আগামী সংসদ নির্বাচন ঘিরে ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হচ্ছে ভোটের হিসাব-নিকাশ। নির্বাচনি জোট গঠনেও পর্দার আড়ালে চলছে নানা আলোচনা ও তৎপরতা। নানা ইস্যুতে কয়েকটি দল আন্দোলন নিয়ে রাজপথে থাকলেও ভেতরে ভেতরে তারাও নির্বাচনের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। কোন দল কোন জোটে যাবে, তা নিয়েও জনমনে কৌতূহল রয়েছে।
অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলনসহ ইসলামি দলগুলোর পৃথক জোট বা আসন সমঝোতার সম্ভাবনা রয়েছে। এনসিপিও উদারপন্থি কয়েকটি দলের সঙ্গে জোট গঠনের দিকে আগ্রহী। বাম ও ইসলামি দলগুলোর আরও দুটি পৃথক জোট গঠনের তৎপরতা আছে। তবে নির্বাচনের তফশিল প্রকাশের পর আনুষ্ঠানিকভাবে জোট বা সমঝোতার বিষয়টি ঘোষণা করা হবে।
অতীত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বিএনপি এবার ডান-বাম ও ইসলামি দলগুলোকে একসঙ্গে আনার চেষ্টা করছে। সম্ভাব্য অংশীদারদের মধ্যে রয়েছে লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, ভাসানী জনশক্তি পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), গণফোরাম, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম), জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) নেতৃত্বাধীন ১২ দলীয় জোট, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের ১১টি দল, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য ও বাংলাদেশ লেবার পার্টি।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশসহ কয়েকটি ইসলামি দলও বিএনপির সঙ্গে জোটে যুক্ত হতে পারে। এর মধ্যে কিছু দল অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম থেকেও অংশ নেবে। এছাড়া এনসিপি নেতাদের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে বিএনপির।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘নির্বাচনের শিডিউল যখন ঘোষণা হবে, তখন আমরা জোট নিয়ে আলোচনা করব। প্রয়োজন হলে জোট হবে, তবে এখন সুনির্দিষ্ট কিছু বলা কঠিন। আমরা ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনের আন্দোলন যুগপৎভাবে করেছি, কিন্তু জোট গঠনের বিষয়ে এখনো কোনো ঘোষণা দিইনি।’
অন্যদিকে জামায়াতসহ ইসলামপন্থি দলগুলোও সক্রিয়। জামায়াত সম্ভবত জোট বা আসন সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাচনে অংশ নেবে। ইতোমধ্যে জাতীয় সনদের ভিত্তিতে নির্বাচনসহ নানা দাবিতে জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও জাগপা একত্রে আন্দোলন করছে।
তবে জামায়াত কাদের সঙ্গে জোট করবে, তা নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার আগে বা পরে স্পষ্ট হবে। জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, ‘ইসলামপন্থি দলগুলো যাতে এক জায়গায় থাকতে পারে, সে চেষ্টা চলছে। আলাপ-আলোচনা চলছে।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে জোট ও সমঝোতার বিষয়টি নতুন কিছু নয়। তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ও নিবন্ধন স্থগিত হওয়ায় আওয়ামী লীগ দৃশ্যপট থেকে অনুপস্থিত। তাই ভোট ও মাঠের রাজনীতিতে বিএনপি দেশের অপ্রতিদ্বন্দ্বী অবস্থানে রয়েছে। এছাড়া এক সময়ের বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের অংশীদার ও মিত্রদল জামায়াতও অপেক্ষাকৃত শক্ত অবস্থানে আছে। তবে নির্বাচনের আগে সঠিক কৌশল গ্রহণ না করলে কোনো দল প্রত্যাশিত ফলাফল নাও পেতে পারে।