জাপানের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একজন নারী প্রধানমন্ত্রী পেতে পারে দেশটি। ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) নেতৃত্ব পদে কট্টর রক্ষণশীল নেতা সানায়ে তাকাইচি অন্যতম শীর্ষস্থানীয় প্রার্থী হিসেবে উঠে এসেছেন। এমন এক দেশে এটি একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক, যেখানে নারী নেতৃত্ব এখনো বিরল।
আগামী ৪ অক্টোবর এলডিপির ভোট অনুষ্ঠিত হবে। জনমত জরিপে দীর্ঘদিন ধরেই তাকাইচি এগিয়ে রয়েছেন, বিশেষ করে কৃষিমন্ত্রী শিনজিরো কোইজুমির সঙ্গে তার তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে। গত বছর তাকাইচি অল্পের জন্য বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার কাছে রানঅফ পর্বে হেরে গিয়েছিলেন, কিন্তু এবার তার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। যদি তাকাইচি দলীয় ভোটের পাশাপাশি সংসদীয় ভোটেও জয় পান, তবে তিনিই হবেন জাপানের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। রাজনৈতিক লিঙ্গ সমতার দিক থেকে পিছিয়ে থাকা জাপানের জন্য এটি একটি যুগান্তকারী ঘটনা হতে পারে।
নারা প্রিফেকচারের বাসিন্দা তাকাইচি জানিয়েছেন যে, যুক্তরাজ্যের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার তার প্রেরণার উৎস। একসময় নারী ইস্যুতে সক্রিয় না থাকলেও, সাম্প্রতিক সময়ে তাকাইচির অবস্থানে পরিবর্তন এসেছে। শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি ঘোষণা করেন যে, বেবিসিটারের খরচ আংশিক করছাড়ের আওতায় আনা হবে এবং যেসব কোম্পানি ইন-হাউস চাইল্ড কেয়ার দেবে, তাদের কর ছাড় দেওয়া হবে।
গত বছর কোইজুমি সংসদে এমন একটি প্রস্তাবের পক্ষে ছিলেন, যেখানে দম্পতিরা চাইলে আলাদা পদবি রাখতে পারবে, যা লিঙ্গ সমতার একটি পরীক্ষামূলক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হয়। তবে, তাকাইচি এই আইন পরিবর্তনের বিরুদ্ধে ছিলেন। যদিও শুক্রবারের ৯০ মিনিটের সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
অনেক বিশ্লেষক বলছেন যে, যদি তাকাইচি প্রধানমন্ত্রী হন, তবে এটি ‘গ্লাস ক্লিফ’ ঘটনার একটি উদাহরণ হতে পারে, যেখানে নারীদের সংকটকালীন সময়ে নেতৃত্বে বসানো হয়, যখন ব্যর্থতার ঝুঁকি বেশি থাকে। দুইটি নির্বাচনী বিপর্যয়ের ফলে এলডিপি এখন পার্লামেন্টের দুই কক্ষেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে। পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীকে বাজেট ও অর্থনৈতিক প্যাকেজ পাস করাতে একটি বিভক্ত সংসদ পরিচালনা করতে হবে এবং বিরোধীদের সঙ্গে সমঝোতায় যেতে হবে।
অনেকেই বলছেন, এই প্রশাসনের আয়ু সংক্ষিপ্ত হতে পারে এবং অনাস্থা ভোটের আশঙ্কা রয়েছে। এই ধরনের পরিস্থিতি আগেও অন্যান্য উন্নত গণতন্ত্রেও দেখা গেছে, যেমন ২০১৬ সালে ব্রেক্সিট-পরবর্তী সংকটে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হন থেরেসা মে এবং ২০২২ সালে অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেই দায়িত্ব নেন লিজ ট্রাস। ২০২৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার লিবারেল পার্টির ইতিহাসে প্রথম নারী নেতা হন সুসান লেই।