যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে হাঙ্গেরিতে পরিকল্পিত বৈঠক স্থগিতের ঘোষণার পরপরই রাশিয়া পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে একটি বড় ধরনের সামরিক মহড়া চালিয়েছে। ক্রেমলিনের প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, রাশিয়ার সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ জেনারেল ভ্যালেরি গেরাসিমভ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে মহড়ার অগ্রগতি সম্পর্কে রিপোর্ট দিচ্ছেন।
গত বুধবার (২২ অক্টোবর) রাশিয়া জানায়, তারা স্থল, সমুদ্র ও আকাশ থেকে একযোগে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে, যার মধ্যে আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রও ছিল—যেগুলো যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত হানতে সক্ষম। আরও শক্তি জাহির করতে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাদের দীর্ঘ-পাল্লার টিইউ-২২এম৩ কৌশলগত বোমারু বিমানগুলো বাল্টিক সাগরের ওপরের আকাশে উড়েছে, এ সময় সম্ভবত নেটো সদস্য দেশগুলোর যুদ্ধ বিমান দ্বারা সেগুলিকে পাহারা দেওয়া হয়।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, তিনি ‘অর্থহীন কোনও বৈঠক’ করতে চান না। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভও বলেন, ‘বৈঠকের তারিখ এখনও নির্ধারিত হয়নি, নিবিড় প্রস্তুতির জন্য সময় লাগবে।’ তবে, এক মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বৈঠক বাতিল হয়নি, বরং ট্রাম্প এখন এশিয়া সফরে মনোযোগ দিচ্ছেন। রয়টার্স জানায়, বৈঠক স্থগিতের আগে রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছিল—যুদ্ধবিরতির শর্ত হিসেবে তারা ইউক্রেনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় ডনবাস পুরোপুরি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে চায়। এই শর্ত ট্রাম্পের ‘উভয় পক্ষ এখনকার অবস্থানে থেকে যুদ্ধ থামাতে পারে’—এই প্রস্তাবের বিপরীত।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসছেন ইউক্রেনকে ১৬,৩০০ কোটি ডলারের ঋণ দিতে রাশিয়ার জমে থাকা সম্পদ ব্যবহার করা নিয়ে। মস্কো এই পদক্ষেপকে ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেছে এবং পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছে। ইউক্রেনের এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, ‘আমাদের স্বাধীনভাবে এই তহবিল ব্যবহার করার অধিকার থাকা উচিত—শুধু ইউরোপীয় দেশগুলোর কাছ থেকে অস্ত্র কিনতেই নয়।’
ইউক্রেনের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা মঙ্গলবার রাতে ফরাসি-ব্রিটিশ ‘স্টর্ম শ্যাডো’ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার ব্রিয়ান্স্ক অঞ্চলের একটি রাসায়নিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। কিইভের কর্মকর্তারা আরও জানান, রাশিয়ার হামলায় রাজধানী ও আশপাশে ছয়জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে এবং দেশজুড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহা আন্তর্জাতিক অংশীদারদের আহ্বান জানিয়েছেন, ‘আসন্ন শীতের আগে অতিরিক্ত জ্বালানি সহায়তা দিন, না হলে মানবিক সংকট দেখা দিতে পারে।’