ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর বিষয়ে বিএনপি নেতা ইশরাকের পক্ষে হাইকোর্টের আদেশ আসায় আনন্দের জোয়ারে ভাসছে যমুনার সামনে আন্দোলনরত নেতাকর্মীরা।
আজ বৃহস্পতিবার এ খবর পৌঁছলে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে থাকা আন্দোলনরত নেতাকর্মীরা উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন। চারদিক থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে উৎসবে শামিল হতে থাকেন ইশরাকের সমর্থকরা। বর্তমানে নানা স্লোগানে পুরো এলাকা মুখর করে রেখেছেন তারা।
এর আগে, আদালতের রায় অনুযায়ী ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র ঘোষণার দাবিতে বুধবার সন্ধ্যা থেকেই ইশরাক সমর্থকরা যমুনার সামনে অবস্থান নেন। রাতেও সেখানে ছিলেন। এতে যোগ দিয়ে ইশরাক ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, দাবি না আদায় হওয়া পর্যন্ত যমুনা ছাড়বেন না।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই দ্বিতীয় দিনের মতো যমুনার সামনে রয়েছেন তারা। বৃষ্টিতেও মাঠ ছাড়েননি। ইশরাককে মেয়র ঘোষণার জন্য গত এক সপ্তাহ ধরে নগর ভবন ও হাইকোর্ট এলাকাসহ বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করছিলেন তার সমর্থকরা।
এদিকে, বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে শপথ না পড়ানোর নির্দেশনা চেয়ে দায়ের করা রিট খারিজ করে দেন বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ। এ আদেশের ফলে, ইশরাক হোসেনকে শপথ দিতে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবীরা।
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়। তাতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস মেয়র নির্বাচিত হন। নির্বাচন কমিশন ২ ফেব্রুয়ারি ভোটের ফলাফলের গেজেট প্রকাশ করে। এরপর শপথ নিয়ে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন তাপস।
সেই নির্বাচনে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র পদে তাপস পেয়েছিলেন সোয়া চার লাখ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী ইশরাক পান দুই লাখ ৩৬ হাজার ভোট। নির্বাচনে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ফল বাতিল চেয়ে ২০২০ সালের ৩ মার্চ মামলা করেন বিএনপি নেতা ইশরাক।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের আগস্ট মাসে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের সব সিটি করপোরেশনের মেয়রদের অপসারণ করা হয়। এরপর ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন অতিরিক্ত সচিব শাহজাহান মিয়া।
এর মধ্যে গত ২৭ মার্চ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২০২০ সালের নির্বাচনে ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী ঘোষণার ফল বাতিল করে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করেন ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম। এ বিষয়ে ১০ দিনের মধ্যে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দেন আদালত। এ রায় পাওয়ার পর ২৭ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন।
এদিকে, গেজেট প্রকাশের দিন ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করে দেওয়া রায় ও ডিক্রির বিরুদ্ধে আপিল করতে আইনি নোটিশ দেন রফিকুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদ নামে দুই ব্যক্তি। নোটিশে গেজেট প্রকাশ এবং ইশরাককে শপথ নেওয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয়।
তখন ওই দুই ব্যক্তির আইনজীবী বলেন, যথাযথ প্রক্রিয়া না মেনে দ্রুত রায়টি দেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করেছিলাম, ইসি এই আদেশকে চ্যালেঞ্জ করবে। চ্যালেঞ্জ করল না। আবার খবরে দেখলাম, আইন উপদেষ্টা বলছিলেন, আইন মন্ত্রণালয়ের যে মতামত চাওয়া হয়েছিল, সেজন্য অপেক্ষা না করে এই নোটিফিকেশন জারি করে দেওয়া হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল এমন কোনো আদেশ দিতে পারেন না যে আদেশের কোনো কার্যকারিতা নেই। এখানে টার্ম শেষ হয়ে গেছে। অধ্যাদেশের মাধ্যমে মেয়র পদশূন্য করে দেওয়া হয়েছে।
পরে হাইকোর্টে রিট করেন মামুনুর রশিদ। রিটে ২৭ মার্চের রায় এবং ২৭ এপ্রিলের গেজেট কেন বেআইনি হবে না এবং ইশরাক হোসেনের শপথ পরিচালনা থেকে বিরত রাখার নির্দেশনা কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে। এ রুল বিবেচনাধীন থাকা অবস্থায় রায় ও গেজেটের কার্যক্রম স্থগিত চাওয়া হয়।