্যাড ও পাসপোর্ট নিজের জিম্মায় চেয়ে আবেদন করেছেন মেঘনা আলম। আবেদন নামঞ্জুর করায় আদালতে অঝোরে কাঁদেন মেঘনা।
আজ মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকালে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুর রহমানের আদালতে হাজির হন মেঘনা আলম। এরপর তার আইনজীবী মহসিন রেজা পলাশ ও মহিমা ইসলাম বাঁধন জব্দ থাকা মোবাইল, আইপ্যাড ও পাসপোর্ট নিজ জিম্মায় চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক আবেদন নামঞ্জুর করেন।
এ সময় আসামিপক্ষের আইনজীবী মহসিন রেজা বলেন, আজ তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে সময় চেয়ে একটি পিটিশন দেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, ফরেনসিক রিপোর্ট সম্পন্ন না হওয়ায় সময়ের আবেদন করেন। সে কারণে আজ পাসপোর্ট ফেরত চেয়ে আমাদের করা পিটিশন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন।
তিনি বলেন, গত ৩১ আগস্ট আদালত পাসওয়ার্ড দেওয়ার জন্য মেঘনা আলমকে নির্দেশ দেন। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা এখনো সেই পাসওয়ার্ড পাননি। সে জন্য ফরেনসিক সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। আজকেও তিনি আবেদন করেন। আমরা আদালতকে জানিয়েছি, মেঘনা আলম এখনো পাসওয়ার্ড না দেয়ায় তার ফরেনসিক হয়নি। তার মোবাইল ও ল্যাপটপে কোনো রাষ্ট্রবিরোধী উপাদান আছে কিনা জানা যায়নি। এর মধ্যে যদি তাকে পাসপোর্ট দিয়ে দেয়া হয়, তাহলে সে বিদেশে পালিয়ে যেতে পারে।
অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে সংশ্লিষ্ট আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হারুনুর রশিদ বলেন, মেঘনা আলমের গ্রেপ্তারের সময় তদন্ত কর্মকর্তা তার কাছ থেকে দুটি মোবাইল, একটি ল্যাপটপ ও একটি পাসপোর্ট জব্দ করেন। গত ২৯ জুলাই জব্দকৃত জিনিসগুলো তার জিম্মায় নেয়ার জন্য আবেদন করেন। আদালত আসামি পক্ষ ও রাষ্ট্র পক্ষের শুনানি নিয়ে আদেশে বলেন, জব্দকৃত আলামতগুলো বিশেষজ্ঞ দ্বারা পরীক্ষা করা হয়েছে কি না, মোবাইল ও ল্যাপটপে রাষ্ট্রবিরোধী কোনো উপাদান রয়েছে কিনা, সে বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য করা প্রয়োজন। তদন্ত কর্মকর্তা ২৬ আগস্ট আদালতে মোবাইল ও ল্যাপটপের পাসওয়ার্ড চেয়ে আবেদন করেন
এর আগে গত ২৮ এপ্রিল ডিটেনশন আইনে মেঘনা আলমের ৩০ দিনের আটকাদেশ বাতিল করা হয়। ওইদিনই কারামুক্তি হন তিনি। এরপর থেকে তিনি জামিনে আছেন।
গত ৯ এপ্রিল বাসা থেকে আটক হন মেঘনা আলম। পরদিন ১০ এপ্রিল বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৩০ দিনের আটকাদেশ দিয়ে মডেল মেঘনা কারাগারে পাঠানো হয়। এ ছাড়া গ্রেপ্তারের পর গত ১২ এপ্রিল ভাটারা থানার প্রতারণা মামলায় দেওয়ান সমিরের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। গত ১৭ এপ্রিল রাজধানীর ধানমন্ডি থানার প্রতারণা ও চাঁদাবাজির অভিযোগে করা মামলায় তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। গত ২২ এপ্রিল এ মামলায় তার আরও ৪ দিনের রিমান্ড দেওয়া হয়। রিমান্ড শেষে গত ২৭ এপ্রিল তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
এদিকে চাঁদাবাজি মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, মেঘনা আলম, দেওয়ার সমিরসহ অজ্ঞাতনামা ২-৩ জন একটি সংঘবদ্ধ প্রতারকচক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা বিভিন্ন সুন্দরী মেয়েদের দিয়ে বাংলাদেশে কর্মরত বিভিন্ন বিদেশি রাষ্ট্রের কূটনীতিক/প্রতিনিধি ও দেশীয় ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করিয়ে কৌশলে বিভিন্ন উপায়ে অবৈধ পন্থা অবলম্বনের মাধ্যমে তাদের সম্মানহানির ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করে আসছে। প্রসঙ্গত, সৌদি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে মেঘনা আলমের সম্পর্কের বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে উঠে আসে।