অনলাইন নিউজ-
বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে সুযোগ-সুবিধা সীমিত হয় যাবে। তাতে দেশের পণ্য রপ্তানি খাত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশকে বড় ধরনের সংস্কার করতে হবে। পাশাপাশি দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে শিক্ষাব্যবস্থায়ও সংস্কার লাগবে।
রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার মিলনায়তনে সংগঠনটির সভাপতি আশরাফ আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান। তিনি বলেন, গত পাঁচ দশকে বাংলাদেশের রপ্তানি বেড়েছে। তবে পণ্য বৈচিত্র্যকরণে প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ বেশ পিছিয়ে আছে।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘এলডিসি-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের প্রস্তুতি’ শীর্ষক এক সেমিনারে গত শনিবার বক্তারা এসব কথা বলেন। তাঁরা বলেন, দেশের রপ্তানি খাতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, ডলারের একক বিনিময় হার চালু, আমদানি শুল্ক হ্রাস, ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত সরকারি সংস্থাগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি, খেলাপি ঋণ হ্রাস, অর্থায়নের জন্য ব্যাংকের পাশাপাশি পুঁজিবাজারের ওপর নির্ভরতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
২০০৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১৬ বছরে বাংলাদেশ চার ডিজিটের এইচএস কোডের মাত্র নয়টি নতুন পণ্য রপ্তানিতে যোগ করতে পেরেছে। ২০২১ সালে এসব পণ্যের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৮২ কোটি মার্কিন ডলার। অথচ এই সময়ে ভিয়েতনাম ৪১টি নতুন পণ্য রপ্তানি করেছে। পণ্যগুলোর রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৪৫০ কোটি ডলার। এমন তথ্য দিয়ে সেলিম রায়হান বলেন, ‘শিল্পায়ন হলে অন্যান্য দেশ তৈরি পোশাক থেকে অন্য খাতে যায়। কিন্তু বাংলাদেশে উল্টো চিত্র। আমরা নতুন পণ্য সেভাবে আনতে পারছি না। অনেকে চেষ্টা করছেন। তবে টিকে থাকতে পারেননি। তার ফলে বাংলাদেশ এখনো সহজ পণ্যই উৎপাদন ও রপ্তানি করে থাকে। অন্যদিকে ভিয়েতনাম জটিল পণ্য উৎপাদন করে। অথচ নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের রপ্তানি প্রায় কাছাকাছি ছিল।’
সেলিম রায়হান বলেন, জাপানে এখন আর নতুন পণ্য রপ্তানির খুব সুযোগ নেই। তবে নতুন পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশের সম্ভাবনা অসীম। সেই সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হলে বড় ধরনের লাফ দিতে হবে। বড় সংস্কার করতে হবে। ছোট ছোট উদ্যোগ নিলে খুব বেশি কাজ হবে না। ভিয়েতনামের নতুন পণ্য রপ্তানিতে খুব বেশি সংস্কারের প্রয়োজন নেই।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, রপ্তানি খাতে বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। কাঁচামাল আমদানিতে দেশে শুল্কহার অন্য দেশগুলোর তুলনায় বেশি, যা রপ্তানি খাতের বিকাশে প্রতিবন্ধকতা। উচ্চ শুল্কের কারণে সমস্যায় পড়ছে কোম্পানিগুলো। তাদের ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। একটি দেশের করব্যবস্থা দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উৎসাহী বা নিরুৎসাহী করে। পিডব্লিউসির এক গবেষণায় দেখা যায়, ২০২০ সালে সহজে কর প্রদান সূচকে বাংলাদেশ ১৮৯ দেশের মধ্যে ১৫১তম অবস্থানে ছিল। ডলারের একাধিক বিনিময় হারের কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থার মান প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় নিচে। অন্যদিকে খেলাপি ঋণের আধ্যিকের কারণে যাঁরা বৈচিত্র্যময় পণ্য উৎপাদন করতে চান, তাঁরা ঋণ পেতে ভোগান্তিতে পড়েন।
দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ যত সহায়ক হবে, রপ্তানি খাতে তত বেশি সাফল্য আসবে। আর শুল্কহার বেশি থাকলে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ব্যাহত হবে। তাই সহায়ক রাজস্ব নীতিমালার কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আশরাফ আহমেদ।
সেমিনারের স্বাগত বক্তব্য দেন ঢাকা চেম্বারের ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি মালিক তালহা ইসমাইল বারী। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির সহসভাপতি মো. জুনায়েদ ইবনে আলী, তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর পরিচালক আসিফ আশরাফ ও সোনালী আঁশ ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান পাটোয়ারি।