জানা যায়, ২০২৩ সালের ৮ ডিসেম্বর বরিশাল, রংপুর ও সিলেট বিভাগে একযোগে এই নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। বরিশাল বিভাগের পরীক্ষা কেন্দ্র হিসেবে পবিপ্রবির ক্যাম্পাসকে নির্ধারণ করা হয়েছিল।
ওইদিন সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার প্রার্থী অংশ নেন।
তদন্তে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার সাইদুর রহমান জুয়েল তার দায়িত্বে থাকা কেন্দ্র থেকে প্রশ্নপত্রের ছবি তুলে বাইরে পাঠান। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক কর্মকর্তা ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাধব চন্দ্র শীল প্রশ্নপত্র সমাধান করে আবার কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেন।
পরীক্ষার সময়সূচি অনুযায়ী জুয়েলের দায়িত্ব ছিল কেন্দ্র-২ (প্রশাসনিক), টিএসসি ভবনের চতুর্থ তলার ৪০০ নম্বর কক্ষে।
কিন্তু তিনি ওই দায়িত্ব পালনের পরিবর্তে ড. শফিকের নেতৃত্বাধীন একাডেমিক কেন্দ্রে যান। তার স্থলে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক পাপড়ি হাজরাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
অভিযোগে বলা হয়, পরীক্ষার দিন জুয়েলের পাঠানো প্রশ্নপত্র মাধব চন্দ্র শীল ও আরো কয়েকজন কর্মকর্তা মিলে নিকটস্থ বগা ইউনিয়নের একটি স্কুলে বসে সমাধান করেন। স্কুলটি শুক্রবার বন্ধ থাকায় তারা সেখানে অবস্থান করেন।
এ সময় টিএসসি ভবনের পরিদর্শক হাজিরা সিট বিশ্লেষণ করে মাধবের দায়িত্বে অনুপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া যায়।
বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির হাতে আসা কয়েকটি স্ক্রিনশটে প্রশ্ন ফাঁসের প্রমাণ মিলেছে। স্ক্রিনশট অনুযায়ী, পরীক্ষার দিন সকাল ১০টা ১ মিনিটে সাইদুর রহমান জুয়েলের হোয়াটসঅ্যাপ থেকে এক ব্যক্তির কাছে ‘সুরমা’ সেটের (সেট কোড ৩৬৭১) প্রশ্নপত্র পাঠানো হয়। কিছুক্ষণ পর সেই নম্বর থেকেই উত্তরসহ ছবি পাঠানো হয়।
তদন্তে আরো জানা গেছে, অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি জুয়েলের বিরুদ্ধে পূর্বেও দুর্নীতির একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
২০২৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্যে তার সংশ্লিষ্টতা ছিল বলে অভিযোগ ওঠে। সে সময় বহিষ্কৃত শিক্ষক ড. সন্তোষের সঙ্গে যোগসাজশে বিপুল অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ কার্য সম্পন্ন করেন তিনি। ওই নিয়োগে তার আপন ভাইকেও সেকশন অফিসার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।
তদন্ত সূত্রে জানা যায়, ছাত্রাবস্থায় সাইদুর রহমান জুয়েল ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী এবং ২০০৬ সালের আহ্বায়ক কমিটির ১৪ নম্বর সদস্য। অভিযোগ রয়েছে, একাধিক দুর্নীতির পরও বর্তমান প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে তিনি শাস্তি এড়াতে সক্ষম হন।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ডেপুটি রেজিস্ট্রার সাইদুর রহমান জুয়েল বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমি প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নই। পরীক্ষার কেন্দ্র আমি পরিবর্তন করিনি; কর্তৃপক্ষই আমাকে অন্য হলে পাঠিয়েছে।’
অপর অভিযুক্ত মাধব চন্দ্র শীল বলেন, ‘আমি ওইদিন অসুস্থ ছিলাম, তাই ডিউটিতে যাইনি। প্রশ্ন সমাধানের অভিযোগ মিথ্যা ও অসত্য।’
পটুয়াখালী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার উম্মে সালমা লাইজু বলেন, ‘প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় প্রথমত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দায় রয়েছে। তৎকালীন জেলা প্রশাসক সার্বিক বিষয়টি তদারকি করেছেন। এমনকি মন্ত্রণালয় থেকেও কেন্দ্রে লোকবল নিয়োজিত ছিল। এরকম একটি ঘটনার পর তৎকালীন জেলা কমিটির ওপরও দায় বর্তায়।’