ময়মনসিংহ , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :
প্রতিটি জেলা- উপজেলায় একজন করে ভিডিও প্রতিনিধি আবশ্যক। যোগাযোগঃ- Email- matiomanuss@gmail.com. Mobile No- 017-11684104, 013-03300539.

মৌলভীবাজারে দুটি উপজেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত চারটি নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর

  • ঊম্মে সালমা
  • আপডেট সময় ০২:৪৩:৪৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ জুন ২০২৪
  • ৬০ বার পড়া হয়েছে

সংগৃহীত ছবি

অনলাইন নিউজ:

ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ফুলেফেঁপে উঠছে হাকালুকি হাওর। মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার হাকালুকিপারের বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামগুলোয় পানি ঢুকছে। এ ছাড়া জুড়ী উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।এদিকে জেলার মনু, ধলাই, কুশিয়ারা ও জুড়ী—এই চারটি নদ-নদীর চারটি স্থানে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।ঘরে বন্যার পানি ঢোকায় বড়লেখার বিভিন্ন ইউনিয়নের দেড় শতাধিক পরিবার বাড়ি ছেড়েছে।তারা গবাদিপশুসহ আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে। অনেকে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে গিয়ে উঠেছে। স্থানীয় প্রশাসন থেকে ২২টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

টানা বৃষ্টিতে টিলাধসের আশঙ্কা থাকায় পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী পরিবারকে নিরাপদে সরে যেতে প্রশাসন থেকে মাইকিং করা হয়েছে।বড়লেখা-কুলাউড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের পানিধারসহ বেশ কয়েকটি স্থান পানিতে তলিয়ে যান চলাচল ব্যাহত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত থেমে থেমে বৃষ্টি ঝরেছে। ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে উপজেলার হাকালুকি হাওরপারের তালিমপুর, বর্ণী, সুজানগর, দাসেরবাজার, উত্তর ও দক্ষিণ শাহবাজপুর প্রায় সম্পূর্ণ এবং অন্যান্য ইউনিয়নের আংশিক এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। নতুন নতুন এলাকায় পানি ঢুকছে।

উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন জানান, তাঁর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে পানি ঢুকেছে। এর মধ্যে ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ড সবচেয়ে বেশি বন্যাকবলিত হয়েছে। প্রায় এক হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এসব পরিবারগুলোকে খিচুড়ি রান্না করে খাওয়ানো হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনা খাবার পাঠানো হচ্ছে। এ ছাড়া পাহাড়-টিলার পাদদেশ ঝুঁকি নিয়ে বসবাসকারী পরিবারগুলোকে নিরাপদে সরে যেতে মাইকিং করা হয়েছে।বর্ণী ইউপির চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন জানিয়েছেন, তাঁর পুরো ইউনিয়ন বন্যাকবলিত। বড়লেখা সদরের সঙ্গে ইউনিয়নের যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ইউনিয়নের মানুষের জীবনযাত্রা প্রায় অচল হয়ে গেছে। প্রায় ২০০ পরিবার পানিবন্দী রয়েছে। পানিবন্দী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। এরই মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ২০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। পানি বাড়তে থাকলে পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জুড়ীর মক্তদীর বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও জুড়ী সরকারি উচ্চবিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, মক্তদীর বালিকা উচ্চবিদ্যালয় জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। দোতলা ও তিনতলার শ্রেণিকক্ষগুলো আশ্রয়কেন্দ্র করা হয়েছে। দুটি আশ্রয়কেন্দ্রে আশপাশের বন্যাপ্লাবিত বিভিন্ন এলাকার লোকজন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সেখানে উঠছেন। বস্তায় কাপড়চোপড়, কাঁথা-বালিশ, রান্নার বাসন ভরে নিয়ে এসেছেন। কেউ কেউ সঙ্গে নিয়ে আসা হাঁস, মোরগ–মুরগি ও ছাগল বারান্দার খুঁটিতে বেঁধে রেখেছেন। আশ্রয়কেন্দ্রে বেঞ্চ জোড়া দিয়ে খাট তৈরি করা হয়েছে। বারান্দায় মাটির চুলা বসিয়ে কেউ কেউ রান্নার আয়োজন করেছেন।

মক্তদীর বালিকা উচ্চবিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রের সামনে কথা হয় আয়শা বেগমের সঙ্গে। পাশের একটি কলোনিতে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন তাঁরা। স্বামী দেলোয়ার মিয়া রিকশা চালান। আয়শা বলেন, ‘সকালে উঠানে পানি আছিল। আস্তে আস্তে ঘরো উঠা আরম্ভ করল। কোনোমতে রই গেছিলাম। পানি বাড়ায় আর টিকা গেছে না। জান বাঁচাইবার লাগি ইশকুলো আইয়া উঠছি।পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) মৌলভীবাজার সূত্রে জানা গেছে, মৌলভীবাজারে মনু, ধলাই, জুড়ী ও কুশিয়ারা নদীর চারটি স্থানে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। আজ বুধবার সকাল নয়টার তথ্য অনুযায়ী, মনু নদ মৌলভীবাজার শহরের কাছে চাঁদনীঘাটে বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এখানে বিপৎসীমা ১১ দশমিক ৩০ সেন্টিমিটার। কমলগঞ্জে ধলাই নদ রেলওয়ে ব্রিজের কাছে বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এখানে বিপৎসীমা ১৯ দশমিক ৩৫ সেন্টিমিটার। কুশিয়ারা নদী শেরপুরে বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এখানে বিপৎসীমা হচ্ছে ৮ দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটার এবং জুড়ী নদী প্রবাহিত হচ্ছে ১৯৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। জুড়ীতে বিপৎসীমা হচ্ছে ৮ দশমিক ৯৩ সেন্টিমিটার।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

মৌলভীবাজারে দুটি উপজেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত চারটি নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর

আপডেট সময় ০২:৪৩:৪৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ জুন ২০২৪

অনলাইন নিউজ:

ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ফুলেফেঁপে উঠছে হাকালুকি হাওর। মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার হাকালুকিপারের বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামগুলোয় পানি ঢুকছে। এ ছাড়া জুড়ী উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।এদিকে জেলার মনু, ধলাই, কুশিয়ারা ও জুড়ী—এই চারটি নদ-নদীর চারটি স্থানে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।ঘরে বন্যার পানি ঢোকায় বড়লেখার বিভিন্ন ইউনিয়নের দেড় শতাধিক পরিবার বাড়ি ছেড়েছে।তারা গবাদিপশুসহ আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে। অনেকে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে গিয়ে উঠেছে। স্থানীয় প্রশাসন থেকে ২২টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

টানা বৃষ্টিতে টিলাধসের আশঙ্কা থাকায় পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী পরিবারকে নিরাপদে সরে যেতে প্রশাসন থেকে মাইকিং করা হয়েছে।বড়লেখা-কুলাউড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের পানিধারসহ বেশ কয়েকটি স্থান পানিতে তলিয়ে যান চলাচল ব্যাহত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত থেমে থেমে বৃষ্টি ঝরেছে। ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে উপজেলার হাকালুকি হাওরপারের তালিমপুর, বর্ণী, সুজানগর, দাসেরবাজার, উত্তর ও দক্ষিণ শাহবাজপুর প্রায় সম্পূর্ণ এবং অন্যান্য ইউনিয়নের আংশিক এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। নতুন নতুন এলাকায় পানি ঢুকছে।

উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন জানান, তাঁর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে পানি ঢুকেছে। এর মধ্যে ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ড সবচেয়ে বেশি বন্যাকবলিত হয়েছে। প্রায় এক হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এসব পরিবারগুলোকে খিচুড়ি রান্না করে খাওয়ানো হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনা খাবার পাঠানো হচ্ছে। এ ছাড়া পাহাড়-টিলার পাদদেশ ঝুঁকি নিয়ে বসবাসকারী পরিবারগুলোকে নিরাপদে সরে যেতে মাইকিং করা হয়েছে।বর্ণী ইউপির চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন জানিয়েছেন, তাঁর পুরো ইউনিয়ন বন্যাকবলিত। বড়লেখা সদরের সঙ্গে ইউনিয়নের যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ইউনিয়নের মানুষের জীবনযাত্রা প্রায় অচল হয়ে গেছে। প্রায় ২০০ পরিবার পানিবন্দী রয়েছে। পানিবন্দী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। এরই মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ২০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। পানি বাড়তে থাকলে পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জুড়ীর মক্তদীর বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও জুড়ী সরকারি উচ্চবিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, মক্তদীর বালিকা উচ্চবিদ্যালয় জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। দোতলা ও তিনতলার শ্রেণিকক্ষগুলো আশ্রয়কেন্দ্র করা হয়েছে। দুটি আশ্রয়কেন্দ্রে আশপাশের বন্যাপ্লাবিত বিভিন্ন এলাকার লোকজন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সেখানে উঠছেন। বস্তায় কাপড়চোপড়, কাঁথা-বালিশ, রান্নার বাসন ভরে নিয়ে এসেছেন। কেউ কেউ সঙ্গে নিয়ে আসা হাঁস, মোরগ–মুরগি ও ছাগল বারান্দার খুঁটিতে বেঁধে রেখেছেন। আশ্রয়কেন্দ্রে বেঞ্চ জোড়া দিয়ে খাট তৈরি করা হয়েছে। বারান্দায় মাটির চুলা বসিয়ে কেউ কেউ রান্নার আয়োজন করেছেন।

মক্তদীর বালিকা উচ্চবিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রের সামনে কথা হয় আয়শা বেগমের সঙ্গে। পাশের একটি কলোনিতে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন তাঁরা। স্বামী দেলোয়ার মিয়া রিকশা চালান। আয়শা বলেন, ‘সকালে উঠানে পানি আছিল। আস্তে আস্তে ঘরো উঠা আরম্ভ করল। কোনোমতে রই গেছিলাম। পানি বাড়ায় আর টিকা গেছে না। জান বাঁচাইবার লাগি ইশকুলো আইয়া উঠছি।পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) মৌলভীবাজার সূত্রে জানা গেছে, মৌলভীবাজারে মনু, ধলাই, জুড়ী ও কুশিয়ারা নদীর চারটি স্থানে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। আজ বুধবার সকাল নয়টার তথ্য অনুযায়ী, মনু নদ মৌলভীবাজার শহরের কাছে চাঁদনীঘাটে বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এখানে বিপৎসীমা ১১ দশমিক ৩০ সেন্টিমিটার। কমলগঞ্জে ধলাই নদ রেলওয়ে ব্রিজের কাছে বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এখানে বিপৎসীমা ১৯ দশমিক ৩৫ সেন্টিমিটার। কুশিয়ারা নদী শেরপুরে বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এখানে বিপৎসীমা হচ্ছে ৮ দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটার এবং জুড়ী নদী প্রবাহিত হচ্ছে ১৯৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। জুড়ীতে বিপৎসীমা হচ্ছে ৮ দশমিক ৯৩ সেন্টিমিটার।