ময়মনসিংহ , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বললেন শেখ হাসিনাকে ফেরাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়া হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত শিশু আরাফাত মারা গেছে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তদন্ত কমিশন গঠন: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ঘন কুয়াশায় নাটোরে ৬ ট্রাকে সংঘর্ষ, নিহত ১ আহত ৭ ডলার বাজারে অস্থিরতা, লেনদেনের তথ্য চায় বাংলাদেশ ব্যাংক সাবেক এমপি পোটন রিমান্ডে যুবদল নেতা হত্যা মামলায় টিউলিপ সিদ্দিককে যুক্তরাজ্যে জিজ্ঞাসাবাদ,৪ বিলিয়ন পাউন্ড আত্মসাৎ চিরকুট লিখে বীর মুক্তিযোদ্ধা আত্মহত্যা করলেন দুদকের মামলা স্ত্রী-কন্যাসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এসকে সুরের বিরুদ্ধে ময়মনসিংহে সরকারি প্রতিষ্ঠানে চলছিল অস্ত্র-মাদক কেনাবেচা
নোটিশ :
প্রতিটি জেলা- উপজেলায় একজন করে ভিডিও প্রতিনিধি আবশ্যক। যোগাযোগঃ- Email- matiomanuss@gmail.com. Mobile No- 017-11684104, 013-03300539.

দিনাজপুরে বাঁশের চালে রান্না হচ্ছে ভাত-পায়েস

  • Md. Raduan Ahammed
  • আপডেট সময় ০২:২২:১৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
  • ১৬৭ বার পড়া হয়েছে

দিনাজপুরে বাঁশের চালে রান্না হচ্ছে ভাত-পায়েস

স্টফ রিপোর্টার:

দিনাজপুরে ধান নয়, বাঁশের ফুলের বীজ থেকে তৈরি হচ্ছে চাল। আর তা দিয়ে রান্না হচ্ছে ভাত, পায়েস। আবার সেই চালের আটা তৈরি করে বানানো হচ্ছে রুটি। বাঁশ ও কঞ্চিতে ঝুলছে ধানসদৃশ দানাদার ফল। সেই ফল সংগ্রহ করা হচ্ছে বস্তায়। ময়লা পরিষ্কার করে রোদে শুকিয়ে চলছে মাড়াই। এভাবেই তৈরি করা হচ্ছে বাঁশের চাল। ঘটনাটি দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার এলুয়াড়ী ইউনিয়নের পাকাপান গ্রামের। বাঁশের ফল থেকে ধানসদৃশ দানাদার শস্য সংগ্রহ করে এলাকায় হইচই ফেলে দিয়েছেন গ্রামের তরুণ সাঞ্জু রায় (২৫)। কৃষক ছিমল রায়ের ছেলে। গত এক সপ্তাহে প্রায় সাত মণ দানাদার শস্য সংগ্রহ করেছেন। ইতোমধ্যে দুই মণ চাল পেয়েছেন। নিজে যেমন রান্না করে খেয়েছেন, তেমনি আশপাশের মানুষের কাছে বিক্রিও করেছেন প্রতি কেজি ৪০ টাকায়। প্রতিবেশী বৃদ্ধের কাছে গল্প শুনে বাঁশফুলের বীজ থেকে দানা (চাল) সংগ্রহ করে এলাকায় তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। বিষয়টি জানতে পেরে উৎসুক এলাকাবাসীর মধ্যে এ বীজ সংগ্রহের হিড়িক পড়েছে। পাকাপান গ্রামের সাঞ্জু রায় ও প্রতিবেশী বৃদ্ধ কালিচন্দ্র রায় (৭০) দুজনই পেশায় দিনমজুর। তিনি সাঞ্জু রায়কে গল্প শোনান যে, ১৯৭১ সালে এরকম বাঁশফুলের দানা থেকে চাল সংগ্রহ করতে দেখেছেন। সে সময় অনেকেই এ দানা চাল হিসেবে ভাত রান্না করে খেয়েছেন। সাঞ্জু রায়ের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির পাশের ঝাড় থেকে বাঁশের বীজ সংগ্রহ করছেন তিনি। তার মা বাঁশফুলগুলো কুলা দিয়ে ঝেড়ে পরিষ্কার করছেন। সেই বীজ পানিতে ধুয়ে সাঞ্জু রায় পরিষ্কার করে রোদে শুকাচ্ছেন। এরপর সেগুলো ধানের হাসকিং মিলে ভাঙাবেন। বাড়ির উঠানে প্রস্তুতকৃত এমন কয়েকটি বীজের বস্তা দেখা যায়। কিছু দানা ভাঙিয়ে রেখেছেন। গ্রামের অনেকেই তা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।বাঁশের ফুল থেকে চাল উৎপাদন করার বিষয়টি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। এটি দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে দলে দলে উৎসুক মানুষ ভিড় করছেন তার বাড়িতে।

সাঞ্জু রায় বলেন, বাঁশের কঞ্চিতে ফলগুলো শুকিয়ে মাটিতে পড়ে যাচ্ছে। মাঝেমধ্যে কঞ্চি ধরে নাড়া দিলে ঝরে পড়ছে। এ পর্যন্ত এক দিনে সর্বোচ্চ ২০ কেজি সংগ্রহ করেছেন। এক কেজিতে চাল পেয়েছেন আধা কেজির মতো। রান্না করে খেয়েছেন। ভাতের মতোই স্বাদ। পায়েসও রান্না করেছেন। আটা বানিয়ে রুটিও খেয়েছেন। ইতোমধ্যে আড়াই হাজার টাকার চাল বিক্রিও করেছেন। এখনও পাঁচ বস্তা মজুত আছে। ভালোই লাগছে। বাঁশগাছে পাওয়া দানাদার শস্যের চাল নিয়ে গেছেন পাড়ার সুনীল রায়, লিপি রানী ও কামিনী বালা। তারা জানান, সাঞ্জুকে ধানের চাল বদল দিয়ে বাঁশের চাল নিয়েছেন এক কেজি করে। রান্না করে খেয়েছেনও। খুবই সুস্বাদু। খিচুড়িও রান্না করে খেয়েছেন বলে জানান কামিনী বালা। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) আঞ্চলিক কার্যালয় রংপুরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. রকিবুল হাসান বলেন, বাঁশের বীজ থেকে চাল উৎপাদন হয় এই প্রথম জানলাম। দেশের কোথাও এমন ঘটনা শোনা যায়নি। এটি বিরল ঘটনা। বিষয়টি নিয়ে আমরা শিগগিরই গবেষণার কাজ শুরু করব।দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নুরুজ্জামান জানান, বাঁশ এবং ধান একই প্রজাতির। ৫০ বছরে একটি বাঁশঝাড়ে একবার ফল আসে। পরে আর সেই বাঁশঝাড়টি আর টিকে থাকে না। তবে বাঁশফলের সেই দানা থেকে অবিকল চালের মতো দানা হয়। যার ভাতের স্বাদ ধানের চালের ভাতের মতোই। তবে এটি সম্ভাবনাময় নয়।বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের সিভিকালচার জেনেটিকস বিভাগের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, বাঁশে সাধারণত ফুল হয় না। তবে প্রজাতিভেদে ২৫ থেকে ৬০ বছর পরে ফুল আসতে পারে। ফুল আসা মানেই ওই বাঁশের জীবনচক্র শেষ হওয়া। বাঁশফলটা দেখতে অনেকটা ধানের বীজের মতো। এটি মূলত ইঁদুরের প্রিয় খাবার।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বললেন শেখ হাসিনাকে ফেরাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়া হয়েছে

দিনাজপুরে বাঁশের চালে রান্না হচ্ছে ভাত-পায়েস

আপডেট সময় ০২:২২:১৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

স্টফ রিপোর্টার:

দিনাজপুরে ধান নয়, বাঁশের ফুলের বীজ থেকে তৈরি হচ্ছে চাল। আর তা দিয়ে রান্না হচ্ছে ভাত, পায়েস। আবার সেই চালের আটা তৈরি করে বানানো হচ্ছে রুটি। বাঁশ ও কঞ্চিতে ঝুলছে ধানসদৃশ দানাদার ফল। সেই ফল সংগ্রহ করা হচ্ছে বস্তায়। ময়লা পরিষ্কার করে রোদে শুকিয়ে চলছে মাড়াই। এভাবেই তৈরি করা হচ্ছে বাঁশের চাল। ঘটনাটি দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার এলুয়াড়ী ইউনিয়নের পাকাপান গ্রামের। বাঁশের ফল থেকে ধানসদৃশ দানাদার শস্য সংগ্রহ করে এলাকায় হইচই ফেলে দিয়েছেন গ্রামের তরুণ সাঞ্জু রায় (২৫)। কৃষক ছিমল রায়ের ছেলে। গত এক সপ্তাহে প্রায় সাত মণ দানাদার শস্য সংগ্রহ করেছেন। ইতোমধ্যে দুই মণ চাল পেয়েছেন। নিজে যেমন রান্না করে খেয়েছেন, তেমনি আশপাশের মানুষের কাছে বিক্রিও করেছেন প্রতি কেজি ৪০ টাকায়। প্রতিবেশী বৃদ্ধের কাছে গল্প শুনে বাঁশফুলের বীজ থেকে দানা (চাল) সংগ্রহ করে এলাকায় তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। বিষয়টি জানতে পেরে উৎসুক এলাকাবাসীর মধ্যে এ বীজ সংগ্রহের হিড়িক পড়েছে। পাকাপান গ্রামের সাঞ্জু রায় ও প্রতিবেশী বৃদ্ধ কালিচন্দ্র রায় (৭০) দুজনই পেশায় দিনমজুর। তিনি সাঞ্জু রায়কে গল্প শোনান যে, ১৯৭১ সালে এরকম বাঁশফুলের দানা থেকে চাল সংগ্রহ করতে দেখেছেন। সে সময় অনেকেই এ দানা চাল হিসেবে ভাত রান্না করে খেয়েছেন। সাঞ্জু রায়ের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির পাশের ঝাড় থেকে বাঁশের বীজ সংগ্রহ করছেন তিনি। তার মা বাঁশফুলগুলো কুলা দিয়ে ঝেড়ে পরিষ্কার করছেন। সেই বীজ পানিতে ধুয়ে সাঞ্জু রায় পরিষ্কার করে রোদে শুকাচ্ছেন। এরপর সেগুলো ধানের হাসকিং মিলে ভাঙাবেন। বাড়ির উঠানে প্রস্তুতকৃত এমন কয়েকটি বীজের বস্তা দেখা যায়। কিছু দানা ভাঙিয়ে রেখেছেন। গ্রামের অনেকেই তা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।বাঁশের ফুল থেকে চাল উৎপাদন করার বিষয়টি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। এটি দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে দলে দলে উৎসুক মানুষ ভিড় করছেন তার বাড়িতে।

সাঞ্জু রায় বলেন, বাঁশের কঞ্চিতে ফলগুলো শুকিয়ে মাটিতে পড়ে যাচ্ছে। মাঝেমধ্যে কঞ্চি ধরে নাড়া দিলে ঝরে পড়ছে। এ পর্যন্ত এক দিনে সর্বোচ্চ ২০ কেজি সংগ্রহ করেছেন। এক কেজিতে চাল পেয়েছেন আধা কেজির মতো। রান্না করে খেয়েছেন। ভাতের মতোই স্বাদ। পায়েসও রান্না করেছেন। আটা বানিয়ে রুটিও খেয়েছেন। ইতোমধ্যে আড়াই হাজার টাকার চাল বিক্রিও করেছেন। এখনও পাঁচ বস্তা মজুত আছে। ভালোই লাগছে। বাঁশগাছে পাওয়া দানাদার শস্যের চাল নিয়ে গেছেন পাড়ার সুনীল রায়, লিপি রানী ও কামিনী বালা। তারা জানান, সাঞ্জুকে ধানের চাল বদল দিয়ে বাঁশের চাল নিয়েছেন এক কেজি করে। রান্না করে খেয়েছেনও। খুবই সুস্বাদু। খিচুড়িও রান্না করে খেয়েছেন বলে জানান কামিনী বালা। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) আঞ্চলিক কার্যালয় রংপুরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. রকিবুল হাসান বলেন, বাঁশের বীজ থেকে চাল উৎপাদন হয় এই প্রথম জানলাম। দেশের কোথাও এমন ঘটনা শোনা যায়নি। এটি বিরল ঘটনা। বিষয়টি নিয়ে আমরা শিগগিরই গবেষণার কাজ শুরু করব।দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নুরুজ্জামান জানান, বাঁশ এবং ধান একই প্রজাতির। ৫০ বছরে একটি বাঁশঝাড়ে একবার ফল আসে। পরে আর সেই বাঁশঝাড়টি আর টিকে থাকে না। তবে বাঁশফলের সেই দানা থেকে অবিকল চালের মতো দানা হয়। যার ভাতের স্বাদ ধানের চালের ভাতের মতোই। তবে এটি সম্ভাবনাময় নয়।বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের সিভিকালচার জেনেটিকস বিভাগের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, বাঁশে সাধারণত ফুল হয় না। তবে প্রজাতিভেদে ২৫ থেকে ৬০ বছর পরে ফুল আসতে পারে। ফুল আসা মানেই ওই বাঁশের জীবনচক্র শেষ হওয়া। বাঁশফলটা দেখতে অনেকটা ধানের বীজের মতো। এটি মূলত ইঁদুরের প্রিয় খাবার।