রোজা আসতে দুই সপ্তাহ বাকি থাকতেই ইফতারির গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ ছোলার দাম চড়তে শুরু করেছে। মাস খানেক আগে প্রতি কেজি ছোলা ১০০ টাকায় মিললেও এখন গুনতে হচ্ছে ১১০ টাকা।
মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটের মাদারীপুর মশলা ঘরের দোকানি রায়হান সরদারের ভাষ্য, পাইকারিতে দাম বাড়ায় খুচরাতেও বেচতে হচ্ছে বেশি দরে।
“আগে আমাদের পাইকারিতে ছোলা কিনতে হতো ৯৬ টাকা কেজি দরে। বিক্রি করতাম ১০৫ টাকায়। এখন কিনতেই হয় ১০৩ থেকে ১০৪ টাকায়। তাই বিক্রি করি ১১০ টাকা কেজিতে।”
কারওয়ান বাজারের পাইকার একতা ট্রেডার্সের জুয়েল আহমেদ বললেন, তার দোকানে এখন ১০০ টাকা কেজি দরে ছোলা বিক্রি হচ্ছে, যা মাসখানেক আগে ৮৮ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হতো। নারায়ণগঞ্জের নিতাইগঞ্জ থেকে তাকে ছোলা কিনতে হয় ৯৭-৯৮ টাকা কেজি দরে।
জুয়েল পাইকারিতে ১০০ টাকা দরে ছোলা বিক্রির কথা বললেও কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের বৃহস্পতিবারের তথ্যে তা দেখানো হয়েছে ৮৬ থেকে ৯৬ টাকা। সংস্থাটির ঘোষণা অনুযায়ী, রাজধানীর কারওয়ান বাজার, শ্যামবাজার, রহমতগঞ্জ ও বাবুবাজার থেকে পাইকারি এ দরের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
অবশ্য বাস্তবে সেই চিত্র মেলেনি, পাইকারির দর বেশ কিছু দিন ধরেই বেশি বলে জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
একতা ট্রেডার্সের জুয়েল বলেন, “(মাস খানেক ধরে) ছোলা ১ থেকে ২ টাকা করে বেড়েছে। এক লাফে বাড়েনি। সত্যি বলতে রমজান হিসেবে যে দাম বাড়ে, তা এখনও বাড়ে নাই।
“এখন সাদা ছোলা আসছে, এগুলো ভাল। আর আগে ছিল কালো ছোলা। সেটার মান খারাপ, তাই দামও একটু কম ছিল।”
রোজায় নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার পেছনে ‘হুজুগে’ ক্রেতাদের দুষছেন এই পাইকার।
“মানুষ রমজানের শুরুতে হুজুগে বেশি কিনে, তাই চাপ পড়ে। মানুষ কম কম করে কিনলে- চাপ তৈরি হবে না। দামও খুচরা পর্যায়ে বাড়ানোর সুযোগ পাবে না খুচরা বিক্রেতারা।”
কৃষি বিপণন বিধিমালা ২০২১ অনুযায়ী- উৎপাদন, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে ইচ্ছামত মুনাফা ধরার সুযোগ নেই। পণ্যভেদে মুনাফার সর্বোচ্চ হার বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের বৃহস্পতিবারের তথ্য অনুযায়ী, এক কেজি ছোলার উৎপাদন খরচ ৮২ দশমিক ৬৭ টাকা। যৌক্তিক খুচরা মূল্য বলা হয়েছে ৯১ দশমিক ১৬ টাকা।
যদিও ‘যৌক্তিক’ খুচরা মূল্যে পাইকারি বাজারেও ছোলা মিলছে না। খুচরা বাজারের ১১০ টাকা দাম ধরলেও তা যৌক্তিক মূল্যের চেয়ে প্রায় ১৯ টাকা বেশি। সুপারশপে এ পণ্যের দাম আরও বেশি; মিনা বাজারে খোলা ছোলার কেজি ১২০ টাকা, স্বপ্নে প্যাকেটজাত এ পণ্যের দাম ১৩০-১৪০ টাকা।
মুদি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ গ্রোসারি বিজনেস অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক মাকসুদ আলম বলেন, “ছোলাসহ রোজাকেন্দ্রিক যেসব পণ্য রয়েছে, সবগুলো পণ্যই সরকার আমদানি চালু রেখেছে। সবগুলো ভালভাবেই আমদানি চলছে। ছোলার দাম আর বাড়বে না আশা করি।
“আমাদের দেশের সব মানুষ যে ভাল, বিষয়টি তো এমন না। অনেকে বেশি লাভ করার চেষ্টা করে। ২ টাকার জায়গায় ২০ টাকা লাভ করার চেষ্টা করে।”
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মূল্যের চেয়ে ছোলার খুচরা দাম ১৯ টাকা বেশি কেন, এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “এটার উত্তর আমরা দেব না। এটার উত্তর দেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তারাই পণ্যের দাম ঠিক করে দেয়। আমাদের গ্রোসারি অ্যাসোসিয়েশন সরকারকে শুধু পরামর্শ দিতে পারে।”