মোঃ রেদুয়ান আহাম্মেদ 
এই ফাইনালটা ম্যাচটি ছিলো একটু অন্যরকম। অন্যান্য ফাইনালের চেয়ে এই ফাইনাল ম্যাচটি আর্জেন্টাইন ফ্যানদের জন্য একটু আবেগের। কারণ আকাশি-সাদা জার্সিতে এটাই ছিল সাইলেন্ট কিলার ডি মারিয়ার শেষ ম্যাচ।
অন্যদিকে ফুটবলের জাদুকর কিংবদন্তি লিওনেল মেসিরও এটাই ছিল শেষ ম্যাচ। অনেক কষ্টের পর সেই আবেগের ফাইনালটাও রঙিন করে তুললেন লাউতারো মার্টিনেজ। ১১২ মিনিটে তার একমাত্র গোলেই টানা দ্বিতীয়বারের মতো কোপা আমেরিকা চ্যাম্পিয়ন হয় আর্জেন্টিনা। গোল করার পর অধির আবেগের সাথে মেসিকে জড়িয়ে ধরলেন লাউতারো মার্টিনেজ। কলম্বিয়ার কিছু উগ্র সমর্থকদের কারণে এক ঘণ্টা ২০ মিনিট পর মাঠে গড়ায় কোপা আমেরিকার ফাইনাল ম্যাচ। তবে ম্যাচের শুরু থেকেই আর্জেন্টিনাকে বেশ চাপে রাখে কলম্বিয়া। একের পর আক্রমণে ব্যস্ত থাকেন হামেস রদ্রিগেজরা। অন্যদিকে আর্জেন্টিনাও বেশ কয়েকবার হানা দিয়েছিল কলম্বিয়ার দোয়ারে।
আর্জেন্টিনা ম্যাচ শুরু করেছিল মানসিকভাবে পিছিয়ে থেকেই। অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টারের মা, আলেহান্দ্রো গার্নাচোর ভাইসহ একাধিক খেলোয়াড়ের স্বজনরা আটকে ছিলেন উগ্রপন্থি কলম্বিয়ান সমর্থকদের মাঝে। খেলা শুরুর আগে নিজের মাকে নিরাপদে স্টেডিয়ামে নিয়ে আসতে লকাররুম ছেড়ে বেরিয়ে আসেন ম্যাক অ্যালিস্টার। এমন বিপর্যস্ত আর্জেন্টিনার ওপর শুরু থেকেই চড়াও হয় কলম্বিয়া। কিন্তু প্রথমার্ধে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত সেই আর্জেন্টিনাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি সেভাবে। ম্যাচের শুরুতেই গোলের সুযোগ তৈরি করেছেন তারা। ৪৩ মিনিটে বল নিয়ে এগোচ্ছিলেন তাগলিয়াফিকো। বক্সের কাছাকাছি জায়গায় তাকে বাজেভাবে ট্যাকল করায় ফ্রি কিক পায় আর্জেন্টিনা। এ থেকে বক্সের মধ্যে উড়িয়ে বল মারেন মেসি, সতীর্থের হেড চলে যায় ক্রসবারের উপর দিয়ে। আক্রমণ এবং প্রতি আক্রমণে গোলশূন্য সমতায় শেষ হয় প্রথমার্ধ। দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই দাপট ধরে রাখে কলম্বিয়া। আক্রমণেও উঠেছিলো কয়েকবার। কিন্তু ৫৮ মিনিটে কোনো রকমে বেঁচে যায় কলম্বিয়া। বাঁ দিক থেকে বল নিয়ে একেবারে প্রতিপক্ষের ডেরায় ঢুকে পড়েন ডি মারিয়া। লিওনেল স্ক্যালোনিকে সচরাচর মাথা গরম করতে দেখা যায় না। তবে আজকে তিনি মেজাজ হারালেন। কলম্বিয়ার ফুটবলারদের মারকুটে ফুটবল দেখে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেননি তিনি।
কোপা আমেরিকার টুর্নামেন্টে আর মাঠে নামা হবে না মেসির, মোটমুটি নিশ্চিত। চোট পেয়ে যখন মাঠ ছাড়ছিলেন, তখন নিশ্চয় এই কথাটা মনে পড়ছিল তার। ম্যাচের ৬৬ মিনিটে কান্নাভেজা চোখে মাঠ থেকে উঠে গেলেন মেসি। প্রথমার্ধের ৩৫তম মিনিটে চোট পেয়েছিলেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। তারপর বাকি সময়টা তাকে ভুগতে দেখা যায়। ভালভাবে খেলতেও পারছিলেন না। অবশেষে ৬৬ মিনিটে তাকে উঠে যেতে হলো মাঠ থেকে। এরপরে দেখা যায়, বেঞ্চে বসে কান্না করেছেন অঝরে। মেসি উঠে যাওয়ার পর কিছুটা ছন্নছাড়া ফুটবল খেলতে থাকে আর্জেন্টিনা। আক্রমণে উঠেও তার কোনো ফল পাচ্ছিলো না আর্জেন্টনা। ৮৭ মিনিটে এগিয়ে যেতে পারতো আর্জেন্টিনা। ৯১ মিনিটে ভাল সুযোগ পেয়েছিলেন ডি মারিয়া, বিপক্ষে গোলরক্ষকের ভুলে। কিন্তু ফাঁকা পেয়েও বল নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় সুযোগ নষ্ট হয়। নির্ধারিত ৯০ মিনিটও শেষ হয় গোলশূন্য সমতায়।
যার ফলে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। টুর্নামেন্টের নকআউট ম্যাচগুলোতে এ নিয়ম ছিল না। খেলার ৯০ মিনিট সমতায় শেষ হলে সরাসরি টাইব্রেকার দেয়া হতো। ফাইনাল ম্যাচে সেই নিয়ম নেই। খেলার ৯০ মিনিট শেষে সমতা থাকলে আরও ৩০ মিনিট খেলা হবে। যার জন্য এ ম্যাচও গড়ায় অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে। অতিরিক্ত সময়েও একের পর এক আক্রমণ করে গেছে দুদল।অবশেষে সোনার হরিণ নামক সেই গোলটি পেয়ে যায় আর্জেন্টিনা। ১১২ মিনিটে এলো কাঙ্খিত সেই গোল। মাঝমাঠ থেকে লাউতারো মার্টিনেজকে বল বাড়িয়ে দিলেন লো সেলসো। বক্সের ভেতরে ঢুকে নিখুঁত শটে বল জালে জড়ান লাউতারো মার্টিনেজ। আর সেই গোলেই টানা দ্বিতীয়বারের মতো কোপা আমেরিকার শিরোপা ঘরে তুলে নিলেন আর্জেন্টিনা। সেই সঙ্গে কোপা আমেরিকার ইতিহাসে এককভাবে সর্বোচ্চ ১৬ বারের চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা।
