বৃহস্পতিবার (১ মে) থেকে শুরু হচ্ছে তিন দিনের সরকারি ছুটি। এই ছুটিতে রাজধানী ঢাকায় বিএনপি, এনসিপি ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ পৃথক তিনটি জনসমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নানা ইস্যু ঘিরে আয়োজিত এই সমাবেশগুলোতে উল্লেখযোগ্য জনসমাগমের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
বৃহস্পতিবার বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ
সমাবেশে রাজধানীর আশপাশের জেলা—নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ ও টাঙ্গাইল থেকে নেতা-কর্মীদের অংশগ্রহণের কথা রয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও শ্রমিক দলের সমন্বয়ক শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে সক্রিয় রয়েছেন।
২ মে শুক্রবার বিকাল ৩টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ ফটকে সমাবেশ করবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির দাবি, ২০১৩ সালের শাপলা চত্বর থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ের ‘গণহত্যা ও গুম-খুনের’ বিচার, আওয়ামী লীগের বিচার ও দলীয় কার্যক্রম স্থগিতসহ দলটির নিবন্ধন বাতিল চাওয়া হবে এই কর্মসূচিতে।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, আওয়ামী লীগকে ‘ফ্যাসিস্ট’ দল হিসেবে চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার দাবিতে তারা গত ২১ এপ্রিল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় কর্মসূচি পালন করে আসছেন।
শুক্রবারের সমাবেশে ১০ থেকে ১৫ হাজার মানুষ উপস্থিত থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন দলের যুগ্ম সদস্যসচিব জয়নাল আবেদীন শিশির।
শনিবার হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশ
৩ মে শনিবার ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করবে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। এক মাস ধরে চলা প্রস্তুতির অংশ হিসেবে গতকাল খিলগাঁও জামিয়া ইসলামিয়া মাখজানুল উলুম মাদ্রাসায় মহাসমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
হেফাজত জানিয়েছে, তাদের মূল দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন বাতিল
- সংবিধানের প্রস্তাবনায় ‘আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনর্বহাল
- ফিলিস্তিন ও ভারতে মুসলিম নিপীড়ন বন্ধ
- শাপলা চত্বর, মোদি সফর ঘিরে সহিংসতা এবং অন্যান্য ঘটনার বিচার
- ফ্যাসিবাদের আমলে দায়ের করা ‘মিথ্যা’ মামলা প্রত্যাহার
হেফাজতের দাবি, বর্তমানে তাদের নেতাদের বিরুদ্ধে সারা দেশে প্রায় ৩০০টি মামলা রয়েছে। সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের মতে, এসব মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রসূত এবং ভবিষ্যতের সরকারগুলোর কাছে তা হেফাজতের ওপর চাপ প্রয়োগের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
সংগঠনটি বলছে, ৫ মে তাদের জন্য ‘বিশেষ দিবস’ নয় এবং ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে এমন দিবস পালনের রেওয়াজও নেই। তাই জনদুর্ভোগ এড়াতে তারা ৩ মে ছুটির দিনেই মহাসমাবেশ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়।
রাজধানীতে বাড়তি চাপ ও নিরাপত্তা সতর্কতা
টানা তিন দিনের এই তিনটি জনসমাবেশে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যাপক জনসমাগম ঘটতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সক্রিয় রয়েছে বলে জানা গেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সমাবেশগুলো একদিকে যেমন সরকার ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক চাপ বাড়াতে পারে, তেমনি হেফাজতের মতো ধর্মভিত্তিক সংগঠন তাদের অবস্থান ও শক্তিমত্তা দেখাতে চাইছে।
তিনটি সমাবেশই হচ্ছে ছুটির দিনে, যার ফলে রাজধানীতে যানবাহন চলাচল, জনজীবন ও নিরাপত্তাব্যবস্থায় বাড়তি চাপ সৃষ্টি হতে পারে বলে ধারণা সংশ্লিষ্ট মহলের।