উচ্চ আদালতের রায় ও নির্বাচন কমিশনের গেজেটের পরও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিচ্ছে না সরকার। এর প্রতিবাদে আজ ষষ্ঠ দিনের মতো ঢাকাবাসীর ব্যানারে নগরভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করছেন তার সমর্থকরা।
আজ মঙ্গলবার (২০ মে) সকাল ১০টা থেকেই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান কার্যালয়ের সামনে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে জড়ো হয়েছেন বিভিন্ন ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক কাউন্সিলর, বিএনপি, যুবদল, মহিলা দল, ছাত্রদল, শ্রমিক দল ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।
এ কর্মসূচি থেকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার পদত্যাগ দাবি করেন তারা।
এ সময় গুলিস্তান-বঙ্গবাজার সড়কও বন্ধ করে দিয়ে অবস্থান নেন বিক্ষুব্ধ ঢাকাবাসী। অবিলম্বে ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দাও, দিতে হবে, দফা এক দাবি এক, আসিফের পদত্যাগ, আসিফ ভূঁইয়ার কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও, শপথ নিয়ে টালবাহানা চলবেনা চলবে নাসহ প্রভৃতি স্লোগানে প্রকম্পিত হতে থাকে নগর ভবনের সামনের এলাকা।
আজ বিকেল ৫টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করবেন বলে বিক্ষোভকারীরা জানিয়েছেন। তারা বলছেন, আমাদের ভোটের রায় হাসিনা ছিনিয়ে নিয়েছিল, আদালতের রায়ে আমাদের ভোটের মর্যাদা ফিরে পেয়েছি। ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করা আদালত ঘোষণা দিয়েছে, নির্বাচন কমিশনও গেজেট দিয়েছে। এই সরকারের লোকজন তাকে দায়িত্ব বুঝে দিচ্ছেনা। আমরা এর প্রতিবাদ জানায়। অবিলম্বে ইশারাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে হবে।
পুরান ঢাকার আরেক বাসিন্দা আসাদুল ইসলাম বলেন, ইশরাক ভাইকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত আমরা এই জায়গা ছাড়বো না। একই সঙ্গে বলেন, এখন আমাদের দাবি শুধু ইশরাক ভাইয়ের মেয়রের দাবিই নয়, আসিফেরও পদত্যাগ করতে হবে। ওরা নব্য স্বৈরাচার।
এ পরিস্থিতিতে আন্দোলনকারীদের প্রতি বিশেষ অনুরোধ জানিয়ে মঙ্গলবার নিজের ভেরিফয়েড ফেসবুক পেইজে একটি পোস্ট দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির বিশেষ সহকারী ইশরাক হোসেন।
তিনি লিখেছেন, ‘আমি আন্দোলনরত ঢাকা দক্ষিণ সিটির জনগণ ও ভোটারদের বিনীতভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার দোসরদের বাদে অন্য কোন রাজনৈতিক দলের নেতার বিরুদ্ধে যত ক্ষোভ থাকুক না কেন, আমরা তাদের অসম্মান হয় এরকম কিছু করা থেকে শতভাগ বিরত থাকি। আমরা সমালোচনা করি, রাজনৈতিক বক্তব্যর মধ্য দিয়ে তাদেরকে সতর্ক করি, তাদের ভুল ধরিয়ে দেই কিন্তু অবশ্যই ভাষাগত শিষ্টাচার মেনে।’
ইশরাক হোসেন লেখেন, অনেক তো দেখে আসছি আর পেছনের দিকে দেশটাকে নিতে চাই না। অবশ্যই আমরা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে মোকাবেলা করব, দেশের বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্র রুখে দিবো, নির্বাচনী স্পষ্ট রোডম্যাপ আদায়ের মাধ্যমে আমাদের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য পদক্ষেপ নিব। এমনকি বর্তমানে বিতর্কিত উপদেষ্টাদের পদত্যাগে কঠোর গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও করবো। কিন্তু ভাষা ও ব্যবহার জাতে শত্রুও সমালোচনা করতে না পারে।
এ বিষয়ে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ গতকাল বলেন, ‘বিষয়টি এখনও উচ্চ আদালতে বিচারাধীন। আদালতের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত শপথের ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব নয়।’
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের মার্চ মাসে আদালতের এক রায়ে ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বৈধ মেয়র ঘোষণা করা হয়। তবে বর্তমানে দায়িত্বে থাকা করপোরেশনের মেয়াদ শেষ হবে জুনের প্রথম সপ্তাহে। ফলে নতুন মেয়রের শপথ গ্রহণ নিয়ে আইনি ও প্রশাসনিক জটিলতা তৈরি হয়েছে।