ময়মনসিংহ , বুধবার, ০৬ অগাস্ট ২০২৫, ২১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :
প্রতিটি জেলা- উপজেলায় একজন করে ভিডিও প্রতিনিধি আবশ্যক। যোগাযোগঃ- Email- matiomanuss@gmail.com. Mobile No- 017-11684104, 013-03300539.

সাঁওতালপাড়া দুই দফা হামলার পর মানুষশূন্য

  • ডিজিটাল রিপোর্ট
  • আপডেট সময় ১০:৩৫:২৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ অগাস্ট ২০২৫
  • ১৮ বার পড়া হয়েছে

হামলায় টিন ফুটো হয়ে গেছে। ভেঙে পড়েছে ঘরের ছাউনি-বাঁশ। রান্না ঘরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আলু, পেয়াঁজসহ যাবতীয় রান্নার সামগ্রী। কিছু সময় ডাকাডাকি করেও কারো সাড়া পাওয়া যায়নি। পরপর দু’দফা হামলার পর এই চিত্র দেখা গেল রাজশাহীর পবা উপজেলার সাঁওতালপাড়া বাগসারা গ্রামের একটি বাড়িতে।

সোমবার (৪ আগস্ট) পাড়ায় গিয়ে শুধু একটি বাড়িতে এক বৃদ্ধাকে দেখা গেছে। ওই এলাকার বাকি ১১টি বাড়ি ছিল একেবারেই ফাঁকা। বেশ কয়েকটি বাড়ি ভাঙচুর করা অবস্থায় দেখা গেছে। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে সেসব ঘরের জিনিসপত্র।

গত বুধবার (২৩ জুলাই) সকালে এই বাবলুর সঙ্গে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে সাঁওতালপাড়ার বাসিন্দাদের। এর জের ধরে দুপুরে এবং সন্ধ্যায় দুই দফা হামলা হয় এ পাড়ায়। হামলার পরে সবাই বাড়ি ছেড়ে গেছেন।

পাড়ার পরের বাড়িগুলোতে কাউকে পাওয়া যায়নি। কোথাও বিদ্যুৎ বিল ঝুলছে, কোথাও দরজা তালাবদ্ধ, কোথাও দরজা খোলা, তবে কেউ নেই। কোনো ঘরে বিছানায় মশারি টানানো, মেঝেতে পচে যাওয়া ভাত, আবার কোথাও টিনের ঘরে হামলার চিহ্ন রয়েছে স্পষ্ট।

পুলের ওপর দিয়ে একজন ভ্যানচালক হেঁটে যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ঘটনার দিন সকালে পাড়ার কয়েকজন চোলাই (দেশি) মদ খাচ্ছিলেন। সেই সময় পাশের জমির মালিক বাবলু তাদের নিষেধ করলে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে এক নারী বাবলুর শার্টের কলার ধরে। এরপর বাবলুকে মারধর করা হয়। এরপর বাবলু লোকজন নিয়ে এসে দুই দফা হামলা করেন।

এ বিষয়ে কথা হয় অভিযুক্ত বাবলুর স্ত্রী ডলি বেগমের সঙ্গে। তিনি জানান, তার স্বামী বাজারে গেছেন, তিনি শ্রমিকদের খাবার দিতে এসেছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ওরা আমাদের জমির সামনে বাড়ি করেছে, খুব অত্যাচার করে। মদ খেতে নিষেধ করায় আমার স্বামীকে মেরেছে। পরে আমার স্বামীও লোকজন নিয়ে আসে। কিন্তু কাউকে মারেনি। ওরাই ভয়ে পালিয়ে গেছে।’ ঘরবাড়ি ভাঙচুরের বিষয়ে ডলি দাবি করেন, ‘ওরা নিজেরাই ভেঙেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশ এসে বলেছে, সাঁওতালরা থাকবে, কেউ কিছু বলবে না। এতই যদি দরদ হয়, তাহলে এদের নিয়ে গিয়ে বাড়ি করে দিক।’

মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয় এই পাড়ার সর্দার শ্যামল মুর্মুর সঙ্গে। তিনি জানান, আগে তারা গোদাগাড়ীর পাকড়ি এলাকায় থাকতেন। কৃষিকাজের জন্য বাগসারা এলাকায় আসতেন। দুরত্বের কারণে স্থানীয় কাউন্সিলরের পরামর্শে তারা এই জায়গায় ঘর তোলেন। হামলার পর যে যেদিকে পেরেছেন চলে গেছেন।

শ্যামল জানান, ‘ঘটনার দিন বাবলু পাড়ার এক নারীকে খারাপ ভাষায় গালি দিচ্ছিল। নিষেধ করায় সে ওই নারীকে মারে। তখন আমাদের যুবকরাও তাকে একটু মারে। এরপর বিকালে বাবলু লোকজন নিয়ে এসে আমাদের তিনজনকে মারে। পরে পুলিশ এসে সবাইকে শান্ত থাকার কথা বলে চলে যায়। কিন্তু সন্ধ্যার আগেই বাবলু আবার লোকজন নিয়ে এসে আমাদের ওপর হামলা করে।’

পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরাফাত আমান বলেন, থানার ওসিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

পবা থানার ওসি মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘উভয়পক্ষই থানায় অভিযোগ দিয়েছে। সাঁওতালদের কয়েকজন আহত হয়েছেন। এ ব্যাপারে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তে কারও সংশ্লিষ্টতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

সাঁওতালপাড়া দুই দফা হামলার পর মানুষশূন্য

আপডেট সময় ১০:৩৫:২৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ অগাস্ট ২০২৫

হামলায় টিন ফুটো হয়ে গেছে। ভেঙে পড়েছে ঘরের ছাউনি-বাঁশ। রান্না ঘরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আলু, পেয়াঁজসহ যাবতীয় রান্নার সামগ্রী। কিছু সময় ডাকাডাকি করেও কারো সাড়া পাওয়া যায়নি। পরপর দু’দফা হামলার পর এই চিত্র দেখা গেল রাজশাহীর পবা উপজেলার সাঁওতালপাড়া বাগসারা গ্রামের একটি বাড়িতে।

সোমবার (৪ আগস্ট) পাড়ায় গিয়ে শুধু একটি বাড়িতে এক বৃদ্ধাকে দেখা গেছে। ওই এলাকার বাকি ১১টি বাড়ি ছিল একেবারেই ফাঁকা। বেশ কয়েকটি বাড়ি ভাঙচুর করা অবস্থায় দেখা গেছে। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে সেসব ঘরের জিনিসপত্র।

গত বুধবার (২৩ জুলাই) সকালে এই বাবলুর সঙ্গে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে সাঁওতালপাড়ার বাসিন্দাদের। এর জের ধরে দুপুরে এবং সন্ধ্যায় দুই দফা হামলা হয় এ পাড়ায়। হামলার পরে সবাই বাড়ি ছেড়ে গেছেন।

পাড়ার পরের বাড়িগুলোতে কাউকে পাওয়া যায়নি। কোথাও বিদ্যুৎ বিল ঝুলছে, কোথাও দরজা তালাবদ্ধ, কোথাও দরজা খোলা, তবে কেউ নেই। কোনো ঘরে বিছানায় মশারি টানানো, মেঝেতে পচে যাওয়া ভাত, আবার কোথাও টিনের ঘরে হামলার চিহ্ন রয়েছে স্পষ্ট।

পুলের ওপর দিয়ে একজন ভ্যানচালক হেঁটে যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ঘটনার দিন সকালে পাড়ার কয়েকজন চোলাই (দেশি) মদ খাচ্ছিলেন। সেই সময় পাশের জমির মালিক বাবলু তাদের নিষেধ করলে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে এক নারী বাবলুর শার্টের কলার ধরে। এরপর বাবলুকে মারধর করা হয়। এরপর বাবলু লোকজন নিয়ে এসে দুই দফা হামলা করেন।

এ বিষয়ে কথা হয় অভিযুক্ত বাবলুর স্ত্রী ডলি বেগমের সঙ্গে। তিনি জানান, তার স্বামী বাজারে গেছেন, তিনি শ্রমিকদের খাবার দিতে এসেছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ওরা আমাদের জমির সামনে বাড়ি করেছে, খুব অত্যাচার করে। মদ খেতে নিষেধ করায় আমার স্বামীকে মেরেছে। পরে আমার স্বামীও লোকজন নিয়ে আসে। কিন্তু কাউকে মারেনি। ওরাই ভয়ে পালিয়ে গেছে।’ ঘরবাড়ি ভাঙচুরের বিষয়ে ডলি দাবি করেন, ‘ওরা নিজেরাই ভেঙেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশ এসে বলেছে, সাঁওতালরা থাকবে, কেউ কিছু বলবে না। এতই যদি দরদ হয়, তাহলে এদের নিয়ে গিয়ে বাড়ি করে দিক।’

মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয় এই পাড়ার সর্দার শ্যামল মুর্মুর সঙ্গে। তিনি জানান, আগে তারা গোদাগাড়ীর পাকড়ি এলাকায় থাকতেন। কৃষিকাজের জন্য বাগসারা এলাকায় আসতেন। দুরত্বের কারণে স্থানীয় কাউন্সিলরের পরামর্শে তারা এই জায়গায় ঘর তোলেন। হামলার পর যে যেদিকে পেরেছেন চলে গেছেন।

শ্যামল জানান, ‘ঘটনার দিন বাবলু পাড়ার এক নারীকে খারাপ ভাষায় গালি দিচ্ছিল। নিষেধ করায় সে ওই নারীকে মারে। তখন আমাদের যুবকরাও তাকে একটু মারে। এরপর বিকালে বাবলু লোকজন নিয়ে এসে আমাদের তিনজনকে মারে। পরে পুলিশ এসে সবাইকে শান্ত থাকার কথা বলে চলে যায়। কিন্তু সন্ধ্যার আগেই বাবলু আবার লোকজন নিয়ে এসে আমাদের ওপর হামলা করে।’

পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরাফাত আমান বলেন, থানার ওসিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

পবা থানার ওসি মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘উভয়পক্ষই থানায় অভিযোগ দিয়েছে। সাঁওতালদের কয়েকজন আহত হয়েছেন। এ ব্যাপারে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তে কারও সংশ্লিষ্টতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’