বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধ না হলে বাংলাদেশ নামে কোনো দেশ সৃষ্টি হত না। মুক্তিযুদ্ধের পেট থেকেই বাংলাদেশ বের হয়েছে। যারা বাংলাদেশ মানে না, মুক্তিযুদ্ধ যারা মানে না, তারা বাংলাদেশের মানুষ না। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ হাজার বছরে বাঙালির শ্রেষ্ঠ অর্জন।
গতকাল মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) রাতে কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা ইটনায় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত বিজয়ের মাস উপলক্ষে আয়োজিত বিজয় উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
দ্রুত নির্বাচনের তাগিদ দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উদ্দেশ্য করে ফজলুর রহমান বলেন, ‘নির্বাচিত সরকারের আয়ু যদি পাঁচ বছর হয়, অনির্বাচিত সরকারের আয়ু তিন থেকে ছয় মাস হতে পারে। ইলেকশনের কথা কইলে মুখ কালা করেন কেন? যদি আপনারা নির্বাচন করতে চান, দল করেন—আপনাদের অভিনন্দন জানাবো। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটের মাধ্যমে সরকার গঠন হবে।
আমরা নির্বাচনের জন্য অনন্তকাল অপেক্ষা করব না। দ্রুত নির্বাচন দিন, নইলে নির্বাচন আদায়ে মাঠে নামব আমরা।’
দেশে এবারের বিজয় দিবসে উৎসব বা বিজয় মেলা না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বিএনপি এই নেতা বলেন, ‘এবার তো বিজয়ের আনন্দ বেশি হওয়ার কথা ছিল। এত নীরবে-নিভৃতে কেন বিজয়ের মাস চলে যাবে? এটা আমি সহ্য করিনি, মুক্তিযোদ্ধারা সহ্য করেনি, মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানরা সহ্য করেনি।
জিয়াউর রহমানের সৈনিকেরাও সহ্য করেনি। এ কারণে হাওরে এই বিজয় উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।’
আওয়ামী লীগের তীব্র সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা গত ১৫ বছরে দেশের সর্বনাশ করেছেন, নিজের সর্বনাশ করেছেন, তার পিতাকে ডুবিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত দেশ থেকে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। গত ১৫ বছর দেশে কোনো মানুষের শাসন ছিল না।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানু বীর প্রতীককে জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছনার প্রসঙ্গে দুঃখপ্রকাশ করে অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান বলেন, ‘আমি জানি না আমার মৃত্যুর আগে আর কী কী দেখতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী দলের লোকেরাই এ অপকর্মটি করেছে। আমাদের মনে রাখতে হবে একাত্তরে সাড়ে সাত কোটি মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে যুদ্ধ করে এ দেশ স্বাধীন করেছেন। ৩০ লাখ লোক জীবন দিয়েছেন। ২ লাখ মা-বোন সম্ভ্রম হারিয়েছেন।’
মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমান অবদান প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। যারা জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক মানে না, তারা স্বাধীনতা মানে কি-না আমার সন্দেহ রয়েছে। তিনি শুধু স্বাধীনতার ঘোষকই ছিলেন না, তিনি রণাঙ্গন থেকে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন।’বিজয় উৎসবে জেলার তিন হাওর উপজেলা ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রামের ৭২জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা দেওয়া হয়। তাদের ক্রেস্ট ও ফুল দিয়ে বরণ করা হয়। আলোচনা পর্ব শেষে রাতে উৎসবের সাংস্কৃতিক পর্বে কণ্ঠশিল্পী সালমা, আশিক ও শাহনাজ বাবুসহ স্থানীয় শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করেন। মধ্যরাত পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষ তাদের পরিবেশনা উপভোগ করেন।
ইটনা উপজেলা বিএনপির সভাপতি এস এম কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিজয় উৎসবের আলোচনা পর্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন- জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম, সহসভাপতি অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম রেখা ও অ্যাডভোকেট জালাল উদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল এবং সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী ইসরাইল মিয়া ও আমিনুল ইসলাম আশফাক।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন- ইটনা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. সিদ্দিকুজ্জামান ঠাকুর স্বপন, সহসভাপতি মো. মনির উদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পলাশ রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. তারিকুল ইসলাম জুয়েল, মিঠামইন উপজেলা বিএনপি সভাপতি জাহিদুল আলম জাহাঙ্গীর, অষ্টগ্রাম উপজেলা বিএনপি সভাপতি সৈয়দ সাঈদ আহমেদ, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ সুমন, জেলা মহিলা দলের সভাপতি জেসমিন সুলতানা কবিতা, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আবু নাসের সুমন, কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতা হাফিজুল্লাহ হীরা প্রমুখ।