ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারোকে গৃহবন্দী করেছে দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। ২০২২ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের পর ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে সহিংস অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে বিচারপ্রক্রিয়ার মুখোমুখি বলসোনারো। এর মধ্যেই আদালতের নিষেধাজ্ঞা ভেঙে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার অভিযোগে তাকে এই গৃহবন্দী করা হয়েছে।
সোমবার (৪ আগস্ট) ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি আলেক্সান্দ্রে ডি মোরায়েস এই আদেশ জারি করেন। মোরায়েস নিজেও সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার আওতায় এসেছেন। আদালতের আদেশে বলা হয়, বলসোনারো নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে একাধিকবার রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়েছেন এবং আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করেছেন। গৃহবন্দীর পাশাপাশি তার মোবাইল জব্দ করা হয়েছে এবং সব ধরনের দর্শনার্থী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। বলা হয়েছে, শুধুমাত্র আইনজীবী ও আদালতের অনুমোদিত ব্যক্তিরা সাক্ষাৎ করতে পারবেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই বিচারকে ‘উইচ হান্ট’ (ডাইনী খোঁজার অভিযান) বলে অভিহিত করেছেন এবং বলসোনারোর বিরুদ্ধে বিচার শুরুর প্রতিক্রিয়ায় ব্রাজিলীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। এমনকি শুল্ক আরও বাড়ানোরও হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলেছে, বিচারপতি মোরায়েস ব্রাজিলের প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবহার করে বিরোধীদের দমন করছেন এবং গণতন্ত্রকে হুমকির মুখে ফেলেছেন। তারা এসব কার্যকলাপে সহায়তাকারীদের শাস্তির মুখে পড়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে।
২০২৩ সালের জানুয়ারিতে বলসোনারোর সমর্থকদের সহিংস বিক্ষোভে ব্রাসিলিয়ার বিভিন্ন সরকারি ভবনে হামলার পর থেকেই বলসোনারোর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়। এই ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল হিল হামলার প্রতিধ্বনি খুঁজে পান অনেকেই। ইতোমধ্যে দেশটির নির্বাচন আদালত বলসোনারোকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত কোনো ধরনের সরকারি পদে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করেছে।
এই পরিস্থিতিতে বলসোনারোর আরেক ছেলে, কংগ্রেসম্যান এডুয়ার্দো বলসোনারো, যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছেন সমর্থন আদায়ের জন্য। তার মতে, এই প্রচেষ্টাই ট্রাম্পের নতুন শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তে ভূমিকা রেখেছে। তিনি বিচারপতি মোরায়েসকে ‘একজন বিকারগ্রস্ত স্বৈরাচারী’ বলেও উল্লেখ করেছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বলসোনারো ইচ্ছাকৃতভাবেই উত্তেজনা বাড়াচ্ছেন এবং এতে করে ট্রাম্পের হস্তক্ষেপের সুযোগ তৈরি করছেন। তবে এই পরিস্থিতি লুলার সরকারের পক্ষে জনসমর্থন বাড়াবে, এমন আশঙ্কাও করছেন বলসোনারোর কিছু মিত্র। তা সত্ত্বেও রোববার বলসোনারোর পক্ষে যেসব বিক্ষোভ হয়েছে, তা প্রমাণ করে যে, ট্রাম্পের বক্তব্য ও নিষেধাজ্ঞা বলসোনারোর ডানপন্থী রাজনৈতিক ঘাঁটিকে আরও চাঙ্গা করেছে।