ময়মনসিংহ , মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ২২ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
ওয়ান ইলেভেন সরকার ছিল অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সরকার বললেন তারেক রহমান দেশে এখনও জবাবদিহিমূলক শাসনব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি বললেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম ব্যক্তির নামে হলে কারণ জানানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের বিচারে আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু বললেন চিফ প্রসিকিউটর নতুন দুটি টিভি চ্যানেলের অনুমোদন, লাইসেন্স পেলেন যারা বিচারক লিয়াকত আলী মোল্লা আইন সচিব হলেন ভারত থেকে আসবে ৫০ হাজার টন চাল জামায়াত নেতা ডা. তাহের যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে যে বার্তা দিলেন দেশের অর্থনীতি স্বস্তিতে থাকলেও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে বললেন অর্থ উপদেষ্টা ‘জামায়াতকে ভোট দিলে বেহেশত নিশ্চিত’, আমির হামজার বক্তব্য নিয়ে যা বললেন শিশির মনির
নোটিশ :
প্রতিটি জেলা- উপজেলায় একজন করে ভিডিও প্রতিনিধি আবশ্যক। যোগাযোগঃ- Email- matiomanuss@gmail.com. Mobile No- 017-11684104, 013-03300539.

নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস, অভিযোগের তীর ডেপুটি রেজিস্ট্রারের দিকে

  • অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় ১২:৪০:৫০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর ২০২৫
  • ১৭ বার পড়া হয়েছে
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পবিপ্রবি) অনুষ্ঠিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা ২০২৩ এর প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার সাইদুর রহমান জুয়েলকে প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

জানা যায়, ২০২৩ সালের ৮ ডিসেম্বর বরিশাল, রংপুর ও সিলেট বিভাগে একযোগে এই নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। বরিশাল বিভাগের পরীক্ষা কেন্দ্র হিসেবে পবিপ্রবির ক্যাম্পাসকে নির্ধারণ করা হয়েছিল।

ওইদিন সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার প্রার্থী অংশ নেন।

তদন্তে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার সাইদুর রহমান জুয়েল তার দায়িত্বে থাকা কেন্দ্র থেকে প্রশ্নপত্রের ছবি তুলে বাইরে পাঠান। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক কর্মকর্তা ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাধব চন্দ্র শীল প্রশ্নপত্র সমাধান করে আবার কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেন।

পরীক্ষার সময়সূচি অনুযায়ী জুয়েলের দায়িত্ব ছিল কেন্দ্র-২ (প্রশাসনিক), টিএসসি ভবনের চতুর্থ তলার ৪০০ নম্বর কক্ষে।

কিন্তু তিনি ওই দায়িত্ব পালনের পরিবর্তে ড. শফিকের নেতৃত্বাধীন একাডেমিক কেন্দ্রে যান। তার স্থলে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক পাপড়ি হাজরাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

অভিযোগে বলা হয়, পরীক্ষার দিন জুয়েলের পাঠানো প্রশ্নপত্র মাধব চন্দ্র শীল ও আরো কয়েকজন কর্মকর্তা মিলে নিকটস্থ বগা ইউনিয়নের একটি স্কুলে বসে সমাধান করেন। স্কুলটি শুক্রবার বন্ধ থাকায় তারা সেখানে অবস্থান করেন।

এ সময় টিএসসি ভবনের পরিদর্শক হাজিরা সিট বিশ্লেষণ করে মাধবের দায়িত্বে অনুপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া যায়।

বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির হাতে আসা কয়েকটি স্ক্রিনশটে প্রশ্ন ফাঁসের প্রমাণ মিলেছে। স্ক্রিনশট অনুযায়ী, পরীক্ষার দিন সকাল ১০টা ১ মিনিটে সাইদুর রহমান জুয়েলের হোয়াটসঅ্যাপ থেকে এক ব্যক্তির কাছে ‘সুরমা’ সেটের (সেট কোড ৩৬৭১) প্রশ্নপত্র পাঠানো হয়। কিছুক্ষণ পর সেই নম্বর থেকেই উত্তরসহ ছবি পাঠানো হয়।

তদন্তে আরো জানা গেছে, অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি জুয়েলের বিরুদ্ধে পূর্বেও দুর্নীতির একাধিক অভিযোগ রয়েছে।

২০২৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্যে তার সংশ্লিষ্টতা ছিল বলে অভিযোগ ওঠে। সে সময় বহিষ্কৃত শিক্ষক ড. সন্তোষের সঙ্গে যোগসাজশে বিপুল অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ কার্য সম্পন্ন করেন তিনি। ওই নিয়োগে তার আপন ভাইকেও সেকশন অফিসার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।

গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর জুয়েলের প্ররোচনায় ড. সন্তোষ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। তার বিরুদ্ধে তৎকালীন সাংবাদিক সমিতির সভাপতিকে হুমকি প্রদান করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। পরে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিয়োগটি স্থগিত করে।

তদন্ত সূত্রে জানা যায়, ছাত্রাবস্থায় সাইদুর রহমান জুয়েল ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী এবং ২০০৬ সালের আহ্বায়ক কমিটির ১৪ নম্বর সদস্য। অভিযোগ রয়েছে, একাধিক দুর্নীতির পরও বর্তমান প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে তিনি শাস্তি এড়াতে সক্ষম হন।

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ডেপুটি রেজিস্ট্রার সাইদুর রহমান জুয়েল বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমি প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নই। পরীক্ষার কেন্দ্র আমি পরিবর্তন করিনি; কর্তৃপক্ষই আমাকে অন্য হলে পাঠিয়েছে।’

অপর অভিযুক্ত মাধব চন্দ্র শীল বলেন, ‘আমি ওইদিন অসুস্থ ছিলাম, তাই ডিউটিতে যাইনি। প্রশ্ন সমাধানের অভিযোগ মিথ্যা ও অসত্য।’

পটুয়াখালী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার উম্মে সালমা লাইজু বলেন, ‘প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় প্রথমত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দায় রয়েছে। তৎকালীন জেলা প্রশাসক সার্বিক বিষয়টি তদারকি করেছেন। এমনকি মন্ত্রণালয় থেকেও কেন্দ্রে লোকবল নিয়োজিত ছিল। এরকম একটি ঘটনার পর তৎকালীন জেলা কমিটির ওপরও দায় বর্তায়।’

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

ওয়ান ইলেভেন সরকার ছিল অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সরকার বললেন তারেক রহমান

নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস, অভিযোগের তীর ডেপুটি রেজিস্ট্রারের দিকে

আপডেট সময় ১২:৪০:৫০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর ২০২৫
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পবিপ্রবি) অনুষ্ঠিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা ২০২৩ এর প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার সাইদুর রহমান জুয়েলকে প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

জানা যায়, ২০২৩ সালের ৮ ডিসেম্বর বরিশাল, রংপুর ও সিলেট বিভাগে একযোগে এই নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। বরিশাল বিভাগের পরীক্ষা কেন্দ্র হিসেবে পবিপ্রবির ক্যাম্পাসকে নির্ধারণ করা হয়েছিল।

ওইদিন সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার প্রার্থী অংশ নেন।

তদন্তে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার সাইদুর রহমান জুয়েল তার দায়িত্বে থাকা কেন্দ্র থেকে প্রশ্নপত্রের ছবি তুলে বাইরে পাঠান। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক কর্মকর্তা ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাধব চন্দ্র শীল প্রশ্নপত্র সমাধান করে আবার কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেন।

পরীক্ষার সময়সূচি অনুযায়ী জুয়েলের দায়িত্ব ছিল কেন্দ্র-২ (প্রশাসনিক), টিএসসি ভবনের চতুর্থ তলার ৪০০ নম্বর কক্ষে।

কিন্তু তিনি ওই দায়িত্ব পালনের পরিবর্তে ড. শফিকের নেতৃত্বাধীন একাডেমিক কেন্দ্রে যান। তার স্থলে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক পাপড়ি হাজরাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

অভিযোগে বলা হয়, পরীক্ষার দিন জুয়েলের পাঠানো প্রশ্নপত্র মাধব চন্দ্র শীল ও আরো কয়েকজন কর্মকর্তা মিলে নিকটস্থ বগা ইউনিয়নের একটি স্কুলে বসে সমাধান করেন। স্কুলটি শুক্রবার বন্ধ থাকায় তারা সেখানে অবস্থান করেন।

এ সময় টিএসসি ভবনের পরিদর্শক হাজিরা সিট বিশ্লেষণ করে মাধবের দায়িত্বে অনুপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া যায়।

বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির হাতে আসা কয়েকটি স্ক্রিনশটে প্রশ্ন ফাঁসের প্রমাণ মিলেছে। স্ক্রিনশট অনুযায়ী, পরীক্ষার দিন সকাল ১০টা ১ মিনিটে সাইদুর রহমান জুয়েলের হোয়াটসঅ্যাপ থেকে এক ব্যক্তির কাছে ‘সুরমা’ সেটের (সেট কোড ৩৬৭১) প্রশ্নপত্র পাঠানো হয়। কিছুক্ষণ পর সেই নম্বর থেকেই উত্তরসহ ছবি পাঠানো হয়।

তদন্তে আরো জানা গেছে, অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি জুয়েলের বিরুদ্ধে পূর্বেও দুর্নীতির একাধিক অভিযোগ রয়েছে।

২০২৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্যে তার সংশ্লিষ্টতা ছিল বলে অভিযোগ ওঠে। সে সময় বহিষ্কৃত শিক্ষক ড. সন্তোষের সঙ্গে যোগসাজশে বিপুল অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ কার্য সম্পন্ন করেন তিনি। ওই নিয়োগে তার আপন ভাইকেও সেকশন অফিসার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।

গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর জুয়েলের প্ররোচনায় ড. সন্তোষ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। তার বিরুদ্ধে তৎকালীন সাংবাদিক সমিতির সভাপতিকে হুমকি প্রদান করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। পরে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিয়োগটি স্থগিত করে।

তদন্ত সূত্রে জানা যায়, ছাত্রাবস্থায় সাইদুর রহমান জুয়েল ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী এবং ২০০৬ সালের আহ্বায়ক কমিটির ১৪ নম্বর সদস্য। অভিযোগ রয়েছে, একাধিক দুর্নীতির পরও বর্তমান প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে তিনি শাস্তি এড়াতে সক্ষম হন।

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ডেপুটি রেজিস্ট্রার সাইদুর রহমান জুয়েল বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমি প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নই। পরীক্ষার কেন্দ্র আমি পরিবর্তন করিনি; কর্তৃপক্ষই আমাকে অন্য হলে পাঠিয়েছে।’

অপর অভিযুক্ত মাধব চন্দ্র শীল বলেন, ‘আমি ওইদিন অসুস্থ ছিলাম, তাই ডিউটিতে যাইনি। প্রশ্ন সমাধানের অভিযোগ মিথ্যা ও অসত্য।’

পটুয়াখালী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার উম্মে সালমা লাইজু বলেন, ‘প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় প্রথমত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দায় রয়েছে। তৎকালীন জেলা প্রশাসক সার্বিক বিষয়টি তদারকি করেছেন। এমনকি মন্ত্রণালয় থেকেও কেন্দ্রে লোকবল নিয়োজিত ছিল। এরকম একটি ঘটনার পর তৎকালীন জেলা কমিটির ওপরও দায় বর্তায়।’