ড. রেজা কিবরিয়া তার বাবা সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যায় শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠরা জড়িত ছিলেন বলে বারবার দাবি করে আসছেন। এবার কিবরিয়া হত্যা মামলা শেখ হাসিনার জন্য কঠিন পরীক্ষা ছিল বলে দাবি করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে কিবরিয়া হত্যা মামলা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে দীর্ঘ একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি।
স্ট্যাটাসে শফিকুল আলম বলেন, প্রায় দুই দশক ধরে রেজা কিবরিয়া দাবি করে আসছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা এবং দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু ব্যক্তি তার বাবার হত্যার জন্য দায়ী।
শাহ কিবরিয়া হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত এবং ন্যায়বিচারের দাবিতে রেজা কিবরিয়ার মা ও তার পরিবার একাধিকবার দাবি জানিয়েছেন।
শাহ কিবরিয়া হত্যা মামলা শেখ হাসিনা সরকারের জন্য একটি কঠিন পরীক্ষা ছিল দাবি করে, তিনি বলেন, এমনকি রেজা ও প্রয়াত শিল্পী তার মা আসমা কিবরিয়ার ক্রমাগত আপত্তির কারণেই শেখ হাসিনা তিনবার হত্যা মামলার চার্জশিট পরিবর্তন করেছিলেন।
প্রেসসচিব বলেন, কেউ আশা করেনি যে হাসিনা বিরোধী দলের কর্মীদের জন্য ন্যায্যবিচার নিশ্চিত করবেন। আমরা জানি কীভাবে খালেদা জিয়া, তারেক রহমান বা বিরোধী দলের লাখ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল এবং কারচুপি করা হয়েছিল।
কিন্তু শাহ কিবরিয়া ১৯৯৬-২০০১ সালে হাসিনার অর্থমন্ত্রী এবং জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি ছিলেন। ১৯৯৮ সালে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা মোকাবিলায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, যখন দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা দুই মাস পানির নিচে ছিল।
নি বলেন, হাসিনার একটি চিরন্তন বৈশিষ্ট্য ছিল যে তার কাছে পরিবারের বাইরে কিছুই গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। তার প্রতিদিনের বক্তব্যগুলো মস্তিষ্কের কোষগুলোর স্থায়ী ক্ষতির ইঙ্গিত দেয়।
কখনো মনোযোগ দিয়ে তার বক্তব্য শুনলে দেখবেন, ১৫ বছর ধরে প্রায় প্রতিদিনই বক্তৃতায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রথম কয়েকটি অনুচ্ছেদে পরিবারের হত্যাকাণ্ডের কথা বলতেন।
তিনি বলেন, নিঃসন্দেহে শেখ মুজিব এবং পরিবারের প্রায় সব সদস্যের হত্যাকাণ্ড ছিল একটি বিশাল ট্র্যাজেডি এবং ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড। কিন্তু আপনি কি প্রতিদিন এটি নিয়ে কথা বলেন? আপনি কি প্রতিদিন স্বজন হারানোর বেদনা বা মা-হারিয়েছি, বাবাকে হারিয়েছি, শিশু রাসেলকেও ওরা ছাড়েনি এসব সম্পর্কে কথা বলেন?
শফিকুল আলম উল্লেখ করেন, পৃথিবীর আর কোনো নেতাকে আমি তার মতো পারিবারিক ট্র্যাজেডি নিয়ে কথা বলতে শুনিনি। আপনি কি কখনও সোনিয়া গান্ধী বা রাহুল গান্ধীকে রাজীব বা ইন্দিরা গান্ধীর হত্যাকাণ্ড নিয়ে কথা বলতে শুনেছেন কিংবা এ ঘটনা তাদের জীবনকে কীভাবে প্রভাবিত করেছে? অথবা ছেলের হাতে নির্মমভাবে হত্যার শিকার শ্রীলঙ্কার রাজা বিরেন্দ্রর পরিবারের সদস্যদের সেই ঘটনা সম্পর্কে কথা বলতে শুনেছেন?
ত, ২০০৯-২০২৪ সালের ঘটনাগুলো যত বেশি আমি পর্যালোচনা করি, তত বেশি মনে হয় আমরা এমন একজনকে ক্ষমতায় রেখেছি, যিনি শাসন পরিচালনার জন্য চিকিৎসাগতভাবে উপযুক্ত ছিলেন না।
শফিকুল আলম বলেন, এক শীর্ষ কূটনৈতিক আমাকে বলেছিলেন, তিনি একজন ক্লাসিক পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (পিটিএসডি) রোগী।
সুতরাং, শাসন কার্য পরিচালনার আগে আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের মেডিক্যাল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া উচিত!
উল্লেখ্য, ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জে দলীয় এক জনসভায় গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হন সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া। পরে ঢাকায় নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।